নভেম্বর ২, ২০২৩ ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ
নিরামিষজাতীয় খাবার একধরনের সুষম খাদ্য। সুখী ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য কেউ কেউ নিরামিষ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন।
নিরামিষের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ তন্তু, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ ও প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক পদার্থ। এই কারণে নিরামিষভোজী মানুষের মধ্যে উচ্চ কোলেস্টেরলজনিত বা নিম্ন রক্তচাপজনিত রোগ সাধারণত দেখা যায় না।
এমনকি এ ধরনের মানুষদের হৃদ্রোগের আশঙ্কাও কম থাকে। নিরামিষজাতীয় খাবার বেশ সহজপাচ্য। এসব খাবার রান্না করা সহজ, সাশ্রয়ীও বটে। এ কারণেই নিরামিষ আহার শুধু সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং পরিবেশের দিক থেকেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
নিরামিষে মিলবে দীর্ঘায়ু
আয়ুষ্কালকে দীর্ঘায়িত করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে নিরামিষ ভোজন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় আপনি যত বেশি ফল বা সবুজ শাকসবজি রাখবেন, আপনার শরীরে তত কম রাসায়নিক ও বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব তৈরি হবে। এটিই আপনাকে বহুদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করবে।
কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়
আপনি বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, এ কথা সত্যি যে, প্রাণিজ ফ্যাটে আপনার শরীরের কোনো উপকার হয় না। কোলেস্টেরলের প্রায় সবটাই তৈরি হয় প্রাণিজ ফ্যাট থেকে। কারণ, উদ্ভিজ্জ ফ্যাটে কোনো রকম কোলেস্টেরল থাকে না। যদিও কোলেস্টেরল মানুষের কোষের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়, তবু শুধু নিরামিষ খাবারের ওপর বেঁচে থাকলে শরীরের বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ, আমাদের শরীর সবুজ শাকসবজি থেকে নিজের প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল জোগাড় করে নেয়। কোরিয়ার গবেষকেরা তাদের বহু বছরের গবেষণা থেকে এ কথা স্বীকার করেছেন যে সর্বভুক মানুষের তুলনায় নিরামিষাশী মানুষের দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কম থাকে। ফলে তাদের দেহে স্নেহ পদার্থের মাত্রাও অনেকটাই কম।
স্থূলতা ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়
নিরামিষভোজী মানুষেরা পরিমিত মাত্রায় নিজেদের পছন্দসই খাবার খান। তারা কখনোই বেশি পরিমাণে বা আবেগবশত অতিরিক্ত খাবার খান না। এ কারণে নিরামিষভোজী মানুষের দেহে স্থূলতার সমস্যা দেখা যায় না। বেলজিয়ামের পেডিয়াট্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মনে করেন, নিরামিষ মানুষের হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমায়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
আমিষভোজী মানুষেরা প্রায়ই রক্তশর্করার সমস্যায় ভোগেন। কখনো কখনো খাবার খাওয়ার পর এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তারা যদি শাকাহারী হয়ে যান, তাহলে তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে। এর প্রধান কারণই হলো সুষম নিরামিষ খাদ্য মানুষের শরীরে যেমন পুষ্টি জোগায়, তেমনি রক্তে শর্করা ও ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও স্বাভাবিক রাখে।
ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে
আপনি যদি সতেজ ও স্বাস্থ্যকর ত্বক চান, তাহলে আপনার উচিত সঠিক ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। ফল ও সবুজ তরকারিতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। এ ছাড়া যেহেতু সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, তাই বেশি করে নিরামিষ খেলে আপনার শরীরে এর মধ্যে নিহিত পুষ্টিদ্রব্যগুলো অক্ষত অবস্থায় সরবরাহ হয়ে থাকে। নিরামিষ খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
উচ্চহারে তন্তুর উপস্থিতি
ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে তন্তু (ফাইবার) দেখা যায়। এই উদ্ভিজ্জ তন্তু আমাদের পরিপাক ক্রিয়ায় অনেক সহায়তা করে। শরীরের বিপাকক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উদ্ভিজ্জ তন্তু হলো উৎকৃষ্ট উপাদান। এ ছাড়া সবুজ সবজিতে প্রচুর পানি থাকে, যা আমাদের শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমায়
গবেষকদের মতে, আমিষাশী মানুষদের তুলনায় নিরামিষাশী মানুষেরা অনেক বেশি সুখী হন। আমিষাশীদের তুলনায় নিরামিষাশীদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি অনেক বেশি থাকে এবং তারা সহজ জীবনযাপন করতে সক্ষম। সতেজ সবজি গ্রহণে শরীর ও মনে অনেক বেশি সতেজতা বজায় থাকে। যদি এই সবজি জৈব উপায়ে উৎপাদন করা হয়, তাহলে তা আমাদের শরীরের সতেজতাকে বহুগুণ বাড়াতে পারে।
বিপাকীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি
নিরামিষ খাবার সহজপাচ্য এবং এটি আমাদের বিপাক ক্রিয়াকে যথাযথ রাখে। নিরামিষভোজী মানুষের ক্ষেত্রে রেস্টিং মেটাবলিজম রেট অনেক বেশি। আমিষভোজী ও নিরামিষভোজী মানুষের মধ্যে তুলনা করলে বিষয়টি আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। নিরামিষ শুধু সহজপাচ্যই নয়, এটি শারীরিক ফ্যাট বিপাকেও যথেষ্ট সহায়তা করে।
চোখের ছানি সমস্যার উপশমে সহায়তা করে
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে, আমাদের খাদ্যাভ্যাস চোখের ছানি সমস্যার সৃষ্টির জন্য অনেকটাই দায়ী। দেখা গেছে, নিরামিষাশী মানুষের চোখে ছানি পড়ার হার আমিষাশীদের তুলনায় অনেকটাই কম। নিরামিষ খাবারের এমন হাজারো উপকার রয়েছে। সব সময় মৌসুমি তাজা ফলমূল ও সবজি কেনার চেষ্টা করতে হবে। কৃত্রিম সার ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা শাকসবজির কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজার থেকেই এসব কিনুন। রান্নার আগে শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। আর সবজি রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল ও মসলা এড়িয়ে চলুন।