আশিস গুপ্ত, নতুন দিল্লি : 

সংবিধান নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন করে ভারত সরকার ‘দ্য ওয়্যার’ অনলাইন সংবাদ পোর্টালের ওয়েবসাইট সারাদেশে ব্লক করে দিয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছে যে, তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০০-এর আওতায় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে এবং স্বাধীন ও সত্যনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব অভূতপূর্বভাবে বেড়েছে। বহু বিশ্লেষকের মতে, সমালোচনামূলক ও গবেষণামূলক সাংবাদিকতার জন্য পরিচিত ‘দ্য ওয়্যার’ ব্লক হওয়া মানে শুধুই একটি ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়, বরং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের ওপর এক নতুন এবং সুস্পষ্ট আঘাত।

‘দ্য ওয়্যার’ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা এই স্বেচ্ছাচারী ও অস্পষ্ট সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ তারা আরও জানিয়েছে, ‘এমন এক সংকটময় সময়ে যখন যুক্তিসম্মত, সত্যনিষ্ঠ এবং ন্যায়সঙ্গত সংবাদ পরিবেশনের গুরুত্ব সর্বোচ্চ, তখন এ ধরনের সেন্সরশিপ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা দেশবাসীর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে আগের মতোই সত্য ও নির্ভুল সংবাদ পরিবেশন চালিয়ে যাবে। ‘আমরা দমে যাব না, থেমে যাব না’—এই বার্তাই দিয়েছে ‘দ্য ওয়্যার’।

উল্লেখযোগ্যভাবে, গত কয়েক বছরে ভারতে একাধিক স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা এবং অলাভজনক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর প্রশাসনিক চাপ ও আইনি পদক্ষেপ বেড়েছে। এই প্রবণতা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর প্রেস ফ্রিডম সূচকে ভারতের অবস্থান ক্রমাগত অবনমিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই ধরণের পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের আত্মনিয়ন্ত্রণ বা ‘সেল্ফ-সেন্সরশিপ’-এর দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর ফলে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক এক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে যেখানে নাগরিকরা আর স্বাধীন ও বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির খবর জানতে পারবে না।

দ্য ওয়্যার তাদের বিবৃতির শেষাংশে বলেছেন, ‘গত দশ বছর ধরে আপনাদের সমর্থনই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। আজ, এই কঠিন সময়ে আমরা আবারও একসঙ্গে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।’

রিপোর্টার্স২৪/ধ্রুব