বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জারি করা হয়েছে বন্দরের নিজস্ব দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘অ্যালার্ট- ৩’।
শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলার পর বন্দর অ্যালার্ট-৩ জারি করে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে খালি করা হচ্ছে সবক’টি জেটি।
এজন্য বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে রোববার দিনের প্রথম জোয়ারের সময় বহির্নোঙরে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে ৩ টি কন্ট্রোল রুম।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। খুলেছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক রাত ১১ টার দিকে বলেন, ‘আমরা ঘূর্ণিঝড় রেমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। সকালে সব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে একবার প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এরপর আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বিপদ সংকেত জারির পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণে রাত ১১ টার দিকে বন্দরের দুর্যোগ বিষয়ক এডভাইজরি কমিটির জরুরি বৈঠক শুরু হয়েছে।’
তিনি জানান, ওই বৈঠকের আগেই অবশ্য সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-তিনটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে যা ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে। জেটি ও হ্যান্ডলিং সরঞ্জামের নিরাপত্তার স্বার্থে জেটিতে থাকা সব জাহাজকে রোববার দিনের প্রথম জোয়ারে বহির্নোঙরে চলে যেতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পণ্য লোড আনলোড কার্যক্রম বন্ধ করা হচ্ছে। ক্রেনসহ সব হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট প্যাক করা হচ্ছে যাতে বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বন্দর থেকে ডেলিভারি কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। চ্যানেল, জাহাজ, জেটি, ইয়ার্ড, শেড, হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তায় অতিরিক্ত লোকবল মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম।
বন্দর সচিব আরও জানান, চ্যানেল থেকে ছোট আকারের নৌযানগুলোকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লাইটারসহ ছোট আকারের নৌযানগুলোকে শাহ আমানত সেতুর দিকে উজানে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং করেছে। ঝুকিপূর্ণ বাসিন্দাদের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন জনগণকে তথ্যসেবা দিতে নগরীর দামপাড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসে জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে।
চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, ‘কন্ট্রোর রুম থেকে ২৪ ঘন্টা তথ্য সেবা দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং শুরু করেছি যাতে ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরের টাইাগারপাসের চসিক কার্যালয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, দুর্যোগ মোকালো ও চিকিৎসাসেবা দিতে ২৯০ টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব টিম কাজ করবে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীন সব চিকিৎসক কর্মচারিকে রোববার বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।