তেলআবিবের মূল টার্গেট গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফাহ

তেলআবিবের মূল টার্গেট গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফাহ

আন্তর্জাতিক

মে ১১, ২০২৪ ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাঝেই গাজায় আবারও শুরু হয়েছে ইসরাইলের আগ্রাসন। এবার তেলআবিবের মূল টার্গেট গাজার ‘লাইফলাইন’ রাফাহ। অঞ্চলটিতে ইতোমধ্যেই বিরামহীন গোলাবর্ষণ করেছে ইসরাইল। আরও বড় ধরনের হামলা চালাতে সীমান্তে বিপুলসংখ্যক ট্যাংকসহ যুদ্ধসরঞ্জাম ও সেনা জড়ো করছে দেশটি। এরই মধ্যে জানা গেছে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলার মুখে রাফাহ ছেড়েছে এক লাখ ফিলিস্তিনি। শুক্রবার জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এএফপি, রয়টার্স।

গাজার সশস্ত্র বাহিনী হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা রাফার পূর্বাঞ্চলে আক্রমণ করেছে। এতে সেখানকার বেশ কিছু এলাকা পুরোপুরি জনশূন্য হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় পানি এবং খাবার ফুরিয়ে এসেছে। কারণ রাফাহ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া রাফাহ ও কারেম সালেম ক্রসিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজায় বাইরে থেকে সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহও এখন হুমকির মুখে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউর যোগাযোগ কর্মকর্তা লুইস ওয়াটারিজ বলেন, ২৪ ঘণ্টায় রাফায় ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী, যা ওই এলাকায় গত দুই সপ্তাহে চালানো হামলার সমান।

গাজায় ওসিএইচএর সাব-অফিসের প্রধান জর্জিওস পেট্রোপোলোস বলেছেন, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পরিস্থিতি ‘জরুরি অবস্থার আরও অভ‚তপূর্ব পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। রাফাহ থেকে ভিডিও-লিংকের মাধ্যমে জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রাফায় ইসরাইলের উচ্ছেদে ১১০,০০০-এর বেশি বাস্তুচ্যুতকে উত্তরে সরে যেতে বাধ্য করছে।

এদের মধ্যে বেশির ভাগই এমন লোক যারা পাঁচ বা ছয়বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।’ অন্যদিকে গাজার রাফায় ইসরাইলি স্থল হামলাকে ঘিরে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রাফায় ইসরাইলের হামলা ‘মানবিক বিপর্যয়ের’ দিকে পরিচালিত করবে। জাতিসংঘের কর্মকর্তা জর্জিওস পেট্রোপোলোস সতর্কবার্তায় বলেন, ‘দক্ষিণ গাজার চিকিৎসা ও মানবিক কর্মীদের চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যদি আরও সহায়তা না আসে তাহলে আগামী শনিবারের মধ্যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ত্রাণ শেষ হয়ে যাবে।

জ্বালানির সংকট গাজাজুড়ে চিকিৎসা সুবিধা, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’ অন্যদিকে পরমমিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত হওয়ার ঘোষণার পর বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে ইসরাইল। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতিনয়াহু। ইসরাইল একাই দাঁড়াতে পারে। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা একাই যুদ্ধ চালিয়ে যাব। দরকার হলে আমরা ‘নখ’ দিয়ে যুদ্ধ করব। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা প্রত্যাখ্যান করতে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের কথা স্মরণ করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৭৬ বছর আগে স্বাধীনতাযুদ্ধে অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। পাশাপাশি ছিল অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রবল চেতনা, বীরত্ব ও ঐক্যের জোর থাকায় ওই যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে রাফায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। অন্যদিকে রাফাহ হামলায় ইসরাইল কখনোই হামাসকে হারাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছে বাইডেন প্রশাসন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মুখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল জোরালোভাবেই হামাস গোষ্ঠীকে চাপের মুখে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। সেটাই যথেষ্ট ছিল। নতুন করে রাফায় আগ্রাসন কেবল বেসামরিকদের ঝুঁকিই বাড়াবে; এর বেশি কিছু না।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাফাহ আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সাহায্য করছে না। তবে তার মানে এই না যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পাশে নেই বা হামাসের নির্মূল চায় না। আমরা এখনো ইসরাইলকে নিয়ে আশাবাদী। আমরা শুধু রাফাহ আগ্রাসনের বিকল্প নিয়ে আলোচনা করছি।’ অন্যদিকে গাজা উপত্যকায় বহু আকাক্সিক্ষত যুদ্ধবিরতির জন্য নিজেদের তরফে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবই হামাস করেছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠীটি। তাদের মতে, এখন শুধু ইসরাইল চাইলেই সেখানে যুদ্ধবিরতি সম্ভব। শুক্রবার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন ফাতাহ এবং অন্যান্য অংশীদারের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে হামাস। মিসরের রাজধানী কায়রোতে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত সংলাপ শেষে শুক্রবার কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন হামাসের প্রতিনিধিরা।

বার্তায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আমাদের প্রতিনিধিরা দোহার উদ্দেশে কায়রো ত্যাগ করেছেন। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে (গাজায় যুদ্ধবিরতি) যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল, দখলদার শক্তি (ইসরাইল) তা বাতিল করেছে এবং প্রস্তাবের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় যুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। আমরা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছি এবং এখান থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের নেই। তাই বল এখন সম্পূর্ণভাবে দখলদার শক্তির হাতে। তারা যদি চায়, তাহলেই গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্ভব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *