ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪ ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে প্রাধান্য পাবেন দলের ত্যাগী এবং মাঠের পরীক্ষিত নারী নেত্রীরা। এক্ষেত্রে নানা কারণে সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরাও এগিয়ে আছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেত্রীদের দেখা যাবে সংসদে। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার নারীদের নামও শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে আছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকারাও। শরিকদের মধ্য থেকে দু-তিনজনকে আওয়ামী লীগের কোটায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য করা হতে পারে। তবে এবার নতুনদের বেশি সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অর্থাৎ দু-একজন ব্যতিক্রম ছাড়া আগের নারী এমপিদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেত্রীরা প্রাধান্য পান। প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য এবং শহিদ পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। বিভিন্ন পেশার খ্যাতিমান যারা তারাও থাকতে পারেন। এবারও এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দল মনোনয়ন দেবে। তিনি আরও বলেন, একবার যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়, সাধারণত পরেরবার তাদের আর দেওয়া হয় না। তবে বিশেষ কারণে দু-একজনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে মাঠে কাজ করা প্রকৃত নারী নেত্রী, এরপর প্রাধান্য পাবেন ত্যাগী আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, এরপর বিভিন্ন পেশার স্বনামধন্য নারীরা-এমন ধারণা আমার। সবকিছুই নির্ভর করছে বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞতা দিয়ে এই মনোনয়নগুলো দেবেন।
এদিকে সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের নারী নেত্রীরা। তাদের মধ্যে আছেন মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আন্দোলন-সংগ্রামে দলের জন্য নিবেদিত সাবেক ছাত্রনেত্রী। তেমনি আছেন বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকাও। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের কাছেও। জানাচ্ছেন আন্দোলন ও নির্বাচনে দলের পক্ষে ভূমিকার কথা।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নারী নেত্রীদের ভিড় দেখা যায়। ২৬ জানুয়ারি শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নারী নেত্রী কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় অনেকেই দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেন। এ সময় দলের নারী নেত্রীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি মনোনয়ন দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে কারও কিছু করার নেই।
এর একদিন আগে ২৫ জানুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সেখানে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেত্রীদের অনেকেই ছিলেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী নেত্রীদের উদ্দেশে বলেন, যারা বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন, সংরক্ষিত নারী আসনের আশায় তাদের আগেই পদত্যাগ করার দরকার নেই। দল মনোনয়ন দিলে তখন দেখা যাবে। তার আগে এক পদের আশায় আরেকটা পদ ছাড়া যাবে না।
সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। ৯ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় ৯ এপ্রিলের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন করতে হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো দল কটি আসন পাবে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে কোনো সমস্যা নেই। আগামী সপ্তাহে এ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে। তফশিলের পরেও দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে আওয়ামী লীগ। এরপর দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
সংবিধান অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দলের ছয়জন নির্বাচিত সংসদ-সদস্য থাকলে ওই দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ-সদস্য হবেন। সে হিসাবে আওয়ামী লীগ ৩৭টি নারী সংসদ-সদস্য পায়। তবে এবারের সংসদে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য রয়েছেন, সেই হিসাবে তারা সম্মিলিতভাবে ১০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য পেতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ জানুয়ারি স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার হাতেই ছেড়ে দেন।
ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত আসনের ৪৮টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেতে যাচ্ছে। ১৪ দলীয় জোট ও স্বতন্ত্রভাবে জয়ী সংসদ-সদস্যরা সমর্থন দেওয়ায় আওয়ামী লীগ এ সংখ্যক আসন পেতে যাচ্ছে। বুধবার এ সংক্রান্ত চিঠি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদল। প্রথাগতভাবে সংরক্ষিত নারী আসনে সাধারণত আসনের চেয়ে বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় দল বা জোট মনোনীত প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। ফলে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে আগ্রহীরা নিজ দল বা জোটের নেতাদের কাছেই ধরনা দিচ্ছেন। নানাভাবে চেষ্টা করছেন দলীয় প্রধানের সুদৃষ্টি আকর্ষণের।