অক্টোবর ৬, ২০২৩ ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ
জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে থাকা নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য আবারও ফাঁস হয়েছে। এবারও তথ্য ফাঁস হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার ব্যবহারকারী এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
এ ঘটনায় সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়কে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে টেলিগ্রামের যেই চ্যানেল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য পাওয়া যেত সেখান থেকে তথ্য মিলছে না। একাধিকবার চেষ্টা করেও সেখান থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি টেলিগ্রামের এনআইডি ইনফরমেশন শীর্ষক চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের বিষয়টি ব্যবহারকারীদের নজরে আসে। বিষয়টি বিজিডি ই-গভ সার্ট থেকে ইসিকে জানানো হয়। এরপর ইসি বুধবার রাত একটা থেকে সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে।
বন্ধ করার আগ পর্যন্ত টেলিগ্রামের চ্যানেলটিতে এনআইডি নম্বর (দশ সংখ্যার এনআইডি নম্বর) ও জন্মতারিখ দিলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রীর নাম, জন্মতারিখ, ধর্ম, লিঙ্গ, মুঠোফোন নম্বর (দেওয়া থাকলে), বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা এবং ছবি পাওয়া যাচ্ছিল।
এর আগে গত জুলাই মাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকের তথ্য ফাঁস হয়। ওই ঘটনায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয়কে দায়ী করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটিও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকে নাগরিকদের তথ্য যাচাই করত। ওইসব তথ্য তারা সংরক্ষণও করেছিল।
ওই ঘটনায় হইচই পড়লে সন্দেহভাজন হিসাবে জন্ম-নিবন্ধন কার্যালয়ের পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয়কেও তথ্য সেবা দেওয়া বন্ধ রাখে ইসি।
জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের শর্তে পুনরায় সেবাটি চালু করে দেয় ইসি। এবার টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে তথ্য প্রকাশের পর আবারও ভূমি মন্ত্রণালয়কে তথ্য যাচাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ইসি থেকে বৃহস্পতিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে এবং বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন ইসিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইটি টিম ও ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের যারা এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সঙ্গে জড়িত এমন কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিয়ে ইসিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এই বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের (ইসির তথ্যভান্ডার) থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি। আমাদের তথ্যভান্ডার হ্যাকও হয়নি।
তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান আমাদের তথ্যভান্ডার থেকে এনআইডির তথ্য নিয়ে থাকে, তার মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এক জায়গায় করে সেগুলো ফাঁস করতে পারে। কতটি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই এটা বলা যাবে না। আমরা দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলতে পারব।
তথ্য ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনআইডির তথ্য নেওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে এমন হতে পারে। বুধবার রাত একটার সময় সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই চ্যানেলে আর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
বারবার তথ্য ফাঁস হওয়ায় নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লংঘন হচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাইভেসি কোথায় আছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চাকরির আবেদন করতে যখন সব তথ্য দেওয়া হয় তখন কি ওই প্রার্থীর প্রাইভেসি থাকে? যখন নিকাহ নিবন্ধন করেন তখন কি প্রাইভেসি থাকে? টেকনোলজির যুগে প্রাইভেসি বলতে কিছু থাকে না।
বারবার তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ইসি দুর্বলতা ঢাকছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসির কোনো দুর্বলতা নেই। কারণ ইসির এখান থেকে হ্যাক হয়নি। ইসির টেকনিক্যাল দিকটা খুব স্ট্রং। তারা সব সময় এটা মনিটর করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে তার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে তথ্য বেহাতের বিষয়টি নজরে আসার পর বিজিডি ই-গভ সার্ট থেকে ইসিকে জানানো হয়। এরপর যাচাই করে ভূমি মন্ত্রণালয়কে এনআইডি সেবা দেওয়া বন্ধ রাখে ইসি। বর্তমানে ১৭৫টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইসির সার্ভার থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সেবা নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান ইসির দেওয়া এপিআই-এর মাধ্যমে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের সেবা নিয়ে থাকে। ভূমি মন্ত্রণালয় নামজারি, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রির রেজিস্ট্রেশনের কাজে নাগরিকের এনআইডির তথ্য যাচাই করে থাকে।