টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রতিবেদনটি আমি পড়েছি। আবার লিখেছে যে, নোবেল প্রাইজের জন্য তার সঙ্গে আমার… আমার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব নেই। আমি কাউকে ঈর্ষা করি না। নোবেলের জন্য আমার কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই। আর লবিস্ট রাখার মতো টাকাও নেই। আমি কখনো ওটা চাইনি।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক দিল্লি সফর নিয়ে মঙ্গলবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে শুরু হয় সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব।
পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন পার্বত্য চুক্তি করি, তখন দেশে-বিদেশে অনেকে আমার জন্য লিখেছে। আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি। কী পেলাম, না পেলাম, ওগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই। যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি। তিনি যখন নোবেল প্রাইজ পান, তার সঙ্গে আমি কনটেস্ট করতে যাব কেন? পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আমি করেছি। পৃথিবীর যত শান্তি চুক্তি হয়েছে, খুঁজে বের করেন, কয়টা অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু আমার কাছে ১ হাজার ৮০০ জন অস্ত্র জমা দিয়েছে। তাদের সবাইকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে পুনর্বাসন করেছি। ভারতে যারা ছিল, তাদের ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে অনেকে এসেছে। আমি বলেছি, আমার ওসব পুরস্কারের দরকার নেই। এখানে আন্তর্জাতিকভাবে যারা পায়, তাদের কতটুকু অবদান সেটা নয়, এখানে আলাদা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। ওর মধ্যে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। কিন্তু বলে দিল ওটা নিয়ে আমি নাকি জেলাস।
২০০৭ সালে ড. ইউনূস রাজনৈতিক দল করতে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যর্থ হলেন কেন? গ্রামের মানুষকে এত কিছু দিয়ে থাকলে সেই মানুষগুলো ঝাঁপিয়ে এলো না কেন? কারণ, সুদের চাপে মানষ মৃতপ্রায় ছিল। তার ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। সে দায় কি আমার?
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তিনি (ইউনূস) তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ ডাবল প্লাস দিয়ে এসেছেন। আমার বিরুদ্ধে একের পর মামলা হয়েছে। আমার সঙ্গে তার তুলনা করা যায় না। তিনি (ইউনূস) বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন, সে টাকা কোথা থেকে এসেছে? উনি এর জবাব দিক। সরকারি চাকরি করা অবস্থায় তিনি বাইরে ব্যবসা করেছেন। আইন কী বলে? এখন সব দোষ আমার। আজকে সবচেয়ে বেশি আমি যাকে দিলাম। ওনাকে জেলাস করার কী আছে। তিনি মাঠে আসুক। চলুক আমার সঙ্গে। ডিবেট হয় না? আসুক, কথা বলব।
তিনি বলেন, ওনার (ইউনূস) পয়সা আছে উনি লেখাচ্ছেন। বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপতে হয়। তার (ইউনূস) জন্য কেউ তো আমাকে কখনো কিছু বলল না। শেখ হাসিনা কারো সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা জাতির পিতার কন্যা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। এ জায়গায় কেউ আসতে পারবে না। আমি দেশ তো বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে চলি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, গ্রামীণ ব্যাংক ইউনূসের করা না, তিনি চাকরি করতেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রামীণ ব্যাংক গঠন করলে সেখানে ড. ইউনূসকে চাকরি দেওয়া হয়। এরশাদ সাহেবের আমলে গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি হয়। তখন একজন এমডি খোঁজা হয়। ইউনূসকে এমডি করা হয়। তার নিজের করা ব্যাংক না। তিনি চাকরি করতেন, বেতন তুলতেন। সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। কিন্তু এমনভাবে প্রচার করেছেন, যেন ওনার নিজেরই করা।
গ্রামীণফোনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোনের ব্যবসা আমিই তাকে (ইউনূস) দিয়েছিলাম। কারণ, ব্যাংকের ক্ষতি হচ্ছিল। আমার সরকার, আমি নিজে ৪০০ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে দিয়ে তাকে সহায়তা করি। উনি তখন ফোনের ব্যবসার কথা বলেন। গ্রামীণফোনের টাকা তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে দিয়েছিলেন কি না, তাকে প্রশ্ন করা উচিত। অনেক অনুদান এসেছে তার কয়টা টাকা ব্যাংকে গিয়েছে?
মামলার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার নয়, শ্রমিকেরা মামলা করেছে। ২০০৬ সাল থেকে লেবার ওয়েলফেয়ার ফান্ডের একটি টাকাও তিনি দেননি। আজ যে তিনি উঠেছেন তাকে বেশি সহযোগিতা করেছি আমি।