ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ
আরটিজিএস লেনদেনে এবার যুক্ত হচ্ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ান। দেশে তাৎক্ষণিক লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রিয়েল টাইম গ্রোস সেটলমেন্ট (আরটিজিএস)। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আরটিজিএসে ইউয়ান লেনদেন শুরু হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
আরটিজিএস ব্যবস্থায় চীনা ইউয়ান অন্তর্ভুক্ত করা প্রসঙ্গে সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় ক্লিয়ারিং কার্যক্রম আধুনিক, যুগোপযোগী ও তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে এফডিডির পরিবর্তে আরটিজিএস ব্যবস্থা চালু করা হয়। এই মাধ্যমে পাঁচটি বৈদেশিক মুদ্রায় (মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো, জাপানিজ ইয়েন ও কানাডিয়ান ডলার) অটোমেটেড ক্লিয়ারিং কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আরটিজিএস ব্যবস্থায় চায়নিজ ইউয়ান (সিএনওয়াই) অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
সার্কুলারে আরো বলা হয়, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আরটিজিএস ব্যবস্থায় ইউয়ান মুদ্রায় লেনদেন চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে ইতোপূর্বে জারি করা ‘গাইড লাইনস অব এফসি ক্লিয়ারিং থ্রো বিডি-আরটিজিএস’ সিস্টেম অনুসরণ করতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো পেমেন্ট সিস্টেমে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনব্যবস্থা চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন থেকে নির্ধারিত পাঁচটি বৈদেশিক মুদ্রায় আরটিজিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে আন্ত ব্যাংক লেনদেন শুরু হয়। ওই সময়ে জানানো হয়েছিল, ইউয়ান শিগগিরই যুক্ত করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ২০২২ সালে আরটিজিএস চালু হলেও পাঁচটি মুদ্রায় সীমাবদ্ধ ছিল। তখন ব্যাংকগুলো চীনা মুদ্রায় লেনদেনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এখন কিছু ব্যাংক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাঁরা ইউয়ান আরটিজিএসে লেনদেন করতে আবেদন করেছে। বাকি ব্যাংক প্রস্তুতি নিয়ে আবেদন করলে চীনা মুদ্রায় আরটিজিএসে লেনদেনের অনুমতি দেওয়া হবে।
জানা যায়, এফডিডি প্রক্রিয়ায় চীনা মুদ্রায় ঋণপত্র খোলার ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এই ম্যানুয়াল পদ্ধিতিতে আগে সব বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং এবং সেটলমেন্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের সশরীরে উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করতে হয়। ফলে লেনদেনের খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি সময়ও বেশি প্রয়োজন হয়, বাড়ে জটিলতাও।
ব্যাংকগুলোর এ ধরনের লেনদেনের জন্য একজন কর্মীর মাধ্যমে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রেখে আসতে হয়। ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট (এফডিডি) হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চ্যানেল ব্যবহার করে আন্ত ব্যাংক তহবিল স্থানান্তরের সুবিধার্থে ব্যাংকগুলোর ব্যবহৃত একটি চ্যানেল, যা নিষ্পত্তির জন্য এক কার্যদিবস সময়ের প্রয়োজন হয়।
যদিও রিয়েল টাইম গ্রস সেটলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে স্থানীয় মুদ্রা (টাকায়) লেনদেন করা হয়, ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে আরটিজিএসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায়ও যেকোনো পরিমাণে লেনদেন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রতিটি লেনদেনে গ্রাহক থেকে ব্যাংকগুলো ভ্যাটসহ সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বা সমমানের ডলার ও ইউরো নিতে পারবে। আরটিজিএস পদ্ধতিতে স্থানীয় এবং বৈদেশিক উভয় মুদ্রাতেই লেনদেন সম্ভব। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোর ১১ হাজারের বেশি শাখা দেশীয় মুদ্রায় আরটিজিএস পদ্ধতিতে লেনদেন চালু রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক তার ডিজিটাইজেশনে অন্তর্ভুক্ত হতে ২৯ অক্টোবর ২০১৫ সাল থেকে আরটিজিএস সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এটির মাধ্যমে গ্রাহকদের উচ্চমূল্যের অর্থ লেনদেন দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছে। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সহজেই বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করা যাচ্ছে এবং খরচও কমে আসছে।
রিয়েল টাইম গ্রোস সেটলমেন্ট সিস্টেমটি এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা ও বিশ্বব্যাংকের প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় আরটিজিএস সিস্টেমটি সুইডিশ সংস্থা সিএমএ স্মল সিস্টেম-এবি দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। আরটিজিএস সিস্টেমে একটি ব্যাংকের এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রিয়েল টাইমে অর্থ স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে ২০২২ সাল থেকে তীব্র ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিশ্বের পাঁচটি দেশের মুদ্রাকে আইএমএফ ‘হাই ভ্যালু কারেন্সি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীনের ইউয়ান তাদের মধ্যে অন্যতম। আইএমএফের কারেন্সি বাস্কেটে ইউয়ান স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৬ সালে। এর পর থেকে আইএমএফের পর্যালোচনায় মুদ্রা হিসেবে ইউয়ান আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে।
বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানি বাজার চীন। বাংলাদেশ প্রতিবছর চীন থেকে আমদানি করে ১৪-১৫ বিলিয়ন ডলারের মতো পণ্য। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশে এখনো চীনে এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় ডলার ব্যবহার করে আসছে।