তফশিল ঘোষণা হতে পারে আজ

তফশিল ঘোষণা হতে পারে আজ

জাতীয় স্লাইড

নভেম্বর ১৫, ২০২৩ ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল আজ ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার মাধ্যমে তফশিল ঘোষণা করবেন। ওই ভাষণ সম্প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। আজ বিকালে সিইসির বক্তব্য বিটিভিতে ধারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সিইসির ভাষণের খসড়াও তৈরি করেছে ইসি সচিবালয়। তফশিল চূড়ান্ত করতে আজ বিকালে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। মঙ্গলবারও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। তফশিলের বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখছে কমিশন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আজ তফশিল ঘোষণা হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের জোর আভাস পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে ৬ বা ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন নির্ধারণ হতে পারে। এদিকে তফশিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচন ভবনে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যে এ তফশিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইসি। শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে শর্তহীন সংলাপ অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি দেওয়ার পরপরই তফশিলের বার্তা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, ওই চিঠি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকেই ভোটের পথে এগোচ্ছেন। তফশিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপরদিকে তফশিল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পূর্বঘোষিত দুদিনের অবরোধ কর্মসূচিও আজ শুরু হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা কবে-জানতে চাইলে মঙ্গলবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, কবে কীভাবে কখন তফশিল ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়টি বুধবার সকালে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আপনাদের (গণমাধ্যমে) অবহিত করব। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কমিশন সভার নোটিশ পাননি বলে জানান তিনি।

ইসি সচিব বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী সিইসি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার মাধ্যমে তফশিল ঘোষণা করবেন। ১৯৭০ সাল এবং এর পরবর্তী যত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, এর প্রতিটির তফশিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভাষণের মাধ্যমে জাতি এবং বিশ্ববাসীকে অবহিত করেছেন। এবারও সেই রেওয়াজ অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠির কোনো প্রভাব তফশিল ঘোষণার ক্ষেত্রে পড়বে কি না জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘অবশ্যই না। কোনো প্রভাব পড়বে না।’ তিনি বলেন, চিঠিটি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে কি না, সেটা কমিশন অবহিত নয়। কারণ, চিঠি কমিশনের কাছে আসেনি। কমিশন নিজস্ব গতিতে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার আলোকে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী এগিয়ে যাবে।

অনেক রাজনৈতিক দল তফশিল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানামতে, সত্যিকার অর্থে এ জাতীয় হুমকি-থ্রেট নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা তারা প্রতিপালন করবেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত আমি জানি, তারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছেন।

সংবিধান অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই সময় ধরে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন তার প্রায় সব কাজই গুছিয়ে এনেছে। রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ৯ নভেম্বর সাক্ষাৎ করে ইসি তার নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি অবহিত করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা মঙ্গলবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর এক নির্বাচন কমিশনার আজ তফশিল ঘোষণা হবে-এমনটি জানান। বিটিভিতে সিইসির বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে তফশিল ঘোষণা হতে পারে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার বৈঠকে সিইসির ভাষণের খসড়ার ওপর তারা মতামত দেন। অপরদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরেকজন নির্বাচন কমিশনার জানান, সিইসির বক্তব্য রেকর্ড করে বিটিভিতে সম্প্রচার করা হতে পারে। সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই কমিশনার আরও জানান, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তারা বিবেচনা করছেন। বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো নির্বাচনবিরোধী দলগুলো চাইলে ভোটে অংশ নিতে পারে-সেই পথ খোলা রেখে তফশিল ঘোষণা করতে চায় কমিশন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন নির্ধারিত ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বিবেচনা করে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ ৩৯টি দল অংশ নিয়েছিল। এবারও কমিশন সেই দিকগুলোও বিবেচনা করছে।

তফশিল স্থগিত রাখতে সিইসিকে লেবার পার্টির স্মারকলিপি : মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে এসে সিইসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে লেবার পার্টি। পরে দলটির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তফিজুর রহমান ইরান রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত তফশিল স্থগিত রাখার আহ্বান জানান। মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় দেখা যায়, সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার মতো পরিবেশ বর্তমানে না থাকায় রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় নির্বাচন হলে সেটা হবে অগ্রহণযোগ্য, একপেশে, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিরোধপূর্ণ নির্বাচন; যা সংবিধান পরিপন্থি। এ সময় তিনি ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা থেকে মুক্তি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দলীয় কার্যালয়গুলো ব্যবহারের সুযোগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপ, দমন, পীড়ন ও নির্বিচারে গণগ্রেফতার বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *