পররাষ্ট্র সচিবের দিল্লি সফর নিয়ে নানা আলোচনা

পররাষ্ট্র সচিবের দিল্লি সফর নিয়ে নানা আলোচনা

জাতীয় স্লাইড

নভেম্বর ২৪, ২০২৩ ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের দিল্লি সফর নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। নির্বাচনের পূর্বে এই সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার আমন্ত্রণে এই সফর। শুক্রবার অনুষ্ঠেয় দুদেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। সফরকালে নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ হতে পারে।

এছাড়াও, তিনি যে ৯০টি দেশের বাংলাদেশে দূতাবাস নেই ওই সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি অবহিত করবেন।

নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক এবারেই প্রথম নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ওই সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সুজাতার বৈঠক নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল।

তবে সবকিছু নাকচ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না।

বুধবার (২২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব। দুই দেশের যৌথ পরামর্শক সভার সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সম্পর্ক বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে ভারত যাচ্ছেন কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা মেলাতে পারেন। সাধারণত গত এক বছরে আমাদের অগ্রগতি আছে। সেগুলোর একটা টেকিং টকস এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে আমরা কোন কোন জায়গায় আরও বেশি দৃশ্যত জোর দিতে পারি। যাতে সময় নষ্ট না হয়, বিশেষ করে; যোগাযোগের ক্ষেত্রে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমি মনে করি না, অপ্রয়োজনীয় অন্য কোনো হিডেন (লুকানো) এজেন্ডা আছে। যেহেতু নির্বাচন আছে-তাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো জানার থাকে, সেটা তাদের অবহিত করতে পারব। আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার আমন্ত্রণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর দ্বিতীয় দফায় শুক্রবার দিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। সভায় ঢাকার পক্ষে মাসুদ বিন মোমেন এবং দিল্লির পক্ষে বিনয় কোয়াত্রা যার যার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

চলতি বছরে দুবার এফওসি করার কারণ ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জানান, পর্যালোচনা করার জন্য যেতেই পারি। একাধিকবার হবে না (এফওসি) এমন কোথাও বলা নেই। বছরের প্রথমে হয়েছে, এখন আবার বছরের শেষে হচ্ছে। এরমধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে।

সভায় আলোচনার বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটা একটা রুটিন মেকানিজম। সেখানে দুদেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। ভারতের সঙ্গে আমাদের এ বৈঠকে অগ্রাধিকার যেসব বিষয় আছে-রাজনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সংক্রান্ত, আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন সহায়তা, কনস্যুলার সংক্রান্ত সহযোতিার বিষয় থাকবে। এর বাহিরেও আলোচনা হতে পারে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের আগ্রহ আছে, আমেরিকার আছে। আমরা কি কি ধরনের প্রজেক্টস নিতে পারি সেখানে। আমরা আমাদের আউটলুকস বলেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করার সুযোগ আছে।

রাজনীতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ওদের নির্বাচন আছে সামনে। আমাদের নির্বাচন আছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটা তো খুবই বহুপাক্ষিক সম্পর্ক; ট্রেড আছে, বিনিয়োগ আছে, পিপল টু পিপল কনটাক্ট আছে, ভিসা ইস্যু আছে-এগুলো যাতে নির্বাচনের পরও স্মুথলি চলতে পারে।

এ সফরকে রাজনৈতিক সফর বলা যায় কিনা জানতে চাওয়া হয় মাসুদ বিন মোমেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যাখ্যা কিভাবে দেবেন আমি জানি না। আমি মনে করি যে, নিয়মিত যে মিটিং হয়, এটাও সেভাবে হবে। এটা ঠিক যে সামনে আমাদের নির্বাচন আছে।

পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যে নির্বাচন পরবর্তী পরিকল্পনার কথা উঠে আসে। যদি পলিসিগত পরিবর্তন হয় তাহলে এত আগাম পরিকল্পনা বেশি সাহসী হয়ে গেল কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক-আমাদের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং যোগাযোগ-এগুলোতো অপরিবর্তনীয়। এখানের সঙ্গে সরকারের পরিবর্তনের সম্পর্ক আমি দেখি না।

পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি ইস্যুতে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সাধারণত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তৃতীয় দেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। যদি ইনফরমালি আলোচনায় উনারা তোলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু তৃতীয় দেশ নিয়ে সাধারণত আলোচনা হয় না।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের সম্ভাবনা বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। দিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক পররাষ্ট্র ছাড়াও, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও নৌ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

ভারতের অবস্থানরত বিদেশি ৯০টি মিশনের দূতদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সেখানে তিনি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবাধ ও নিরপেক্ষ প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরবেন।

মাসুদ বিন মোমেন জানান, ৯০টা দেশের দিল্লিতে দূতাবাস আছে। তাদের সঙ্গে আমি মিলিত হব দিল্লিতে। তাদের সঙ্গে একটা সেশনে ইন্টারএকশন করব। সেখানে আমরা এসব মিশন প্রধানদের আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির পাশাপাশি বর্তমান পরস্থিতি, আসন্ন নির্বাচনের কথা তুলে ধরব।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের (বিদেশি দূতদের) বিশেষ করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকারে প্রতিশ্রুতির কথা বলব। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে তাদের ব্রিফ করব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে তাদের প্রশ্ন থাকতে পারে। ইতোমধ্যে কমিশন পর্যবেক্ষকদের জন্য তারিখ বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আইওমোতে (আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থা) বাংলাদেশের যে প্রার্থিতা আছে ক্যাটাগরি সিতে সেখানে একটা প্রচারণা চালানোর সুযোগ হবে প্রায় ৯০টি দেশের সঙ্গে। এখানে (ঢাকায়) যারা আছেন, তাদের সব সময় বলতে পারি বা লবি করছি। কিন্তু ওদেরকে ওখানে গিয়ে সরাসরি বলাটা দরকার আছে।

এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত দিল্লির যেসব হাইকমিশন আছে সেগুলোর মধ্যে যেসব নতুন রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনাররা রাষ্ট্রপতির ব্যস্ততাসহ নানা কারণে তাদের পরিচয়পত্র পেশ করতে পারছেন না, তাদের আশ্বস্ত করা হবে বলেও জানান মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, যারা লাইনে আছেন তাদের আশ্বস্ত করা হবে। তাদের শিডিউল দেব। শনিবার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে পররাষ্ট্র সচিবের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *