পাঁচ চ্যালেঞ্জের মুখে শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট

পাঁচ চ্যালেঞ্জের মুখে শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪ ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

অর্থনৈতিকভাবে থুবড়ে পড়া শ্রীলংকায় দুই বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশায় জয়ী হলেন দেশটির বামপন্থি রাজনীতিবিদ অনূূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে (৫৫)।

তবে মুদ্রাস্ফীতি কাটিয়ে সামলে অনেকটা উঠে আসা দেশটিতে এখনো রয়েছে নানা সংকট। সোমবার নবনির্বাচিত লংকান প্রেসিডেন্টের সামনের দিনগুলোতে পাঁচটি চ্যালেঞ্জের বিষয় উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

অর্থনীতি এবং সমৃদ্ধি : ২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মারাত্মক ঘাটতি শ্রীলংকার অর্থনীতিকে চরম সংকটে ফেলে। দেশটির মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ৭০ শতাংশে। যদিও সেই সংকট অনেকটা কাটিয়ে ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছিল, তবে এখনো অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকেকে অর্থনীতির টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির দিকে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার মিলিয়ে ভারসাম্য আনতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির এক চতুর্থাংশ জনগণকে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আনতে চেষ্টা করতে হবে।

আইএমএফ প্রোগ্রাম এবং ঋণ পুনর্বিন্যাস : জুন মাসে কলম্বো, চীন এবং অন্যান্য ঋণদাতা দেশগুলোর সঙ্গে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক ঋণ পুনর্গঠন করার জন্য চুক্তি করেছে শ্রীলংকা। গত সপ্তাহে ১২.৫ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক বন্ড পুনর্গঠনের জন্য একটি খসড়া চুক্তিতে পৌঁছেছে দেশটি। ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি প্রাথমিক ভারসাম্য লক্ষ্যমাত্রার ২.৩% পৌঁছানোর জন্য ঋণ পুনর্বিন্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দিশানায়েকে বন্ডহোল্ডার চুক্তিতে পরিবর্তন চাইতে পারেন।

ট্যাক্সেশন : আইএমএফ বেলআউট শর্তাবলির অধীনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পাশ করা একটি কঠিন কাজ। দিশানায়েকে বলেছেন, তিনি আইএমএফের সঙ্গে তাদের কর্মসূচি সামঞ্জস্য করতে, কর কমাতে এবং কর ত্রাণ ও বিনিয়োগের জন্য জনগণের রাজস্ব খালি করতে আলোচনা করবেন। তিনি কিছু স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং খাদ্যসামগ্রীর ওপর ভ্যাট অপসারণের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। কিন্তু পদক্ষেপগুলো আইএমএফ চুক্তির অধীনে নির্ধারিত রাজস্ব ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।

চাকরি এবং কল্যাণ : দিশানায়েকে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোকে আরও লাভজনক করতে পারেন। প্রচারণায় তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে ২০,০০০টি নতুন চাকরি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বিদ্যমান কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো প্রসারিত করার প্রতিশ্র“তিও দিয়েছেন। কিন্তু পাবলিক ফাইন্যান্সে ভুল পদক্ষেপ, লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে ঠিক করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ এই অঙ্গীকারগুলোকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করতে পারে।

ভূরাজনীতি : নতুন প্রেসিডেন্টর সামনে আরও একটি চ্যালেঞ্জ হলো অন্যান্য দেশগুলোরে সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক। কলম্বো, প্রতিবেশী ভারত এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে দিশানায়েকে তাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার এবং প্রবৃদ্ধি বাড়াতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।

রোববার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকলেও দিশানায়েকে ভোট পেয়েছিলেন ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এসজেবির নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পান ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কোনো প্রার্থীকে পেতে হবে মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি। ফলে ভোট গণনা গড়ায় দ্বিতীয় দফায়। শ্রীলংকার নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি ব্যালট পেপারে ভোটাররা পছন্দ অনুসারে পর্যায়ক্রমে তিনজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। সেই নিয়ম মেনে এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থীকে ‘দ্বিতীয় পছন্দের’ প্রার্থী হিসাবে যারা ভোট দিয়েছিলেন সেগুলো আবার গণনা করা হয়। পরের রান-অফ ভোটেও বাজিমাত করেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে দিশানায়েকেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির অভিনন্দনের জবাবে শ্রীলংকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি, আপনার সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। দুই দেশের সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য আপনার যে প্রতিশ্রুতি, তার পাশে রয়েছি। দুই দেশ এবং সমগ্র অঞ্চলের নাগরিকদের স্বার্থে আমাদের এই সহযোগিতা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *