অবরোধ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছক

অবরোধ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছক

জাতীয় স্লাইড

অক্টোবর ৩১, ২০২৩ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তিন দিনের সড়ক, রেল, নৌপথসহ সার্বিক অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। তৈরি করেছে নিরাপত্তা ছক। পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নাশকতার তথ্য জনসাধারণের কাছে থাকলে ৯৯৯-এ পুলিশকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ সময় দেশব্যাপী র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল টিম নিয়োজিত থাকবে।

এদিকে রাজধানীতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় ৪০ হাজার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ৫০টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুক ইউটিউবে গুজব ঠেকাতে সাইবার পেট্রলিং শুরু করেছে পুলিশের বিভিন্ন সাইবার উইনিট।

অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর এবং ডিএমপি সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব  বৈঠক থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ডিউটি করতে বলা হয়েছে। কোথাও যেন কোনো অবরোধকারী রাস্তাঘাটে যানবাহন চালাতে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। কেউ যদি বাধা সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত থাকবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ডিএমপির পক্ষ থেকেই প্রায় ২৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে রাজধানীজুড়ে। এ ছাড়া পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরাও তৎপর থাকবে। ঢাকা মহানগরীর ৫০টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে মাঠে থাকবে বিপুল সংখ্যক পুলিশের সদস্য।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা সূত্রে জানা গেছে, অবরোধে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে সর্বাÍক প্রস্তুতি নিয়েছে এই এলিট ফোর্স। ইতোমধ্যে টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। অবরোধের তিন দিন দেশব্যাপী ১৫টি ব্যাটালিয়নের তিন শতাধিক টহল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেউ যদি  কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে র‌্যাবের রোবাস্ট পেট্রলিং (একসঙ্গে অনেকগুলো গাড়ির মহড়া) অব্যাহত থাকবে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব ফোর্সেস’র স্পেশাল টিম ও স্টাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে।

র‌্যাব জানিয়েছে, একটি মহল অনলাইনে বিভিন্ন উসকানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়াচ্ছে; বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচিকে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশে পুলিশের ভূমিকা ও  সেদিনের পরিকল্পনায় কোনো ধরনের ত্র“টি ছিল না কিনা সব বিশ্লেষণ করে অবরোধের তিন দিনের সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। পুলিশকে এক না থেকে দলবদ্ধভাবে থাকতে বলা হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে সোমবার সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ সময় ডিএমপির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বিভাগের ডিসিরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ ও হরতাল পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে অবরোধের সময় পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। এতে পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। অবরোধের তিন দিনে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হয়েছে। পুলিশকে একা নয় দলবদ্ধভাবে থাকতে এবং প্রয়োজনে অ্যাকশনে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবরোধে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও  চোরাগুপ্তা হামলা মোকাবিলায় পুলিশ আরও বেশি সতর্ক ও কৌশলী হবে বলে জানা  গেছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি কোনো ধ্বংসাত্মক কাজের অংশ হতে পারে না। যারা এই কর্মসূচির সঙ্গে সায় দেয় সেটি এক কথা, আর  যদি কেউ সায় না দেয় তাহলে আমাদের কাজ তাদের (যারা সায় দেয় না) প্রোটেকশন দেওয়া। কেউ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, ঢাকা  মেট্রোপলিটন পুলিশ দায়িত্বের জায়গা থেকে আইন প্রয়োগ করবে। ঢাকা মহানগরবাসীর জীবন, সম্পদ, জননিরাপত্তা সবকিছুকে মাথায় নিয়েই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। এ ক্ষেত্রে নগরবাসী সব শ্রেণিপেশার মানুষ আমাদের সহযোগিতা করবে বলে বিশ্বাস করি।

অবরোধ কর্মসূচির প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি সড়ক আমাদের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকবে। এ ক্ষেত্রে কী ধরনের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের যত সরঞ্জাম আছে সবই ব্যবহার করা হবে। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য থাকবে যারা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের গ্রেফতার করা, কেউ গ্রেফতার এড়াতে যদি প্রতিরোধ তৈরি করে, পুলিশকে আক্রমণ করে কোনো অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ব্যবহার করে তাহলে তাদের টিয়ারশেল দিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করব অথবা শর্টগান ফায়ার করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *