এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ
প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাতাসে আগুনের হলকা অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। কিন্তু খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষকে দাবদাহ উপেক্ষা করেই মাঠেঘাটে কাজ করতে হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার এপ্রিলে টানা যতদিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরেও হয়নি। গত বছর টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। আজও তা অব্যাহত আছে। অবশেষে আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃষ্টির সুখবর শোনাতে পেরেছে। তবে, তারজন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও এক সপ্তাহ। ২ মে থেকে পরবর্তী কয়েকদিন সারা দেশেই বৃষ্টি ও কালবৈশাখী হতে পারে।
এদিকে তীব্র গরমে সর্দি-কাশি, জ্বর ও পেটে ব্যথার মতো রোগ বাড়ছে। গরমে বেশি সমস্যা হচ্ছে ৫ বছরের কম বয়সি শিশু আর ৬৫ ঊর্ধ্ব মানুষের।
কালীগঞ্জে হিট স্ট্রোকে অটোচালকের মৃত্যু : লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে রাশেদুল ইসলাম (৫২) নামে এক অটোচালকের। স্থানীয়দের ধারণা, হিট স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলার চামটাহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাশেদুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বিছনদই গ্রমের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সকালে অটোরিকশা নিয়ে ভোটমারী গোলাম মূর্তজা ক্লিনিকের এক চিকিৎসকের প্রচারণায় মাইকিং করতে বের হন রাশেদুল। দুপুরের দিকে চামটাহাটের একটি হোটেলে খাবার খান। পরে পাশের একটি দোকান থেকে পান নিয়ে তা মুখে দিয়ে অটোরিকশার কাছে যেতে না যেতেই অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেখানেই রাশেদুলের মৃত্যু হয়।
রায়পুরায় শিশুর মৃত্যু : রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার দুপুরে হিট স্ট্রোকে ইয়াসিন নামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে রায়পুরার চাঁনুপুর ইউনিয়নের সওদাগর কান্দির এলাকার প্রবাসী এনামুল হকের ছেলে। চাঁনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন সরকার জানান, ইয়াসিন তার মায়ের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত গরমে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা : চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার বেলা ৩টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ১০ দিন ধরে জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় শ্রমজীবী মানুষ বেকায়দায় পড়েছেন। তারা মাঠেঘাটে কাজ করতে পারছেন না। বাইরে বেরুলে মনে হচ্ছে তাপে মুখ ও শরীর পুড়ে যাচ্ছে। আরও কয়েকদিন এ অবস্থা বিরাজ করতে পারে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। তবে চলতি মাসে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
রাজশাহীতে রেকর্ড তাপমাত্রা : ব্যুরো জানায়, শুক্রবার বেলা ৩টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক দিনভর প্রায় ফাঁকা ছিল। তবে কিছু রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষকে তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে কাজ করতে দেখা গেছে। এদিকে অনাবৃষ্টি ও দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে আজ সকাল ১০টায় রাজশাহীর হজরত শাহ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করা হবে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক মো. গাওসুজ্জামান বলেন, ভারি বর্ষণ ছাড়া আপাতত এই তীব্র তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বগুড়ায় বৃষ্টির জন্য নামাজ : ব্যুরো জানায়, জেলায় ৪ বছরের মধ্যে শুক্রবার সর্বোচ্চ ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, এরআগে গত বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এদিকে বৃষ্টির আশায় বাদ জুম্মা শহরের মালতিনগর ঈদগাহ্ মাঠে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়। সোনাতলার দিগদাইড় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠেও নামাজ আদায় করা হয়েছে। পরে ইমাম ও মুসল্লিরা বৃষ্টির জন্য হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেন।