ঈদের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে ফের আগুন!

ঈদের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে ফের আগুন!

অর্থনীতি স্লাইড

এপ্রিল ৫, ২০২৪ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ঈদের আগে শেষ শুক্রবারে ফের অস্থির হয়ে ওঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। ফের দাম বেড়ে গেছে শাক-সবজি ও মাছ-মাংসসহ প্রায় সব পণ্যের। এতে বাজারে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ভোক্তারা।

সপ্তাহ ব্যবধানে ৫-১০ টাকা বেড়েছে শাক-সবজির দাম।

আজ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে শাক-সবজির দাম।

 বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে সবজি কম আসছে। এতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় দাম বাড়ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা ফরিদ জানান, বাজারে শাক-সবজির যোগান কমে গেছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি।

 আর কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এতে কেজিতে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা। মূলত ঈদের আগমুহূর্ত হওয়ায় সবজি কম আসছে। তবে ঈদের পরে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে।

 ক্রেতাদের দাবি, ঈদের আগে ভোক্তার পকেট কাটতে নতুন করে সিন্ডিকেট করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে নতুন করে বাড়ছে পণ্যের দাম।

 মহসিন নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকার দাম বেঁধে দিলেও তার প্রভাব বাজারে নেই। ব্যবসায়ীরা এখন মন্ত্রী-আমলাদের কথার তোয়াক্কা করে না। ফলে তারা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন খেয়াল-খুশিমতো।

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৭০ টাকা, শিম ৩০-৩৫, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, করলা ৫০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০-৬০ টাকা,  বরবটি ৬০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা ও লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, ঝিঙে ১০০ টাকা, সজনে ডাটা ২০০ টাকা, কহি ৪০ টাকা, খিরাই ৩০-৪০ টাকা, গাজর ২৫-৩০ টাকা, টমেটো ৩৫-৪০ টাকা  ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনছেন ক্রেতারা। 

আর প্রতি পিস লাউ ৪০-৫০ টাকা ও প্রতি হালি লেবু ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেড়ে গেছে আলুরও; বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে।

 বাজারে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক ১৫-২০ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা ও পালংশাক ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অস্থির পেঁয়াজ-রসুনের বাজারও। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। এছাড়া আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়। আদা আগের বাড়তি দামেই ২০০ থেকে ২২০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।

 

প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। 

বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের কারণে বাজারে কিছুটা সরবরাহ ঘাটতি থাকায় দাম বাড়ছে। ঈদের পর দাম আবারও কমে আসবে।

 এদিকে, রমজান শুরুর আগেই অস্থির হয়ে উঠেছিল রোজার পণ্যের বাজার। তবে সেই রেশ কাটেনি রোজার শেষদিকে এসেও। দু-একটি পণ্যের দাম কমলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব পণ্য।

 বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। আর প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০-১২০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৮৫-৯০ টাকা, ডাবলির ডাল ৮৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০-১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১১০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বেসন ১৪০-১৬০ টাকা, খোলা আটা ৫০-৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৫৮-৬০ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫-৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়, আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও!

 

এখনও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।

দাম বেড়ে গেছে ঈদপণ্য হিসেবে খ্যাত সেমাইয়েরও। বাজারে ২০০ গ্রামের প্রতিপ্যাকেট চিকন সেমাই ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই ৩০ টাকা বেড়ে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়।

বাজারে ঊর্ধ্বমুখী মাংসের দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৩০-২৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০-৩৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।

 

প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৬০ টাকায়। 

এদিকে, প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিকেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

 বিক্রেতারা জানান, ঈদের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে মাংসের। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ায় বাড়ছে দাম।

 কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের মুরগি বিক্রেতা রিপন বলেন, মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে বেড়েছে চাহিদাও। সব মিলিয়ে বাড়তি মুরগির দাম।

 স্বস্তির খবর নেই চালের বাজারেও। কেজিতে দাম বেড়েছে ১-২ টাকা পর্যন্ত। প্রতিকেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকা, গুঁটিস্বর্ণা ৫২-৫৪ টাকা ও ব্রি-২৮ ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 এদিকে, মাছের বাজারে দেখা যায়, চড়া বেশিরভাগ চাষের ও দেশি মাছের দাম। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।

 বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৮০-২০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২২০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। আর আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইম ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। 

এছাড়া প্রতি কেজি দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ থেকে টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা ও ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

 

প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ থেকে টাকা পর্যন্ত। 

কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাদশা ব্যাপারী বলেন, বাজারে দেশি মাছের সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে। এছাড়া রোজা শেষের দিকে হওয়ায় বাজারে ক্রেতা নেই। তাই দাম কিছুটা বেশি।

 কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সাইফুল হক বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে দাম বেড়েছে ইলিশের। আর অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা চড়া।

 নিত্যপণ্যের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।

 আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *