আসাদ-এরদোগান সম্পর্ক কি সহজে জোড়া লাগবে?

আসাদ-এরদোগান সম্পর্ক কি সহজে জোড়া লাগবে?

আন্তর্জাতিক

জুলাই ৬, ২০২৪ ৯:১১ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে তুরস্কে আনুষ্ঠানিক সফরের আমন্ত্রণ জানাবেন বলে জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।

শুক্রবার কাজাখস্তানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে আসা সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

এরদোগান বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মিলে আমরা বাশার আল আসাদকে আমন্ত্রণ জানাতে পারি।’

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট যদি তুরস্ক সফর করেন, তাহলে তা একটি নতুন প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে। সম্প্রতি সিরিয়ার কাটিয়ে দেওয়া বছরগুলো সবাইকে স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, সেখানে একটি স্থায়ী সমাধান অতীব প্রয়োজন।’

ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিপাক্ষিক কিছু ইস্যুতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছর থেকে তুরস্ক সফর স্থগিত রেখেছেন। তবে বুধবার কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তুর্কি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এতে আলোচনা করা বিষয়গুলোর মধ্যে সিরিয়া ইস্যুও ছিল বলে জানা গেছে।

এদিকে এরদোগান গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। বাশার আল আসাদও এ ধরনের বৈঠকের জন্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া সুদানির নেতৃত্বে একটি মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা আসাদ সরকারকে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজি করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও অর্জন করেছে।

এদিকে একজন সিনিয়র ইরানি কর্মকর্তা গত মাসে আঙ্কারায় বলেছিলেন যে, তারাও তুর্কি সরকারের সঙ্গে নিঃশর্ত আলোচনার জন্য দামেস্ককে চাপ দিচ্ছেন।

আঙ্কারাও বিশ্বাস করে যে, শেষ পর্যন্ত শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের সুবিধার্থে দামেস্কের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার এবং উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে একটি জোট প্রতিষ্ঠা করার উপযুক্ত সময় এসেছে।

তবে তুর্কি কর্মকর্তারা সচেতন যে, এই প্রচেষ্টা সফল হতে অনেক সময় লাগবে এবং এটি সহজ হবে না।

এরদোগানের মতে, সিরিয়ার অবকাঠামো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এর জনগণ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তাই সিরিয়দের নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং অস্থিতিশীল অবস্থার অবসান হওয়া অপরিহার্য।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়ায় এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যেমন- কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) এবং দেশটিতে এর শাখাগুলোর জন্য একটা সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দেয়। যাকে তুরস্ক সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে।

এরদোগান বলেন, ‘সিরিয়ায় যে শান্তির হাওয়া বইবে এবং সিরিয়াজুড়ে মানুষের মধ্যে যে শান্তির পরিবেশ তৈরি হবে- তা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ শরণার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যও প্রয়োজনীয়’।

‘আমরা সবসময় আমাদের প্রতিবেশী সিরিয়ার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি এবং আমরা তা অব্যাহত রাখব’, যোগ করেন তিনি।

তবে আঙ্কারা এখনও সিরিয়ায় কিছু সংস্কার আশা করে বলেও জানান এরদোগান। যেমন- একটি নতুন সামাজিক চুক্তি, যা ‘ন্যায্য, সম্মানজনক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’। যা যুদ্ধরত প্রশাসন ও গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে বিভক্ত পুরো দেশকে একত্রিত করবে এবং দেশীয় শান্তি অর্জন করবে।

এদিকে আসাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে এরদোগানের বার্তা এবং এ সপ্তাহের শুরুতে সিরিয় শরণার্থীদের ওপর হামলা- উত্তর সিরিয়ায় তুর্কি-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

সোমবার উত্তর সিরিয়ার একাধিক শহরে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তুর্কি প্লেট দিয়ে যানবাহনগুলোতে হামলা চালিয়েছে। সেই সঙ্গে সেগুলোর কিছু ক্ষতি করেছে এবং পুড়িয়েও দিয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে তুর্কি সাঁজোয়া যানও দেখা গেছে এবং সিরিয়ার আফরিন ও আজাজ শহরের কিছু সামরিক ফাঁড়ি বুলেটে ঝাঁঝরা করা হয়েছে।

২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এরদোগান তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ার বিরোধীদের সমর্থন করে আসছেন।

তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপ সিরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় এবং রাশিয়া আসাদকে সমর্থন দিয়ে তার সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার পর, ২০১৬ সাল থেকে তুরস্ক তার মনোভাব পরিবর্তন করে।

এ সময় আঙ্কারা প্রাথমিকভাবে কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে শুরু করে এবং সীমান্ত বরাবর উত্তর সিরিয়ায় হামলা চালায়। এছাড়াও আফরিন, আল-বাব এবং আজাজের মতো শহরগুলো দখল করে এবং কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *