বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে; নতুন সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সবার আগে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে উৎপাদন যেমন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যও ব্যাহত হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করতে নতুন সরকারের করণীয় সম্পর্কে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা শনিবার বলেছেন, সব উদ্যোক্তার জন্য নিরবচ্ছিন্ন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বাজারে ডলারের জোগান বাড়াতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী নিশ্চিত করতে হবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ। পাশাপাশি সৃষ্টি করতে হবে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ। ঋণের সুদের হার নামিয়ে আনতে হবে সহনীয় পর্যায়ে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের অভিমত-দেশের অর্থনীতি আগে থকেই বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছিল। নতুন সরকারের প্রেক্ষাপটে এখন চ্যালেঞ্জের সংখ্যা আরও বাড়ল। বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। কারখানার নিরাপত্তা জোরদার করে উৎপাদন কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা। পাশাপাশি ভেঙে পড়া সরবরাহ ব্যবস্থাও দ্রুত স্বাভাবিক করা দরকার। বস্তুত সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থায়। যে কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ধীরে ধীরে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে পণ্যের দাম কিছুটা কমতে শুরু করলেও উৎপাদন ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কনটেইনার জট লেগে গেছে। নিরাপত্তার কারণে উদ্যোক্তারা পণ্যের ডেলিভারি নিচ্ছেন কম। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানিতে।
দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে অর্থনীতিকে গতিশীল করে এখন বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিকভাবে সরকারি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপও নেওয়া দরকার। সরকারি খাতের শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ প্রদান করা হলে তারাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। সরকারি খাতের বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে জনবল সংকট রয়েছে। সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রদানের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করার পদক্ষেপও নিতে হবে। দেশের মোট কর্মসংস্থানের বড় অংশই হচ্ছে বেসরকারি খাতে। কাজেই বেসরকারি খাতকে চাঙা করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পের বিকাশে দরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাংক খাতসহ অন্যান্য নাজুক খাতের সংকট দূর করার জন্যও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।