সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩ ১:৩৫ অপরাহ্ণ
বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত বা উম্মতে মুহাম্মাদির কিছু বিশেষ প্রাপ্তি রয়েছে, যা অন্যান্য নবীর উম্মতেরা পাননি। তন্মধ্যে একটি হলো জুমার দিন। হাদিস শরিফে বিশেষ এই দিনের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতকে জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অজ্ঞ রেখেছেন।
ইহুদিদের ফজিলতপূর্ণ দিবস ছিল শনিবার। খ্রিস্টানদের ছিল রোববার। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠালেন এবং জুমার দিনের ফজিলত দান করলেন। ক্রমানুসারে শনি ও রোববারকে শুক্রবারের পরে রাখলেন। দুনিয়ার এই ক্রমানুসারের মতো কেয়ামতের দিনও ইহুদি-খ্রিস্টানরা উম্মতে মুহাম্মাদির পড়ে থাকবে। আমরা উম্মত হিসেবে সবার শেষে এলেও কেয়ামতের দিন সব সৃষ্টির আগে থাকব। (মুসলিম : ১৪৭৩)
জুমার দিন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর যতদিন সূর্য উদিত হবে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। এ দিনে আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছিল। সর্বশেষ কেয়ামত সংঘটিত হবে শুক্রবার দিনে। (মুসলিম : ৮৫৪)
জুমার দিনকে সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিন দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। (ইবনে মাজা : ১০৮৪)
জুমআর দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল। এগুলো মধ্যে একটি আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে জুমআর দিনে ‘সূরা আল কাহাফ’ তেলাওয়াত করা। পবিত্র কোরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮ নম্বর সূরা এটি। যদি কেউ সম্পূর্ণ সূরাটি তেলাওয়াত করতে না পারে তবে সে যেন এ সূরার প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করে।
জুমার দিনে ‘সূরা আল কাহাফ’ তেলাওয়াতের ফজিলত
> যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ হতে আগামী জুমাহ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাত ২১৭৫)
> যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মুসলিম, মিশকাত)
> ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পাঠ করবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নূর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি উহার শেষ দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না’। (সিলসিলায়ে সহিহা -২৬৫১)
> যে ব্যক্তি জুমার রাত্রিতে সূরা আল কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে’। (সহিহ তারগীব ওয়াত তারহীব – ৭৩৬)
> জুমার দিনে সূরা আল কাহফ পাঠ করলে কেয়ামত দিবসে তার পায়ের নীচ থেকে আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত নূর আলোকিত হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ হবে। (আত তারগীব ওয়াল তারহীব- ১/২৯৮)
> জনৈক ব্যক্তি সূরা আল কাহফ পড়ছিল। তখন লোকটি তাকিয়ে দেখতে পেল একখণ্ড মেঘ তাকে পরিবেষ্টন করে নিয়েছে। বারা ইবনু আযিব বর্ণনা করেছেন যে, লোকটি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর কাছে বললেন। তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে অমুক তুমি সূরাটি পড়তে থাক। কারণ এটি ছিল আল্লাহর রহমাত বা প্রশান্তি যা কোরআন তেলাওয়াতের কারণে বা কোরআন তেলাওয়াতের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিল। (মুসলিম- ১৭৪২)
অর্থাৎ এটা হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওই ‘সাকীনা’ বা প্রশান্তি যা কোরআন পাঠের সময় অবতীর্ণ হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো পবিত্র কোরআনের সূরা আল কাহাফ (১৮ নম্বর সূরা) পড়ার সময় কখন?
উত্তর: বৃহস্পতিবার দিন শেষে সূর্য ডোবার পর থেকে শুক্রবার সূর্য ডোবা পর্যন্ত যেকোনো সময় সূরা আল কাহাফ পাঠ করলে হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে, ইনশাআল্লাহ!
উলেখ্য যে, তা এক বৈঠকে পূরা সূরা পড়া জরুরি নয়। বরং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত একাধিক বৈঠকে ভাগ ভাগ করে উক্ত সূরা পড়ে শেষ করলেও একই সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ!
ইয়া রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা! সব মসলিম উম্মাকে জুমার দিনে সূরা আর কাহাফ তেলাওয়াতের তাওফিক দান করুন। আমিন।