যুদ্ধবিধ্বস্ত অনাহারী গাজাবাসীর জন্য ২০০ টন খাদ্য সহায়তা নিয়ে প্রথম জাহাজ পৌঁছেছে ভূখণ্ডটির উপকূলে। এর আগে দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা গাজাবাসীর জন্য সহায়তা পৌঁছানোর মরিয়া চেষ্টার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সাইপ্রাস থেকে রওনা হয়েছিল স্প্যানিশ জাহাজ ‘ওপেন আর্মস’।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেলে গাজা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছায় জাহাজটি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইন্টারনেটে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে গাজা উপকূলের জেটিতে নোঙর করা জাহাজটি থেকে ক্রেন দিয়ে লরিতে ত্রাণের মালামাল বোঝাই করতে দেখা গেছে।
পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় বিপর্যস্ত দেশটি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির বাসিন্দাদের জন্য সমুদ্রপথে সহায়তা পৌঁছাতে গাজা উপকূলে এই জেটি নির্মাণ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজায় আকাশ ও স্থলপথে সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ায় সমুদ্রপথকে বেছে নেয়া হয়েছে। তারই প্রথম চেষ্টায় গাজা উপকূলে পৌঁছায় জাহাজ ‘ওপেন আর্মস’।
সংযুক্তহ আরব আমিরাতের সহায়তায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) এই খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে চাল, ময়দা, লেবু, টিনজাত সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার।
ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর আগে দারিদ্র্য ও বেকারত্বপীড়িত গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্থিনির এক তৃতীয়াংশই ত্রাণের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। স্বাভাবিক অবস্থায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ সীমান্ত দিয়ে উপত্যকায় ত্রাণের সরবরাহ পৌঁছাত।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর স্থল সীমান্ত দিয়ে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ কিছুদিন বিমান থেকে উপত্যকায় ত্রাণ ফেলেছে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি তেমন লাভজনক হয়নি।
ফলে কয়েক দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং এ লক্ষ্যে উপত্যকায় শিগগিরই একটি অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছেন মার্কিন সেনারা। এ কারণে গাজা উপকূলে ওপেন আর্মসের আগমনকে সেখানে জলপথে ত্রাণ সরবরাহের ‘ট্রায়াল’ বলে মনে করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় রওনা হওয়ার আগে সাইপ্রাস উপকূলে জাহাজটি তল্লাশি করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
ওপেন আর্মস গাজা উপকূলের কাছে নোঙ্গর করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় ওয়ার্ল্ড সেন্টার কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষ নির্বাহী জোসে অ্যান্দ্রেজ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লেখেন, ‘আমরা পেরেছি!’
তিনি আরো জানান, সামনের সপ্তাহগুলোতে গাজায় আরো সরবরাহ পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, বহু দশক ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যা, নিপীড়ন, ভূমি দখল ইত্যাদি অনেক অপরাধের প্রতিবাদে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ইহুদি বসতিতে হামলা চালায় গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৩ হাজার। নিহত ও আহতদের মধ্যে একটি বড় অংশই নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং বেসামরিক লোকজন।