মার্চ ১০, ২০২৪ ১০:০২ পূর্বাহ্ণ
প্রকল্প প্রস্তাবের এক যুগ পরও আলোর মুখ দেখছে না দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট। এতে ৫৬ বছর ধরে এক জায়গাতেই আটকে আছে দেশের তেল পরিশোধন সক্ষমতা। নানা কারণে বারবার হোঁচট খাওয়া প্রকল্পতেই এবার ৮০ শতাংশ অংশীদারিত্ব চেয়ে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে একটি শিল্প গ্রুপ। তবে বিদ্যুৎ খাতের উদাহরণ টেনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিযোগিতাহীন প্রক্রিয়ায় এত বড় প্রকল্পে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করলেও ঝুঁকি থাকে ভোক্তাস্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার।
দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি। গত ৫৬ বছর ধরে জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিরামহীনভাবে বড় নির্ভরতা হয়ে আছে স্থাপনাটি। যদিও বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হারে, কিন্তু পরিশোধন সক্ষমতা আটকে আছে এক জায়গাতেই।
বিদ্যমান স্থাপনার মেয়াদকাল পূর্ণ হয়ে যাওয়া, পরিশোধিত তেল আমদানি কমানো, সাশ্রয়ী জ্বালানি তেল পেতে পরিশোধন সক্ষমতা বাড়িয়ে তিনগুণে উন্নীত করার লক্ষ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয় এক যুগ আগে। তবে দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি বারবার জমা হয়েছে বটে, কিন্তু এখনো হয়নি কাজের কাজ কিছুই। কখনো ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপের অযৌক্তিক প্রস্তাব, কখনো অর্থ পাশ নিয়ে টানাপোড়েন- এমন সব নানা কারণে হোঁচট খেয়েছে প্রকল্পটি।
এমন অবস্থায় সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব যখন একনেকে ওঠানোর অপেক্ষায়, তখন তা আবারও থমকে গেল চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ এস আলমের নতুন প্রস্তাবনায়। গত মাসে শিল্প গ্রুপটির পক্ষ থেকে জ্বালানি বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইস্টার্ন রিফাইনারির নতুন ইউনিটের ৮০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে এস আলমের, বাকিটা বিপিসির। দাবি করা হয়, নতুন করে নকশা আর পরামর্শক নিয়োগের। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে এক হাজার কোটি বেশি খরচের পর সব কিছু আবারও ভাবতে হচ্ছে নতুন করে, এস আলমের প্রস্তাব যাচাইয়ে গঠন করা হয়েছে বিপিসির ৭ সদস্যের কমিটি।
এ বিষয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান গণমাধ্যমকে বলেন, এটা তাদের প্রস্তাব। এ বিষয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। ইতোমধ্যেই প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আমরা যেটা খরব করলাম, সেই বিষয়ে নেগোশিয়েসন পর্যায়ে ঠিক করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, এখনো যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের বিষয়টি।
তবে গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় ইস্টার্ন রিফাইনারির মতো স্পর্শকাতর রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি স্থাপনায়, বেসরকাারি প্রতিষ্ঠানকে বড় আকারের অংশীদারিত্ব দেয়া কতটা যৌক্তিক হবে, সে নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বেসরকারি খাত সব সময় তাদের নিজের দিকের মুনাফাটা ঠিক রাখার চেষ্টা করবে। এখানে সরকার দৃঢ়ভাবে দর কষাকষি না করলে সমস্যা হবে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, প্রতিযোগিতাহীন ব্যক্তি খাত বিনিয়োগে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করার এমন উদ্যোগ ন্যূনতম ব্যয়ে জ্বালানি সরবরাহের পরিপন্থি হবে। কারণ বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছেন, তারা যত খুশি, ততো ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ পান এই প্রক্রিয়ায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর হওয়ার পর থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবে রূপ নিতে সময় লাগবে অন্তত ৫ বছর।