ডিসেম্বর ২, ২০২৩ ১০:১১ পূর্বাহ্ণ
কিডনিতে পাথর হলে খাবারের মাধ্যমে অনেক সময় সফলভাবে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। প্রথমে জেনে নিতে হবে পাথরটি কোন প্রকৃতির এবং যেসব খাবার কিডনিকে উত্তেজিত করে সেসব খাবারই বর্জন করতে হবে।
* ক্যালসিয়াম ফসফেটযুক্ত পাথর হলে
এ ধরনের পাথর হলে খাবারে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সীমিত করতে হবে। এ জন্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় ৬০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকা প্রয়োজন। খাবার থেকে বাদ দিতে হবে দুধ, দই, পনির, মসুর ডাল, বাদাম, ছোলা, বরবটি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, শুঁটকি, সয়াবিন, বিট, সরিষা শাক, আমলকী ও কদবেল। খাবারে সোডিয়াম ফসফেট ও সোডিয়াম ফাইটেট একইরকমভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ কমায়। দেখা যায়, যেসব খাবারে ক্যালসিয়াম থাকে সেসব খাবারে ফসফরাসও থাকে। খেতে হবে-প্রচুর পানি, বার্লির শরবত, লেবুর শরবত, ফলের রস, মাংসের ক্লিয়ার স্যুপ।
* অক্সালেটযুক্ত পাথর হলে
এ ধরনের পাথরে বাদ দিতে হবে উচ্চ অক্সালিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার। যেমন-পালংশাক, চকলেট, গাজর, কাঁচাকলা, কলার মোচা, পুঁইশাক, বিট, আমলকী, খেসারির ডাল, সাজনেপাতা, কচুশাক, কচু, তিল, মিষ্টি আলু, ডুমুর। এছাড়া টমেটো ও টমেটোর সসে অক্সালেট বেশি থাকে। আবার দেখা যায় অনেক বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করলেও প্রস্রাবে অক্সালেট বেড়ে যায়। দেহে অতিরিক্ত অক্সালেট জমা হলে দু’ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। প্রথমটি সেকেন্ডারি হাইপারঅক্সালুরিয়া। খাবারে লালশাক, কালোজাম, টমেটো, স্ট্রবেরি, চকলেট, এগুলো শরীরে অস্থায়ীভাবে অক্সালেট বৃদ্ধি করে। এ ধরনের খাবার কমালে এ সমস্যা কমে যায়।
দ্বিতীয়টি হলো প্রাইমারি হাইপারঅক্সালুরিয়া। এসব বিপাকের ত্রুটির জন্য হয়ে থাকে। এতে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তবে প্রস্রাবে রক্ত ও সংক্রমণের ফলে ১-৪ বছরের শিশুদের কিডনিতে এ ধরনের পাথর দেখা যায়।
* প্রতিকার
কিডনিতে পাথর হওয়াটা একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপার। এই প্রবণতা জীবনভর চলতে পারে। এটা রোধ করতে হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন যাতে ২ লিটারের মতো প্রস্রাব হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময় ছোটখাটো পাথর প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। গরম আবহাওয়ায় যারা ভারী কাজ করেন তাদের দেহ থেকে প্রচুর পানি শ্বাস-প্রশ্বাস ও ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
এ জন্য এদের প্রচুর পানি পান করতে হবে যাতে প্রস্রাবের রং হালকা হয়। যদিও আজ পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়নি যে, কী ধরনের খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হবে না। তারপরও খাবারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। যেমন-কম খেতে হবে ক্যালসিয়াম, উচ্চ অক্সালেট অথবা উচ্চ ইউরিকযুক্ত খাবার। যাদের রক্ত সম্পর্কিত লোকের মধ্য কিডনিতে পাথর হয়েছে এবং যাদের মূত্রাশয়ে ব্যথা আছে তাদের সবসময় সতর্ক থাকা উচিত। প্রস্রাবে কোনোরূপ সংক্রমণ দেখা দিলেই চিকিৎসা করা উচিত।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী