নভেম্বর ১, ২০২৩ ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১২ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলনকে ভগবান রামচন্দ্রের রাজত্বের সঙ্গে তুলনা করায় বিদেশ মন্ত্রী আবদুল মোমেনের সমালোচনা করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ।
মোমেনের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে ভিএইচপি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মন্ডল।
মঙ্গলবার বিবৃতিতে তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের বিদেশ মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রাম রাজত্ব কে জবরদস্তি, ভয়ংকর অবস্থা, অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য সন্ত্রাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা অত্যন্ত আপত্তিকর। তিনি এ ধরনের ভিত্তিহীন, মনগড়া ধর্ম বিরোধী বিবৃতি দিয়ে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম চন্দ্র কে অপমানিত করেছেন এবং শ্রী রাম চন্দ্রের মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন।
তিনি এ ধরনের আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার জন্য অনতিবিলম্বে সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে মোমেনকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কপিল কৃষ্ণ মন্ডলের।
কপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বিদেশ মন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটা খুবই নিন্দনীয়। তিনি কোন ধর্মের ভগবান কে নিয়ে এ ধরনের বিবৃতি দেওয়ার অধিকার রাখেন না। তিনি কোটি কোটি হিন্দুদের মনে আঘাত দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত আপত্তিকর।
শ্রী কপিল কৃষ্ণ মন্ডল আরো বলেন, হিন্দু ধর্মের সকল অবতারদের মধ্যে শ্রীরামচন্দ্র কে দয়াময় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রভু শ্রী রামচন্দ্র ছিলেন সত্যের পথিক, ন্যায়ের প্রতীক, আদর্শের প্রতীক, সুশাসনের প্রতীক। শ্রী রামচন্দ্রের রাজত্বকালে কোন অশান্তি বিরাজ করত না, প্রজারা সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করত। যেখানে কোন অসত্য ছিল না । প্রভু রামচন্দ্রের শাসন আমলে সাতটি সম্পর্কের প্রতি সম্মান সর্বস্তরে বিরাজ ছিল।
(১) ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, (২) পিতৃভক্তি, (৩) মাতৃভক্তি, (৪)ভ্রাতৃপ্রীতি, (৫)পত্নীপ্রেম, (৬)ভূত্যবাৎসল্য ও (৭) প্রজাবাৎসল্য তথা দেশ মাতৃকার ভক্তি শ্রীরাম এর শাসনামলে। সপ্ত মর্যাদার উল্লঙ্ঘন হতে দেখা যায়নি।
শ্রীরামচন্দ্রের রাজত্বে ছিল না চুরি, ব্যভিচার, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নেশা (মদ্যপান-সহ), অসততা, অশ্লীলতার মত মহা অপরআধ। গোটা রাজত্বটাই ছিল সুখ শান্তির একটা স্বর্গ রাজ্য।
তিনি বলেন, শ্রী রামের জীবনকথাকে হিন্দুরা ধর্মনিষ্ঠার আদর্শ হিসেবে মান্য করেন। হিন্দুধর্মে রাম অন্তহীন প্রেম, সাহস, শক্তি, ভক্তি, কর্তব্য ও মূল্যবোধের দেবতা। পিতৃভক্তি, প্রজাবাৎসল্য, পরোপকার, মানবপ্রেম, লোভহীনতা, সত্যপালন ইত্যাদি রামচরিত্রের আকর্ষণীয় দিক। রাজা হিসেবে প্রজাদের প্রতি কর্তব্য কী হওয়া উচিত, তার দৃষ্টান্ত রামচরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। শ্রী রাম চন্দ্রের যেদিন যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার কথা, সেদিন পিতৃসত্য পালন এবং পিতার সম্মান রক্ষা করার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় রাজত্ব ত্যাগ করে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যান। সমাজে আইনশৃঙ্খলা, সত্য, মানবতা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন।
তাই হিন্দুরা শ্রী রামচন্দ্র কে শুধু দেবতা হিসেবেই নয়, একজন আদর্শ পুত্র, আদর্শ রাজা, আদর্শ পতি এবং ক্ষমা, সততা ও মহত্ত্বের প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সকলে প্রভুকে নিত্য স্মরণ করে থাকে।
বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রীকে শ্রী রামচন্দ্রের চরিত অথবা রামায়ণ পড়ে নিজের জীবনের আদর্শ গঠন করার জন্য অনুরোধ জানান এবং রামের রাজত্বকে অশান্তি ,মারামারি, সংঘাতকের রাজত্ব তুলনা করে যে বিবৃতি দিয়েছেন, সে বিবৃতি প্রত্যাহার সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
অন্যথায় সংবাদ সম্মেলন সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।