ডিসেম্বর ১, ২০২৩ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
ইসলামে জুমার দিনকে সপ্তাহের সেরা দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘দিবসগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো জুমার দিন এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত’ (ইবনে মাজাহ : ১০৮৪)। এ দিনে যেসব আমলের কথা কুরআন-হাদিসে পাওয়া যায় তা তুলে ধরেছেন-সানাউল্লাহ মুহাম্মদ কাউসার
আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার’ (সূরা জুমুআ, আয়াত : ০৯)।
সতেরোটি নির্দেশনা
গোসল করা, (বুখারি :)। মিসওয়াক করা, (ইবনে মাজাহ : ১০৯৮)। উত্তম পোশাক পরিধান করা, (ইবনে মাজাহ : ১০৯৭,)। সুগন্ধি ব্যবহার করা, (বুখারি : ৮৮০)। মসজিদে প্রবেশের পর অন্য মুসল্লিদের ফাঁক করে বা গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যাওয়া, (বুখারি : ৯১০)। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা, (বুখারি : ৯১১)। সালাতের জন্য কোনো একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যাবে, সেখানেই সালাত আদায় করা, (আবু দাউদ : ৮৬২)। নির্ধারিত নামাজ আদায় করা। এমনকি ফরজ সালাতের আগে ও পরে দুই-চার রাকাত করে নফল সালাত আদায় করা, (বুখারি : ৯৩০)। গায়ে তেল ব্যবহার করা, (বুখারি : ৮৮৩)। হেঁটে মসজিদে গমন করা, (মুসলিম : ১৪০০)। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধূমপান না করা, (বুখারি : ৮৫৩)। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা পরিবর্তন করে বসা, (আবু দাউদ : ১১১৯)। ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা, (আবু দাউদ : ১১১০, ইবনে মাজাহ : ১১৩৪)। খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা, (আবু দাউদ : ১১০৮)। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া বা তেলাওয়াত না করা, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে (আবু দাউদ : ১৩৩২)। ইমামের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত নীরবতা অবলম্বন করা। তবে কেউ কথা বলতে দেখলে তাকে চুপ করতে বা বারণ করতেও হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে (আবু দাউদ : ১১১২) বেশি বেশি প্রার্থনা (দুআ) করা, (বুখারি : ৯৩৫)। ওই কাজগুলোর যথাযথ পালনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জন্য এ জুমা ও তার পূর্ববর্তী জুমার মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)।
দরুদ পড়া
জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার ব্যাপারে রাসূল (সা.)-এর নির্দেশনা রয়েছে। ‘তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয় (আবু দাউদ : ১০৪৭)। এছাড়া, মহান রব স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের তাগিদ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন-‘আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবির প্রতি দরুদ পাঠান। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠাও’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫৬)।
সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা
রাসূল (সা.) বলেছেন-‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ইমানের) নূর এ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে’ (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী : ৫৯৯৬)।
এ ব্যাপারে হাদিসে চমৎকার এক ঘটনা পাওয়া যায়। একদা এক লোক সূরা কাহাফ পাঠ করছিল। তার পাশেই দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ইতোমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিল। মেঘটি লোকটির নিকটবর্তী হতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চমকাতে আরম্ভ করল। অতঃপর যখন সকাল হলো, তখন লোকটি রাসূল (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল। তা (শুনে) তিনি বললেন, ‘ওটি প্রশান্তি ছিল, যা তোমার কুরআন পড়ার দরুন অবতীর্ণ হয়েছে’ (বুখারি : ৫০১১)।
বেশি বেশি ইস্তেগফার করা
এ দিন বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দোয়া করা উচিত। হাদিসে এসেছে-‘জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময় কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। (বুখারি : ৯৫৩)।