ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪ ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ
দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এরমধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী গ্রামে বসবাস করেন। উদ্বেগের কারণ হলো দেশের শতকরা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ জানেই না তারা রোগটিতে আক্রান্ত। এই রোগ প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ২০৪৫ সালে দেশে রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের অভাব হলে কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গলে রক্তের গ্লুকোজ দেহের বিভিন্ন কোষে প্রয়োজনমতো ঢুকতে পারে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিকেই ডায়াবেটিস বলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস একবার হলে সারা জীবন থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অন্ধত্ব, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, স্ট্রোক, মাড়ির রোগ ও পঙ্গুত্বের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের; টাইপ-১ ও টাইপ-২। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সিদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস দেখা যায়। এ ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন নিতে হয়। দেশে টাইপ-১ রোগীর সংখ্যা কম। প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রোগী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের শরীরে ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকে অথবা ইনুলিনের ঘটতি থাকে। এ ধরনের রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। কারও কারও ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ ও ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
দেশে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ডায়াবেটিস পরিস্থিতি জানতে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ‘সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শাখা যৌথভাবে একটি সমীক্ষা করেছে। এ কাজে সহায়তা করছেন সমাজে ধর্মীয় নেতা হিসাবে পরিচিত মসজিদের ইমামরা।
২০২২ সালের আগস্ট ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১২ মাস দেশের আটটি উপজেলায় সমীক্ষাটি চালানো হয়। এ জন্য দৈবচয়ন ভিত্তিতে দেশের আটটি উপজেলা বেছে নেওয়া হয়। এলকাগুলো হলো- মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও শিবালয়, নরসিংদীর মনোহরদী ও রায়পুরা, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ধানবাড়ি ও সখীপুর। সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং সম্পর্কিত অসংক্রামকি রোগের প্রকোপ রয়েছে। এগুলো মূলত জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য করা যায়।
সংশ্লিষ্ট উপজেলার দেড় হাজার কেন্দ্রে ১২ হাজার মানুষের ওপর সমীক্ষাটি করা হয়। এরমধ্যে ১০ হাজার ২২৩ জনের ডায়াবেটিস ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়। এতে অংশ নেওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে ৬ হাজার ৭০৪ জন নারী (৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং ৩ হাজার ৫১৯ জন (৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ) পুরুষ ছিলেন। তাদের গড় বয়স ছিল ৪৩ দশমিক ৬ বছর। ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতাদের বয়স ৪০ বছরের উপরে। উত্তরদাতাদের প্রায় ৮৮ দশমিক ৬ শতাংশ নিম্ম এবং মধ্যম আয়ের গোষ্ঠীভুক্ত। ৪২ দশমিক ৬ শতাংশের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশ গৃহিণী ছিলেন।
অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ তামাক ব্যবহার করেন। ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশ দৈনিক পাঁচটি শাকসবজি বা ফল খান না। ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ শারীরিক পরিশ্রম করেন না এবং ২০ দশমিক ৬ শতাংশের ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস ছিল।
ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ‘সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের প্রকল্প পরিচালক ডা. বিশ্বজিৎ ভৌমিক বলেন, ‘ডায়াবেটিস-সেবা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এবং রোগটি প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে ডায়াবেটিক সমিতি ধর্মীয় নেতাদেরও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।’
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল পরিচালক (একাডেমি) এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান বলেন, সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে এ রোগের প্রকোপ শতকরা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি কায়িক পরিশ্রম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান বলেন, ‘ডায়াবেটিস আজীবনের রোগ। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা মেনে কাজকর্ম, বিশ্রাম ও ঘুমের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
প্রতিবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি’র (বাডাস) ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সমিতির অন্যান্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত অধিভুক্ত সমিতিগুলোও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।