নভেম্বর ১৮, ২০২৩ ১২:০০ অপরাহ্ণ
২০২৪ সালের মধ্যেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা যৌথভাবে ম্যাগনোলিয়া কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করবে। এই স্যাটেলাইটের নাম দেওয়া হয়েছে লিগনোস্যাট।
কিন্তু কাঠের স্যাটেলাইট কেন, এর সুবিধাই বা কী?
মহাকাশযানকে আরো টেকসই করতেই এই প্রচেষ্টা বলে জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম এই দুই মহাকাশ সংস্থা। মহাকাশে বায়ুমণ্ডল বা পানির উপস্থিতিতি নেই।
সেখানে জীবাণুর আক্রমণ হওয়ারও কোনো সুযোগ থাকবে না। তাই কাঠের হলেও পচে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকছে না।
কোনোভাবে যদি এটা কক্ষপথ থেকে বিচূত হয়ে পৃথিবী থেকে ফিরেও আসে, তাহলে বড়সড় কোনো দুর্ঘটনার ঘটার আশংকা থাকছে না। কারণ কাঠ বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে ছাই হয়ে যাবে।
চলতি বছর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে প্রথম এ ধরনের তিনটি নমুনা স্যাটেলাইট নিয়ে একটি সফল পরীক্ষা চালানো হয়। এই সফলতা এখন নাসা ও জাক্সাকে মহাকাশে কাঠের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনে উৎসাহিত করছে।
সেই পরীক্ষায় মহাকাশের তাপ, ক্ষতিকর মহাজাগতিক বিকিরণ কিংবা সৌর কণার আঘাতেও ম্যাগনোলিয়া কাঠের নমুনায় কোনো বিকৃতি দেখা যায়নি। অর্থাৎ মহাকাশে টিকে থাকার সব ক্ষমতা এই কাঠের নমুনার রয়েছে।
ভবিষ্যতে কাঠের নভোযান যেমন বড় দুর্ঘটনা এড়িয়ে বহুদিন টিকে থাকতে সক্ষম হবে, তেমনি কাঠের তৈরি বলে নির্মাণ খরচও হবে তুলনামূলক অনেক কম।
যে তিনটি কাঠের নমুনা মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো তিনটি আলাদা কাঠের তৈরি- ম্যাগনোলিয়া, চেরি ও বার্চ। এর মধ্যে ম্যাগনোলিয়ায় সবচেয়ে উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফেটে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও এ কাঠের কম। মহাকাশে কাঠের মহাকাশযান পাঠানোর সবচেয়ে বড় কারণ স্পেস জাঙ্ক।
বর্তমানে ৯ হাজার ৩ শ টন স্পেস জাঙ্ক বা মহাকাশ বর্জ্য ঘুরছে পৃথবীর চারপাশে। এর প্রায় সবটুকুই বাতিল স্যাটেলাইট ও রকেট জমা হয়ে তৈরি। এগুলো চকচকে ধাতু যেমন অ্যালুমিনিয়াম ও টাইটেনিয়াম দিয়ে তৈরি। এর ওপরে আলো প্রতিফলিত হয় বাড়াবাড়ি মাত্রায়। বিশেষ করে স্পেস জাঙ্কের কারণে পৃথিবীর রাতের আকাশের উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে প্রায় ১০ শতাংশ। এ কারণে রাতের আকাশে আলোকদূষণ আগের চেয়ে অনেক বেশি এখন। আলোক দূষণের কারণেই মহাকাশের দূরবর্তী কোনো কম উজ্জ্বল নক্ষত্র বা মহাজাগতিক ঘটনা পৃথিবী থেকে দেখা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে।
তাছাড়া এসব স্পেস জাঙ্ক যদি পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে তাহলে মারাত্মক ক্ষতির আশংকাও রয়েছে। তাই গবেষকেরা ধাতুর চেয়ে কাঠের মহাকাশযানকেই বেশি নিরাপদ মনে করছেন।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স