সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ
বিএনপির আন্দোলন ঘিরে কৌশলী আওয়ামী লীগ। তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে সরাসরি বাধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে দলের হাইকমান্ডের। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদের একেবারে ফাঁকা মাঠেও ছাড়তে চায় না ক্ষমতাসীনরা। ফলে আগের মতোই বিএনপির নতুন কর্মসূচির দিনগুলোতেও রাজপথে থাকবে সরব আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া নিজেদের নির্বাচনি প্রস্তুতিতে আরও গতি বাড়াবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ অক্টোবর মাসজুড়ে ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন ও বিএনপির ’অপকর্ম’ তুলে ধরে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তারা নির্বাচন পর্যন্ত নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি আন্দোলনের নামে সহিংসতার পথে হাঁটলে তাদের প্রতিহতের প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, বিএনপি চেষ্টা করবে কীভাবে তাদের রাজনীতিতে লাভ হয় সেটা। তবে আমার মনে হয়, বিএনপি এখন হতাশ। তারা ভেবেছিল আমেরিকার মাধ্যমে বা বিদেশিদের মাধ্যমে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছে, সেই সুযোগ নেই। সেই হতাশার জায়গা থেকেই তারা নানা ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি দিচ্ছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মসূচি কখনো সফল হবে না। কারণ কর্মসূচিগুলোতে জনসম্পৃক্ততা নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই সংবিধান মেনে যথাসময়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। ইতোমধ্যে আমরা নির্বাচনি প্রস্তুতিও শুরু করেছি, নানা কর্মসূচিও পালন করছি। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপির কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তাদের আন্দোলনটাও তেমনি। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি মুখে যাই বলুক না কেন, আসলে তো তারা নির্বাচনই চায় না। তারা চায় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনি প্রচারণার মধ্যেই রয়েছি। আমরা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করছি। এ মাসের শুরতেও ঢাকায় দুটি বড় জনসমাবেশ হয়েছে। অক্টোবর মাসে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরও কয়েকটি বড় জনসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, বিএনপির ঘোষিত নতুন কর্মসূচি ঘিরে নিজেদের প্রস্তুতিও শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আজ মঙ্গলবার টঙ্গী (গাজীপুর) ও কেরানীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তাদের এই কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেন, আন্দোলনের নামে কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে মাঠে থাকব।
এদিকে এর আগেও বিএনপির সব কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে দেখা গেছে। বিএনপির নতুন কর্মসূচির দিনগুলোয়ও একইভাবে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। তবে অতীতের মতোই সরাসরি কোনো ধরনের বাধা না দিয়ে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এদিকে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সভা ডাকা হয়েছে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপনে নিজেদের কর্মসূচি চূড়ান্তের পাশাপাশি এবং বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে নিজেদের করণীয় কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে নির্বাচনি জনসভা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও রংপুরে নির্বাচনি জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামীতে সিলেট, বরিশাল, খুলনাসহ আরও বেশ কিছু জনসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে উন্নয়ন প্রকল্প অর্থাৎ মেগা প্রজেক্টের উদ্বোধন ঘিরেও কয়েকটি শোডাউন বা জনসমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন। তিনি দেশে ফেরার পরপরই এসব কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জনগণের মধ্যে শঙ্কা ও ভয় তৈরির জন্য। তাদের আন্দোলন হচ্ছে আন্দোলন-আন্দোলন খেলা। কর্মীদের চাঙা রাখতে দলটির নেতারা মিথ্যাচার করে। তারা আগেও বলেছিল-১০ ডিসেম্বরের পর সরকার থাকবে না। এখন আবার নতুন করে নেতাকর্মীদের সামনে বিএনপি মুলা ঝুলিয়েছে। তারা বলছে, ‘অক্টোবরের মধ্যে সরকারের পতন হবে! এবং বিদেশিরা এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে।’ এ ধরনের মিথ্যা আওয়াজ দিয়ে তারা কর্মীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণ তাদের কর্মসূচিতে অতীতে সাড়া দেয়নি, এবারও দেবে না।
নিজেদের কর্মসূচি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমাদের কোনো কর্মসূচি লোক দেখানোর জন্য নয়। আমরা আন্তরিকভাবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি-সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনমুখী করার জন্য। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন ও বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতেও তাদের বলা হয়েছে।
দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্র ও শান্তিতে বিশ্বাস করি। ফলে শুধু বিএনপি নয়, যে কোনো দল শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতেই পারে। কিন্তু বিএনপি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেই জনগণের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়। কারণ এর আগে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ তারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বাস, ট্রেনসহ অফিস-আদালতে আগুন দিয়েছিল। তাছাড়া তাদের আন্দোলন বা কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততাও নেই। তিনি আরও বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। এসব কর্মসূচি নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।