জানুয়ারি ২৪, ২০২৪ ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ
টানা তৃতীয় মেয়াদেও জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা। বিরোধীদলীয় উপনেতা হচ্ছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আর দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু হচ্ছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।
ইতোমধ্যে বিরোধী শিবিরের সামনের সারিতে প্রথম আসনটি জিএম কাদেরের জন্য বরাদ্দ রেখে সংসদের অধিবেশন কক্ষের আসন বিন্যাস করা হয়েছে। এরপরপরই আসন দেওয়া হয়েছে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে দু-তিন দিনের মধ্যে আসন বিন্যাস চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপিসহ তাদের বলয়ের রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয়লাভ করে। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়ী হন ৬২ জন সংসদ-সদস্য। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে।
জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা কম হওয়ায় এবং স্বতন্ত্ররা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় কারা বসছেন বিরোধী দলের আসনে-এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহল থেকে। তবে জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই বলে আসছে, বিরোধী দলের আসনে বসার অধিকার শুধু তাদেরই। ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন বসতে যাচ্ছে।
এদিকে সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি আবারও সংসদের প্রধান বিরোধী দল হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতারা সংসদে স্বতন্ত্র হিসাবেই থাকবেন।
যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদ-সদস্যদের শপথের এক সপ্তাহ পর জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে প্রধান বিরোধী দল ও দলের সে সময়ের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এবার শপথের প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সাধারণত সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলই বিরোধী দলে বসে আসছে এতকাল। শুধু ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ছিল না।
প্রথম সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের বাইরে দুটি দলের একজন করে এবং স্বতন্ত্র পাঁচজন নেতা নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বাইরে দলীয় একজন এবং স্বতন্ত্র ১০ জন সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। ভারতের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে হলে কোনো দলের অন্তত ১০ শতাংশ আসনে জিতে আসতে হয়। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা জোট করে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের নেতা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারেন। তবে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। আর তারা বিরোধী দলে বসতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।
জোটবদ্ধ হলে আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ১০টি অবশ্য তারা পাবেন। এই বিতর্কের মধ্যেই ১৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করে।
দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা এবং মহাসচিব মো. মজিবুল চুন্নুকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মনোনীত করার কথা জানানো হয়। এর ২ দিন পর বিষয়টি অবহিত করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেয় জাতীয় পার্টি।
এ প্রসঙ্গে সোমবার রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ-সদস্য জিএম কাদের বলেছেন, দল হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়ায় জাতীয় পার্টিই প্রধান বিরোধী দল। ঘোষণা দেওয়া হোক বা না হোক জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে, নিয়ম অনুযায়ী।
এ সময় তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরাই (জাতীয় পার্টি) প্রধান বিরোধী দল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো চিঠি বা ঘোষণা পাইনি। জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি সংসদে এবং বাইরে সব সময় সরকারের ভুলের বিষয়ে কথা বলা অব্যাহত রাখবে, জনগণের কথা বলবে।
যদিও সংবিধানে এ নিয়ে কিছু বলা নেই। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী বিরোধী দল বলে কোনো কিছু না থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতার বিষয়টি রয়েছে। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী বিরোধী দলের নেতা কে হবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের। স্পিকার যাকে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন, তিনি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা হবেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, অধিবেশনের আগেই এ বিষয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপরপরই কার্যপ্রণালি বিধির প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। সূত্র বলছে, ১১ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টিই প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে আবারও।