নভেম্বর ১৪, ২০২৩ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। বর্তমানে সবচেয়ে আধুনিক ও বিস্ময়কর প্রযুক্তির একটি নাম। প্রযুক্তিটি অতি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, আধুনিক জীবনের অনেক কিছুই এ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে।
তবে এরই মধ্যে আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন এআই’কে অসৎ উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হতে পারে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটি কীভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা যায়; তা নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাজ্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এ সম্মেলনে টেসলার মালিক ইলন মাস্কসহ প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন।
এ পর্যন্ত এসে সবার মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে এআই কী? কেন এই প্রযুক্তিটি নিয়ে এতো আলোচনা?
এআই কী এবং কীভাবে কাজ করে?
এআইয়ের সুবাদে কম্পিউটার একজন মানুষের মতো করেই একটি সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। প্রচুর পরিমাণে তথ্য দিয়ে এআই সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করা হয় এবং এটি বিভিন্ন নির্দেশনাগুলো শনাক্ত করা শেখে। মানুষের মতো করে কথা বলা অথবা অনলাইন ক্রেতাদেরকে কোন পণ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়ার মতো কাজগুলো এআই সম্পন্ন করতে পারে।
ফেসবুক, এক্স বা টুইটার এবং আমাজনের মতো কোম্পানিগুলোও এখন এআইয়ের সহায়তা নিচ্ছে। কণ্ঠ দেয়া ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্ট সিরি এবং অ্যালেক্সার পেছনেও রয়েছে এআই প্রযুক্তি। ফেসবুক ও এক্সের কোন পোস্টগুলো ব্যবহারকারীদের দেখানো হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোম্পানিদুটিকে সাহায্য করে এআই। বিশ্বের বৃহত্তম রিটেইল শপ অ্যামাজনও ভবিষ্যত কেনাকাটার জন্য পরামর্শ দিতে গ্রাহকদের পছন্দগুলো বিশ্লেষণ করতে এআইয়ের সাহায্য নেয়।
চ্যাটজিপিটি এবং ড্যাল-ই প্রোগ্রাম বলতে কি বোঝায়?
চ্যাটজিপিটি এবং ড্যাল-ই মূলত ‘জেনারেটিভ’ এআইর উদাহারন। এই প্রোগ্রামগুলিকে অনলাইন টেক্সট এবং ইমেজের মতো বিপুল সংখ্যক তথ্যের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা হয়। এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে তৈরি করা কনটেন্টগুলো দেখে মনে হবে তা কোন মানুষের সৃষ্টি।
চ্যাটজিপিটির মতো ‘চ্যাটবটগুলো’ টেক্সটের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। আর ড্যাল-ই ঘরানার এআই প্রোগ্রামগুলো সাধারন নির্দেশনা থেকেই ছবি তৈরি করে দিতে পারে। তবে এই প্রোগ্রামগুলো যে সব সময়ই নিখুঁত কাজ করতে পারে তা কিন্তু নয়। এসব প্রোগ্রামও ভুল করে।
অনেক সময় ভুলভাল উত্তর দেয় , ছবি ঠিকমতো বানাতে পারে না এবং পক্ষপাতমূলক কনটেন্ট তৈরি করে। ইতোমধ্যেই অনেক শিল্পী, লেখক এবং অভিনেতারা সতর্ক করে বলেছেন এআই প্রযুক্তি বিনা পয়সায় তাদের কাজ নকল করতে পারে।
সমালোচকরা কেন এআইকে বিপদজনক মনে করছেন?
এআইয়ের দ্রুত উত্থান নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা আশঙ্কা করছেন এআইয়ের এই উর্ধ্বগতি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। অনেকে তো বলছেন এআই নিয়ে গবেষণা বন্ধ করে দেয়া উচিত। অক্টোবরের শুরুতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, এআই খুব শিগগিরই সাইবার হামলার জন্য হ্যাকারদের এবং রাসায়নিক আক্রমনের জন্য সন্ত্রাসীদের সহায়তা করবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এআই গডফাদার হিসেবে পরিচিত তিনজনের দুইজনই (জিওফ্রে হিন্টন এবং ইয়োশোয়া বেনগিও) এআইর ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অবশ্য বাদবাকি এক গডফাদার ইয়ান লিকুন।
যুক্তরাষ্ট্রের কমেডিয়ান সারাহ সিলভারম্যান তার লেখা ব্যবহার করে এআইকে প্রশিক্ষিত করা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। গত জুনে ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান ম্যাগির্থ ভেসতেগার বিবিসিকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে এআই আমাদের ওপর কতোটা প্রভাব ফেলবে তারচেয়েও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এরমাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব বা বৈষম্য বৃদ্ধি।
এছাড়াও এআই সিদ্ধান্ত গ্রহনে ভূমিকা রাখবে; যার প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনযাত্রায়। পরিবেশের ওপর এআইয়ের প্রভাব নিয়েও অনেকে সমালোচনা করেছেন। শক্তিশালী এআই সিস্টেম পরিচালনার জন্য প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৭ সাল নাগাদ এআই সিস্টেমগুলো পরিচালনার জন্য সামগ্রিকভাবে বছরে নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোর প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সমপরিমান বিদ্যুৎ লাগবে।
বর্তমানে এআইর জন্য কোন ধরনের নীতিমালা রয়েছে?
এআইয়ের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন দেশে নীতিমালার প্রয়োগ নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এরমধ্যে ইইউতে আর্টিফেসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাক্ট নামে নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালাটি আইন হিসেবে বাস্তবায়িত হলে উচ্চ ঝুঁকির এআই’র ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রন আরোপ করা হবে। এআইর কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানে অনেকগুলো পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ‘আমেরিকানদের নিরাপদ রাখতে এআইর শক্তি ব্যবহারের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যকে এআই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নের্তৃস্থানে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ লক্ষ্যে দেশটি সম্প্রতি ব্লেচলি পার্কে এআই নিরাপত্তা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের সম্মেলন শুরু করেছে। প্রযুক্তির কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং চীনসহ সম্মেলনে উপস্থিত ২৮টি দেশ ব্লেচলি ডিক্লারেশন নামে এআই ভবিষ্যত নিয়ে তৈরি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। এই বিবৃতিতে এআইর ঝুঁকির বিষয় যেমন উল্লেখ করা হয়েছে তেমনি প্রযুক্তিটি যে ভালোর উদ্দেশ্যও ব্যবহৃত হতে পারে তা যুক্ত করা হয়েছে। এআইর বিশ্বাসযোগ্য ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সবাই একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।