রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক: গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও মানবিক পরিস্থিতি কোনওভাবেই স্বস্তিদায়ক নয়। সীমান্ত খোলা থাকলেও তা খুবই সীমিত পরিসরে, ফলে ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে পারছে অল্প সংখ্যায়। এ কারণে খাদ্যঘাটতি তৈরি হয়েছে ভয়াবহ আকারে, আর ক্ষুধা ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের বিভিন্ন সংস্থা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সহায়তার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় তুলনামূলক খুবই কম।
বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি শুরুর পর কিছুটা ত্রাণ প্রবেশ বাড়লেও বাধা রয়ে গেছে প্রতিটি ধাপে—বলছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র আবির ইতেফা বলেন, “আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দরকার। সময়ের সঙ্গে দৌড়াচ্ছি আমরা। শীত সামনে দাঁড়িয়ে, অথচ মানুষ এখনো ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর।
ডব্লিউএফপি জানায়, গাজাজুড়ে ৪৪টি স্থানে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তা পেয়েছে। তবে উত্তর গাজা এখনো কার্যত অচল। সেখানে প্রবেশদ্বার বন্ধ থাকায় ত্রাণ কাফেলাকে দক্ষিণ অংশ ঘুরে দীর্ঘ ও বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে।
গত আগস্টেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা উত্তর গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছিল। বর্তমান অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে সতর্ক করেছে ডব্লিউএফপি।
এদিকে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ইসরায়েলি সেনারা ইয়েলো লাইন থেকে পিছু হটে, আর সেই সুযোগে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ফেরেন উত্তর গাজার নিজ বাড়িতে। কিন্তু অধিকাংশই ফিরে দেখেন—বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত, আশপাশে বসবাসের মতো কোনো পরিবেশ নেই। বাধ্য হয়ে অনেকেই তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী আরও ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপ অব্যাহত রয়েছে। শীতের কঠোর আবহাওয়া ঘনিয়ে আসায় উদ্বেগও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানায়, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি ত্রাণ ও বাণিজ্যিক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে—যা দৈনিক গড়ে মাত্র ১৪৫টি। অথচ যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ট্রাক প্রবেশের কথা।
এদিকে sporadic হামলা থেমে নেই। মঙ্গলবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার হামলায় একজন নিহত ও একজন আহত হন। জাবালিয়ায়ও সেনাদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় হাসপাতাল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পরও ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ২৪০ জনের, আহত হয়েছেন আরও ৬০৭ জন।
রিপোর্টার্স২৪/ঝুম