সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য ও ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে এশিয়ার উন্নত দেশ জাপান। লাভ হচ্ছে না কোনো। নিঃসঙ্গতা দিন দিন বেড়েই চলেছে দেশটিতে। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, মৃত্যুর সময়ও কাউকে পাশে পাচ্ছেন না অনেকেই।
নিজের বাড়িতেই মারা গেছেন, অথচ কেউ জানেনই না। মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে মৃত্যুর বেশ কিছু দিন পর। অবিশ্বাস্য হলেও নিঃসঙ্গতার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে জাপানে।
শনিবার জাপানের ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিজ বাড়িতে একাকী মারা গেছেন। এর মধ্যে প্রায় চার হাজার জনকে মৃত্যুর এক মাসের বেশি সময় পর উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের ওই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে জাপানের বিপুলসংখ্যক প্রবীণ জনসংখ্যার একাকী জীবনযাপন ও মৃত্যুর বিষয়টি জানা গেছে।
জাতীয় পুলিশ সংস্থার সংগৃহীত এ বছরের প্রথম ছয় মাসের তথ্যানুযায়ী, একাকী জীবনযাপন করা মোট ৩৭ হাজার ২২৭ মানুষকে তাদের নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিজ বাড়িতে একাকী মারা যাওয়া মানুষদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশকে মৃত্যুর একদিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রায় তিন হাজার ৯৩৯টি মরদেহ মিলেছে মৃত্যুর এক মাসেরও বেশি সময় পরে। এছাড়া ১৩০টি মরদেহ পাওয়া গেছে মৃত্যুর অন্তত এক বছর পর। একাকী মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে সাত হাজার ৪৯৮ জনের বয়স ৮৫ বছর বা তারও বেশি। এছাড়া পাঁচ হাজার ৯২০ জনের বয়স ৭৫ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে এবং পাঁচ হাজার ৬৩৫ জনের বয়স ৭০ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে।
জাপানের সরকারি টিভি নেটওয়ার্ক এনএইচ জানিয়েছে, যে মরদেহগুলোর খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি, সেগুলো খুঁজে বের করতে পুলিশ সংস্থাটি তাদের অনুসন্ধানের তথ্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ এ বছরের এপ্রিলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জাপানে একাকী বসবাসকারী প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা আগামী ২৫ বছরের মধ্যে অনেক বৃদ্ধি পাবে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে একা একা জীবন কাটাতে হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে জাপানে এক কোটি আট লাখ বয়স্ক মানুষ নিঃসঙ্গভাবে একা বসবাস করবেন। যা দেশটির সব পরিবারের ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।
পুলিশের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাপানি তরুণ-তরুণীদের দেরিতে বিয়ে করার প্রবণতা বা অনেকের সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এদিকে প্রবীণদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ায় জনসংখ্যা সংকটের মুখে পড়েছে জাপান। সেখানে চিকিৎসা ও কল্যাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বিপরীতে কমছে শ্রমশক্তি। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রবীণ জনসংখ্যার পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান।