ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪ ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিন সদস্যবিশিষ্ট মার্কিন প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এমন মন্তব্য করা হয়।
প্রতিনিধিদলের তরফে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের পর দেওয়া চিঠিতে বাইডেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের সঙ্গে তার প্রশাসনের কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জবাবের কপি মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাবে। এ বিষয়ে বাইডেনের চিঠি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লবাখার, মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিপার এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ঢাকায় বিএনপি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করে মার্কিন প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন এক প্রেক্ষাপটে এ সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি’ বলে মন্তব্য করলেও নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।
রোববার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশ সফররত এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর আইলিন লবাখার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পত্রের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর লেখা পত্রের একটি কপি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী লবাখারকে হস্তান্তর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র। দুদেশের সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু, এ সম্পর্ককে কীভাবে আরও গভীর করা যায়- সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে একমাত্র সমাধান হিসাবে বিবেচনা করেছে। তারাও চায় রোহিঙ্গারা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাক। সেই সঙ্গে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে, তার ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধসহ যে কোনো যুদ্ধের বিরুদ্ধে ও শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছি। বঙ্গবন্ধুর আÍস্বীকৃত খুনি যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রাশেদ চৌধুরীকে দেশে আনার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তাদের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এটি দেখছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র পাঁচটি পর্যবেক্ষণ (অবজারভেশন) দিচ্ছে, সেসব বিষয়ে বাংলাদেশ তার গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরবে।
পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউএসএইডের সহযোগিতা আলোচনায় স্থান পায় উলেখ করেন মন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো সামরিক চুক্তি করতে চায় কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
আইলিন লাবাখার বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। মিয়ানমার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শরণার্থী, শ্রম ও বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সমৃদ্ধ, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে।
সফররত ইউএসএইডের এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার বৈঠকে অংশ নেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম এবং অন্য কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রতিনিধিদলের একাংশ পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়। এছাড়া সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, টকশো উপস্থাপক জিলুর রহমান এবং অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সুশীল সমাজের জন্য স্পেস সৃষ্টির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সফরের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে অন্তরিন রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।