সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩ ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ
রাজশাহী অঞ্চলে গত মৌসুমে পাটের মনপ্রতি দাম ছিল তিন হাজার টাকা থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এবার এক হাজার ৯০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা মন পাট বিক্রি হচ্ছে। পাটকল মালিকরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম নির্ধারণ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাটচাষিরা। হাট-বাজারে কাঙ্ক্ষিত দামে পাট বিক্রি করতে না পেরে তারা হতাশ। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।
পাটচাষিরা জানান, এবার পাট উৎপাদনে সব পর্যায়ে খরচ বেড়েছে। কিন্তু ন্যায্য দাম মিলছে না। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দায় বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের চাহিদা কিছুটা কমেছে। এ কারণে বাংলাদেশেও পাটের দাম কিছুটা কম। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, জেলায় গত মৌসুমে দাম ভালো পাওয়ায় এবার ৪৪২ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এবার ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে বিশ্বমন্দার কারণে পাটকলগুলোয় পাটের চাহিদা কমেছে। তিনি আরও বলেন, পাট পচনশীল পণ্য নয়। চাষিদের এখনই পাট বিক্রি না করতে বলেছি। আগামী দিনে দাম বাড়বে। কারণ কয়েক মাস ঘরে পাট রাখলে কোনো সমস্যা নেই। এদিকে, পাটের চাহিদা ও দাম কমে যাওয়ায় বিকল্প শস্য আবাদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
পবা, মোহনপুর, বাঘা, চারঘাট, বাগমারা, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর এলাকায় পাটের চাষ হয়। এসব এলাকার মাটি উর্বর ও পাট চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এছাড়া পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানির পর্যাপ্ততা এসব এলাকায় রয়েছে। যদিও চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চাষিদের বেশ সমস্যা হয়েছে। খাল বিল ডোবা পুকুর ভাড়া নিয়ে চাষিরা পাট জাগ দিয়েছেন। এতে করে পাট উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। দুর্গাপুর উপজেলার সাহিবাড়ি গ্রামের কৃষক আলম হোসেন জানান, জরুরি প্রয়োজনে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু পাটের দাম আশানুরূপ নয়। এবার পাট উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ধার-দেনা করে পাট চাষ করেছি। বিক্রি করে ধার-দেনা শোধ করতে হবে। বাগমারার গোয়ালকান্দি গ্রামের পাটচাষি মজিবুর রহমান শাহ বলেন, বানেশ্বর, নওহাটা, কেশরহাট, দুর্গাপুর ও তাহেরপুরে পাটের বড় মোকাম রয়েছে। গতবার যে পাট প্রতি মন তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার সেই পাটের দাম এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় নেমেছে। আড়ত থেকে বলা হচ্ছে-পাটের চাহিদা নেই। পাট নিয়ে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি।
দুর্গাপুর, মোহনপুর ও পবা মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পাটের দাম কমে যাওয়ায় অনেক চাষি জমিতেই পাট রেখে দিয়েছেন। আবার কেউবা পাট উৎপাদন করে মাচা করে ঘরে রাখছেন বেশি দামের আশায়। মোহনপুরের বসন্তকেদার গ্রামের পাটচাষি সুফল মণ্ডল ও সাধু শেখ বলেন, এবার পাট কেনাকে কেন্দ করে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে হাট-বাজার ও আড়তে। তাদের অভিযোগ-গত কয়েক বছর দেখেছি পাটের ব্যাপক চাহিদা। স্থানীয় পাটের ওপর নির্ভর করে রাজশাহীতে বেশ কয়েকটি জুটমিলস চলছে। এছাড়া ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার পাটকলগুলো থেকে লোকজন রাজশাহীতে পাট কিনে নিয়ে গেছেন। মাঝখানে আড়ৎদার, ফড়িয়া ও ব্যাপারিরাও পাট কিনে চালান করেন। কিন্তু সবাই এবার সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কম দিচ্ছেন।
পাটের চালানি ব্যাপারি মেহের আলী জানান, পাটকল মালিকরা এবার বেশি দাম দিচ্ছে না। পাটকলে গিয়ে ন্যায্য দাম না পেয়ে পাট ফিরিয়ে এনেছি কয়েকবার। পাটকলে বেশি দাম না পেলে আমরা বেশি দামে পাট কিনব কীভাবে? বানেশ্বর মোকামে আসা ব্যাপারি সোলাইমান আলী বলেন, পাটকল মালিকদের তারা বাকিতে পাট দেন। ৫০ কেজির এক গাইট পাট জুটমিলে পৌঁছাতে তাদের খরচ ১৫০ টাকা। চালানি ব্যাপারিরা বিভিন্ন পাটকলের কাছে কোটি কোটি টাকা পাবেন। মিল মালিকরা নানা অজুহাতে টাকা পরিশোধ করছেন না। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ফলে তারাও বেশি দামে পাট কিনতে পারছেন না। এতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাটচাষিরা।