ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ
আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিত্রদের আসন ভাগাভাগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বরের এক অথবা দুই দিন আগে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত তেমন সুখবর নেই।
আওয়ামী লীগ মিত্রদের খুব কম সংখ্যক আসনে ছাড় দিতে চায়। এ কারণে জাসদ ইতোমধ্যে ১৪ দলীয় জোট ছাড়ার পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রমতে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। সব শেষ বুধবার গুলশানে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ।
এর আগে সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলের নেতারা। এর পরদিন মঙ্গলবার ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করেন জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আমির হোসেন আমু। তবে এসব বৈঠকে আসন সমঝোতা বা বণ্টনের বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঠিক আগ মুহূর্তে বিষয়টি (আসন ভাগাভাগি) নিষ্পত্তি করতে চায় আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বৃহস্পতিবার বলেন, জাতীয় পার্টি প্রায় অর্ধশত আসনে সমঝোতা চায়। তবে এত আসন ছাড় দিতে নারাজ তারা (আওয়ামী লীগ)। আবার আসন সমঝোতা কীভাবে হবে, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির মতের অমিল রয়েছে।
আওয়ামী লীগের এ নেতার দাবি, জাতীয় পার্টি চায় সমঝোতা হওয়া আসনগুলো থেকে পুরোপুরি নৌকার (আওয়ামী লীগের) প্রার্থীদের প্রত্যাহার। কিন্তু তাদের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব হচ্ছে, দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহার না করে ভোটের মাঠে থেকেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে জয়ের ব্যাপারে সহযোগিতা করা। বর্তমানে জাতীয় পার্টির ২৩ জন সংসদ-সদস্য রয়েছেন।
এদিকে ১৪ দলের শরিক জাসদ চেয়েছে ৬টি আসন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ ২টি আসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ২টি আসন হচ্ছে দলের সভাপতি হাসানুল ইনুর কুষ্টিয়া-২ এবং আরেক নেতা মোশাররফ হোসেনের লক্ষ্মীপুর-৪।
দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের ফেনী-১ আসন ছেড়ে দিতে বলেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের দুই আসনে পূর্ণ নিশ্চয়তাসহ সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টুর ময়মনসিংহ-৬, মোহাম্মদ মহসিনের বরিশাল-৬, মোশাররফ হোসেনের লক্ষ্মীপুর-৪, রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪ এবং নুরুল আখতারের জন্য চট্টগ্রাম-৩ আসন জাসদ ছাড় চেয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে।
জানা যায়, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ও তরিকত ফেডারেশনের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও ফজলে হোসেন বাদশার জন্য দুটি আসন ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে আওয়ামী লীগ। জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং তরিকত ফেডারেশনের প্রধান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীও ধরে রাখতে পারছেন তাদের আসন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিকল্প ধারা তাদের আসন নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে তৃণমূল বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের একটি আসনে ছাড় নিশ্চিত করেছে বলে জানা গেছে।
তফশিল অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর। এর আগেই আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। আর তা করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ১৪ দলের শরিকরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইসিকে চিঠি দিয়েছে।
শরিকদের এই ইচ্ছা পূরণ করতে ছাড় দেওয়া আসনগুলোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিতে হবে জোটনেত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে। বর্তমান ১৪ দলভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ৮ জন সংসদ-সদস্য রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ বৃহস্পতিবার বলেন, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিষয়টি ফাইনাল (চূড়ান্ত) হবে।
অবশ্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা স্বীকার করলেও আসন ভাগাভাগির আলোচনা নাকচ করেছেন। বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টনের কোনো কথা বলিনি। আসন বণ্টনের কথা বলার প্রয়োজনও নেই। ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারলে ১৯৯১ সালের মতো নীরব বিপ্লবও হয়ে যেতে পারে।
সুষ্ঠু ভোট হলে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে আশাবাদ ব্যক্ত করে চুন্নু বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের চেয়ে অ্যান্টি আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল আসনে জয়লাভ করবে জাতীয় পার্টি।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বৃহস্পতিবার বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে জাসদসহ ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তবে সময় চলে যায়নি। আলোচনা চলছে। আমরা আশা করছি আলোচনার মধ্য দিয়ে এ অসন্তোষ দূর করা সম্ভব হবে।