ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নির্বাচন কমিশনের চিঠির পরপরই মাঠপ্রশাসনে রদবদল ও প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শনিবার ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে মাঠপর্যায় থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে বদলি করা হয়েছে ময়মনসিংহে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার ভিত্তিতে এ রদবদল হয়। এদিকে সংসদ সচিবালয়ে সংযুক্ত এক উপসচিবকে সুনামগঞ্জের ডিসি করা হয়েছে। তবে শনিবার পর্যন্ত ইউএনও এবং ওসিদের বদলির প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে এসে পৌঁছেনি।
৫ ডিসেম্বরের পর ইউএনও, ওসি পর্যায়ে বদলি শুরু হতে পারে। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ওসি ও ইউএনওদের বদলির প্রথম পর্যায়ের প্রস্তাব ইসিতে পাঠাতে হবে।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ভোটের আগ পর্যন্ত এসব পদে ধাপে ধাপে রদবদল চলবে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে কখন কোথায় বদলি করা হবে-সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয় তৈরি করবে। এ সংক্রান্ত তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে হবে। সেই তালিকা দেখে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হলে তাদের বদলির সম্মতি দেবে। তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বদলির আদেশ জারি করবে।
এছাড়াও যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ পাওয়া যায় তাকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনাররা মাঠপর্যায়ে সফরে গিয়ে যে তথ্য পেয়েছেন তার ভিত্তিতে প্রশাসন ও পুলিশে রদবদলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং অঞ্চল পর্যায়ে সফর করেন। তারা মাঠ থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তার ভিত্তিতেই রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশন অনুভব করেছে, এ বদলির দরকার। তাদের যে ফাইন্ডিংস, তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন বসে ৩০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মাঠপর্যায়ের কী ধরনের তথ্য রয়েছে তা জানাননি অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, সব তথ্য তো ওপেনলি বলা হয় না। নির্বাচন কমিশনাররা মাঠপর্যায় থেকে যেসব তথ্য পেয়েছেন, বিভিন্ন প্রার্থী কিংবা বিভিন্ন কোয়াটার থেকে যে তথ্য এসেছে, তার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত। তারা মনে করেছেন যে, বদলি করা প্রয়োজন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করতে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন।
ওই চিঠিতে যেসব ইউএনও একই স্থানে এক বছরের বেশি সময় এবং ওসিরা ৬ মাসের বেশি সময় ধরে রয়েছেন তাদের প্রথম পর্যায়ে বদলির জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই প্রস্তাব পাঠানোর জন্য ৫ ডিসেম্বর সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কয়েকজন ডিসি-এসপিকে প্রত্যাহার ও বদলির জন্যও পৃথক নির্দেশনা দেয় কমিশন। ওই নির্দেশনার পর গতকাল ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমানকে মাঠপর্যায়ে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।
অপরদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে বদলি করে ময়মনসিংহের ডিসি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীকে সুনামগঞ্জের ডিসি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জের ডিসিরা ওই জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন।
অশোক কুমার দেবনাথ আরও জানান, মাঠপ্রশাসন ও পুলিশের বদলির জন্য ইসি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রশাসনে বড় রদবদলে বিশৃঙ্খলা হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, একজন কর্মচারী যে উপজেলা বা জেলায় দায়িত্ব পালন করুক না কেন, তিনি সুষ্ঠুভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রশাসনে বড় রদবদল হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে মন্তব্য করে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, এর দায়ভার ইসি কেন নেবে? এছাড়া কর্মকর্তাদের বদলি করা হলে তাদের যাতায়াতে সরকারের অর্থ ব্যয় হয় বলেও জানান।
এ বিষয়ে ইসির বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সেটা ওই কমিশনার ভালো বলতে পারবেন। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা আমি বলতে পারি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তা: এ নির্বাচনে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করছেন। অনেক প্রার্থী নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে বার্তা দিয়েছি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব নির্বাচন কমিশনে এসেছিলেন, সব বিষয়ে তাদের মেসেজ দিয়ে বলা হয়েছে, কেউ যেন নিরাপত্তার কোনো ঘাটতিতে না ভোগে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এরপরও যদি কারও গাফিলতিতে কিছু হয়, তার বিরুদ্ধে ইসি কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচনে প্রার্থীদের বডিগার্ড দেওয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা সম্ভব হবে না। এত বডিগার্ড দেওয়া যাবে না। তবে, নিরাপত্তার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা যেন তা নিশ্চিত করতে পারে, সেটাই আমাদের কাম্য।
সেনা মোতায়েনের কোনো সিদ্ধান্ত রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি কমিশন মনে করে, সেনা মোতায়েন করতে পারে। তবে, এই মূহূর্তে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই।
নির্বাচনে ২৯ রাজনৈতিক দল: অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দল আছে। তার মধ্যে ২৯টি দল এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এ নির্বাচনে ২৭১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, এ বিষয়ে ইসি কী সিদ্ধান্ত নেবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটা বাছাইয়ের সময় দেখা যাবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন।