তাপপ্রবাহের কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের উঠেছে নাভিশ্বাস। গরম থেকে বাঁচতে ও এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য চলছে প্রার্থনা। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নাগরিকদের ভুলের কারণেই তেতে উঠেছে রাজধানী।
শনিবার রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ‘ঢাকার দাবদাহ: নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায় ও করণীয়’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে পরিকল্পনাবিদরা রাজধানীতে তাপ বাড়ার নানা বিষয় তুলে ধরেন।
পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ঢাকায় তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অনেকাংশে দায়ী। ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণার অনুপস্থিত। কাচ নির্মিত ভবন ও এসি নির্ভর ভবনের নকশা তৈরি করা হচ্ছে। এতে নগরীতে তাপপ্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় এনার্জি এফিশিয়েন্ট ভবন ও গ্রিন বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করার ওপর গুরুত্বরোপ করেন পরিকল্পনাবিদরা। পাশাপাশি এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপরেও জোর দেন তারা।
বিআইপি সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কাচ নির্মিত ভবন ও এসি নির্ভর ভবনের নকশা প্রণয়নের সময় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা না থাকার কারণে তাপদাহ বাড়ছে। ইচ্ছে করলেই বহুতল ভবনে কাঁচের ব্যবহার কমানো যায়। এ বিষয়ে স্থপতিরা কাজ করতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার চাইলে দেশে এসির ব্যবহারকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এসির সর্বনিম্ন তাপমাত্রাকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামানো যাবে না এমন নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।।
ঢাকায় যদি প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের শয়নকক্ষে এসির ব্যবহার শুরু করে তাহলে দেশে যে বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হবে, তাতে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ওপরেও অকল্পনীয় চাপ তৈরি করবে বলে মত দেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও গবেষক রেদওয়ানুর রহমান বলেন, দেশে এসির ব্যবহারের কারণে লোডশেডিং বাড়ছে। একটি এসি ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চললে তা ২৬টি সিলিংফ্যানের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। আরো কম তাপমাত্রায় চালালে তা আরো বেশি সংখ্যক ফ্যানের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। এজন্য সরকারকে নীতিমালা করতে হবে যেন এসির তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নামানো হয়। দেশের সব এসি যদি ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চালানো হয় এতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ কম ব্যবহার হবে, তাতে দেশে অন্তত ৪ শতাংশ পরিবার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে পারে।
সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ শেখ মোহাম্মদ মেহেদি আহসান, বিআইপির নির্বাহী বোর্ড সদস্য আবু নাইম সোহাগ, হোসনে আরা আলো বক্তব্য রাখেন।