অক্টোবর ২২, ২০২৩ ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ
তীব্র যানজটের শহর ঢাকায় স্বস্তির এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হানা দিয়েছে ডাকাতচক্র। দুর্ধর্ষ এই চক্রটি প্রকাশ্য দিবালোকে গাড়ি থামিয়ে মালামাল লুট করেছে। এক্ষেত্রে তারা ‘র্যাব’ সদস্য পরিচয় দিয়েছে।
‘র্যাব’ লেখা কালো রঙের জ্যাকেট পরেছে। ব্যবহার করেছে হাতকড়া। ভয়ভীতি দেখিয়েছে দামি ‘টয়গান’ দিয়ে। হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে ভুক্তভোগীদের অর্ধকোটি টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্রসহ নিয়ে গেছে রাজধানীর বাইরে। সেখানে তাদের ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতচক্রের সদস্যরা। চলতি মাসে এমন একটি ঘটনায় রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় মামলা হয়েছে। এরপর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী শ্যামলসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ অবস্থায় এক্সপ্রেসওয়েতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
খিলক্ষেত থানার ১১ অক্টোবরের মামলার সূত্র ধরে দুর্ধর্ষ ডাকাতচক্রকে ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি গুলশান বিভাগ মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন, ১০ অক্টোবর এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের খিলক্ষেত থানাধীন প্রাইম ডেন্টাল কলেজ বরাবর অংশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিকাল ৪টার দিকে তারা যখন এই ডাকাতি করেন তখন সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিক দিনের মতোই যানবাহন চলছিল। সাত-আট সদস্যের একটি দল এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা লুটে নিয়েছেন অর্ধকোটিরও বেশি টাকা। অথচ এদের কেউই র্যাব সদস্য নয়। এরা পেশাদার ডাকাত। এর আগে গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জেও ডাকাতিতে জড়িয়েছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে গড়ে ৭-৮টি করে মামলা আছে। অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স করেছেন সাগর নামের এমন এক সদস্য আছেন এই চক্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি কাজ করছে। রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার ও মামলার আলামত উদ্ধারসহ বিস্তারিত জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নিরাপত্তায় পুলিশ যা যা দরকার সবই করছে।
ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ডাকাত চক্রের সদস্যরা র্যাব পরিচয় দিয়ে মাদার টেক্সটাইল মিলস লি. এর একটি গাড়িকে ওভারটেক করে থামান। অবৈধ টাকা আছে উল্লেখ করে ওই গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেন। কোম্পানির কর্মকর্তা অনিমেষ চন্দ্র সাহা (৩২), মো. শাহজাহান মিয়া (৫০) এবং ড্রাইভার আবুল বাশারকে হাতকড়া পরান। এরপর ৪৮ লাখ টাকাসহ ওই গাড়িতে থাকা কোম্পানির তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজেদের গাড়িতে তোলে চক্রটি। কোম্পানির গাড়িটি এক্সপ্রেসওয়েতে রেখে অন্য একটি গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যান ৩০০ ফিটের নারায়ণগঞ্জ অংশের বোয়ালিয়া ব্রিজে। কিছুক্ষণ সেখানে ঘুরিয়ে টাকা ও তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন এবং কোম্পানির এমডির স্বাক্ষরিত ব্লাংক চেক রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও মাদার টেক্সটাইল মিলস লি. এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সোহেল আহম্মেদ সুলতান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে এভাবে ডাকাতি হতে পারে আমরা ভাবতেও পারিনি।
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক উত্তরা মডেল টাউন ব্রাঞ্চ থেকে ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে ফিরছিলেন আমাদের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তখন মো. শাহজাহান মিয়ার কাছে তার ব্যক্তিগত ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিল। ডাকাতরা র্যাব পরিচয়ে এসে তাদেরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। নগদ টাকা ও তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। তাদেরকে মারধর করে। পরে খবর পেয়ে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে আমরা গাড়িটি উদ্ধার করি।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনিমেষ চন্দ্র ও শাহজাহান মিয়া ব্যাংক থেকে ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলেছিলেন। সেখান থেকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা কোম্পানিটির এক ব্যবসায়িক পার্টনারকে বুঝিয়ে দেন। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে তারা একটি প্রাইভেটকারে বনানীর উদ্দেশে রওয়ানা হন। কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে দুই মিনিট যেতেই ডাকাতদল গাড়িটি আটকে দেয়। ব্যাংকের মধ্যে ডাকাতচক্রের সদস্য সাগর অবস্থান করছিলেন।
তিনিই মূলত টাকা নিয়ে বের হওয়ার তথ্য দেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে চক্রটিকে শনাক্ত করেছে ডিবি পুলিশ। শ্যামল, দাউদ, সাগর দিদারসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে লুটের অর্ধেকের মতো টাকা। বাকি টাকা উদ্ধারে ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে। এছাড়া ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ি, হাতকড়া, টয়গান, র্যাব লেখা জ্যাকেট ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। মূল পরিকল্পনাকারী বরগুনার শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। এর আগেও কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে ডিবি।