দেশের ৫৩৮ থানায় কার্যক্রম শুরু

দেশের ৫৩৮ থানায় কার্যক্রম শুরু

জাতীয় স্লাইড

আগস্ট ১১, ২০২৪ ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সারা দেশে আরও ১৭৭টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ নিয়ে মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জের ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত এসব থানা চালু হয় বলে খুদে বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের গণমাধ্যম শাখা। এতে বলা হয়, ১১০টি মেট্রোপলিটন থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬০৯ থানার মধ্যে ৩৬১ থানার কার্যক্রম শুরুর কথা জানানো হয়। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে আমার প্রথম কাজ হবে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পুলিশ সদস্যদের মাঠে রাখা।’ তিনি বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষায় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের রাস্তায় থাকতে হবে। রোববার আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে মাঠে নামব।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, ডিএমপির ৫১টি থানার মধ্যে ৪৬টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দ্রুতই বাকিগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, যেসব থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেগুলোতে উপস্থিতির হার ৮০ ভাগ। শিগগিরই শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোববার থেকেই ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা রাস্তায় নামবেন। তবে সব ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে একসঙ্গে নামানো সম্ভব হবে না। ধীরে ধীরে সবাই কাজে যোগ দেবেন।

সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপর পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যরা অনেকটা আÍগোপনে চলে যান। ফলে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি কার্যালয়সহ বিভিন্ন কার্যালয়ে কর্মকর্তারা আসতে শুরু করেছেন। তবে দাপ্তরিকভাবে থানার কার্যক্রম চালু দেখালেও সক্রিয় হয়নি নিয়মিত অপারেশনাল কার্যক্রম। এই অবস্থায় পুলিশের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

রাজধানীর অধিকাংশ থানা চালু হলেও পুলিশ সদস্যদের আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। এ কারণে এখনো শুরু হয়নি টহল কার্যক্রম। ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ নথিভুক্ত হলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা। থানাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সিনিয়রদের নির্দেশনার পর থানায় অবস্থান করছি। নিরাপত্তাজনিত কারণে পুরোদমে কাজে যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোনো অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাইরে যাওয়া দরকার হলে আমরা যাচ্ছি না। কারণ, বাইরে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে? ঘটনার দিন (৫ আগস্ট) কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরেছি। সেদিন সিনিয়রদের কোনো ভূমিকা ছিল না আমাদের রক্ষায়। এজন্য আমাদের অধিকাংশ সহকর্মী এখনো ফেরেনি। ফলে থানা চালু বলা হলেও ভুক্তভোগীদের সেবা দেওয়ার পরিস্থিতি হয়নি এখনো।

রাজধানীর বিমানবন্দর থানা ৩ দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার থেকে পুলিশ সদস্যরা ফিরতে শুরু করেছেন। এয়ারপোর্টে এপিবিএন পুলিশ সদস্যদের এখনো কর্মস্থলে যোগদান করতে দেখা যায়নি। বিমানবাহিনীর সদস্যরাই হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন।

সরেজমিন বিমানবন্দর থানায় গিয়ে পুলিশের তেমন কোনো সদস্য দেখা না পেলেও সেনাবাহিনী এবং আনসার বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়। সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার জয়নাল জানান, থানা কার্যক্রম শুরু করতে পুলিশকে সহায়তা দিতে শুক্রবার থেকে তারা থানায় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিমানবন্দর থানায় ১২০ জন পুলিশ সদস্যরে মধ্যে ১১৭ জন জয়েন করেছেন। বিভিন্ন কাজে তারা থানার আশেপাশেই আছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা কতদিন অবস্থান করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করবেন।

এদিকে থানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি থানা এলাকায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। শনিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব জেলা পুলিশ সুপার ও থানার অফিসার-ইনচার্জদের (ওসি) এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির প্রধান লক্ষ্য হবে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এ লক্ষ্যে কমিটি একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কমিটির আওতাধীন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ টহলের মাধ্যমে হানাহানি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেবে। এলাকায় বিদ্যমান সামাজিক সংঘাত, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নিরসনে ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেবে।

কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আরও বলা হয়, স্থানীয় জনসাধারণের জীবন, সম্পদ, স্থাপনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়সহ এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা নিয়মিত তদারকি করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এলাকার মাদক, ইভটিজিং ইত্যাদি সমস্যা নিরসনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া, স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো ও দল-উপদলের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসন ও সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
কমিটি গঠনের বিষয়ে পুলিশ জানায়, স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এই কমিটির আকার নির্ধারণ করবেন। গ্রহণযোগ্য আইনজীবী বা বিচারক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, সিনিয়র সিটিজেন, সর্বজন সমাদৃত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা, স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের সভাপতি/সেক্রেটারি, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী এবং এনজিও প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *