সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪ ৯:০২ পূর্বাহ্ণ
দেশে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নেতৃত্বও পাল্টে গেছে। নাজমুল হাসান পাপনের পদত্যাগের পর বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। এছাড়া বোর্ড পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন স্বনামধন্য ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
এদিকে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার পর বেশ কয়েকবার বিসিবিতে দেখা গেছে ক্রিকেটার তামিম ইকবালকে। পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তার। তবে নতুন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে তামিমের সুসম্পর্ক রয়েছে। এর সঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে মিরপুরের মাঠ ঘুরিয়ে দেখানো এবং জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবি সভাপতির বৈঠকে উপস্থিতি তামিমের বোর্ড পরিচালক হওয়ার আলোচনাকে উস্কে দিচ্ছে।
তবে তামিমের বোর্ড পরিচালক হওয়ার রাস্তা এখনো বেশ দীর্ঘ। বোর্ড পরিচালক হতে চাইলে তাকে বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতা পেরিয়ে আসতে হবে। প্রথমত বর্তমান শূন্য হওয়া পরিচালক পদগুলো বিসিবি পূরণ করবে কি না, সেই ব্যাপারে বোর্ডকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন পদত্যাগ করায় তাদের পরিচালক পদ শূন্য হয়েছে। এদিকে চলতি বোর্ডের মেয়াদ রয়েছে আর এক বছর। এই স্বল্প সময়ের জন্য বোর্ড উপনির্বাচন পন্থায় যাবে কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
অবশ্য বোর্ড উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলেই যে তামিম পরিচালক পদপ্রার্থী হতে পারবেন, বিষয়টি তেমন নয়। পরিচালক হতে চাইলে তাকে আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলতে হবে। পাশাপাশি তাকে কাউন্সিলর হতে হবে।
ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র বলছে, কাউন্সিলরদের মেয়াদও বোর্ড পরিচালকদের মতো ৪ বছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিদেশে স্থায়ী হওয়া, মৃত্যুবরণ কিংবা কাউন্সিলর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ছাড়া পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
তামিম এখনো ক্রিকেটার হিসেবে সক্রিয়। যেকোন সময় তার জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনাও প্রবল। তাই তার কাউন্সিলরশিপ না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাকে প্রথমে কাউন্সিলর হতে হবে, এরপর নির্বাচনে প্রার্থী। যে ক্যাটাগরিতে উপ-নির্বাচন হবে সেই ক্যাটাগরির কাউন্সিলররাই শুধু প্রার্থী হতে পারবেন।
যেমন খালেদ মাহমুদ সুজন ‘সি’ ক্যাটাগরির পরিচালক ছিলেন। তিনি পদত্যাগ করায় এই পদশূন্যতা। এই ক্যাটাগরিতে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়, বিকেএসপি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বিসিবি মনোনীত সাবেক ক্রিকেটার এবং বিসিবি সভাপতির মনোনয়নে পাঁচজন সাবেক অধিনায়ক থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়, বিকেএসপি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিলরশিপ পেতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হতে হয়। তামিম কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি না করায় সেখান থেকে কাউন্সিলরশিপ পাবেন না।
তবে সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় এবং এনএসসির পাঁচ কাউন্সিলর, এই দুই মাধ্যমে তামিমের কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই দুই ক্যাটাগরির কোনো কাউন্সিলরকে পদত্যাগ করতে হবে, তখন সেই শূন্য পদে বিসিবি বা এনএসসি কাউন্সিলর মনোনয়ন করতে পারবে তামিমকে। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে সুজনের শূন্য পদে নির্বাচন দিলে সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলর দেবব্রত পালের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোয়াবের এই সাধারণ সম্পাদক জাতীয়তাবাদী ক্রীড়া ফোরামের সঙ্গেও যুক্ত।
অন্যদিকে নাইমুর রহমান দুর্জয় পদত্যাগ করায় ঢাকা বিভাগে পরিচালক পদ শূন্য হয়েছে। সামনে জেলা-বিভাগীয় ও ক্লাব কোটায় আরও পরিচালক পদ শূন্য হতে পারে। এদিকে তামিমের নিজ বিভাগ চট্টগ্রামে বিসিবির বিভাগীয় পরিচালক আ জ ম নাসির বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিষ্ক্রিয়। তিনি পরিচালক ও কাউন্সিলর উভয় পদ থেকে পদত্যাগ করলে তামিমের সেখান থেকে কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এছাড়া ক্লাব ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর হয়েও বিসিবি পরিচালক নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন তামিম। তবে ক্লাব ক্যাটাগরির পরিচালকের কোন পদ এখনো শুন্য হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ২-১টি পরিচালক সভা হওয়ার পর এই ক্যাটাগরিতেও শূন্যতা তৈরি হতে পারে। পরিচালকের নির্বাচন করতে চাইলে তামিমের জন্য তামিমের পথ সুগম হবে।
এই তিন ক্যাটাগরি বাদে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত পরিচালকও বিসিবিতে যুক্ত হতে পারেন। জালাল ইউনুসের সরে যাওয়া এবং আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে এনএসসি সরিয়ে দেওয়ায় তাদের স্থলাভিষিক্ত হন ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
তাই এই ক্যাটাগরিতে পরিচালক হতে চাইলে তামিমের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এভাবে পরিচালক হতে চাইলেও তাকে আগে কাউন্সিলর হতে হবে। কাউন্সিলরশিপ পেতে হলে বিদ্যমান কাউন্সিলরদের মধ্যেও কাউকে পদত্যাগ করতেই হবে। পদত্যাগ করা কাউন্সিলরের শূন্য স্থানে তিনি কাউন্সিলরশিপ পেলে তখনই নির্বাচন করার অধিকার পাবেন। এসব হিসাব-নিকাশ মিলে গেলেই বোর্ড পরিচালক হিসেবে দেখা যেতে পারে তামিম ইকবালকে।