সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং তাদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার কার্যক্রমে গতি বেড়েছে। এবার যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ইতালিতে অবস্থানতর বাংলাদেশি প্রবাসীদের সেখানেই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা চালু করতে চায় ইসি। ওই কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনের ১৫ জন করে মোট ৪৫ জন কর্মকর্তা শিগগিরই তিন দেশে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের বিদেশ যাওয়ার জিও (সরকারি আদেশ) জারি করেছে ইসি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি সেবা চালু করতে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের বিদেশ সফরের সময়ে প্রবাসীরা এ সেবা চালুর দাবি জানান। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তিন দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সম্মতি দেওয়ায় জোরশোরে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি মিশনের মাধ্যমে নতুন ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। ওই কার্যক্রম শুরু করতে খরচ হয় ৩৩ লাখ টাকা। গত মে মাসে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৩ জনের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সেখানে পৌঁছানো হয়েছে। আরও কিছু কার্ড পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে। এ পর্যন্ত ছয় হাজার ৭১৫ জন সেখানে ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ইতালিতে শিগগিরই ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, নিবন্ধন কার্যক্রম প্রস্তুতি শুরু করতে আমাদের টিম যাবে।
সূত্র জানায়, তিন ধাপে ১৫টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসাবে প্রথম ধাপে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যে এ কার্যক্রম শুরু করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চায় ইসি। ওইসব দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের সক্ষমতা বিবেচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ইতালিতে এ কার্যক্রম শুরুর সম্মতি দেয়। সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও ম্যানচেস্টার এবং ইতালির রোম ও মিলানে বাংলাদেশ মিশনে এ কার্যক্রম শুরু হবে। এ কার্যক্রম শুরু হলে প্রবাসীরা ওইসব মিশনে গিয়ে ছবি তোলা, আঙুল ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে পারবেন। সব প্রক্রিয়া সঠিকভাবে শেষ হলে মিশন থেকেই নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারবেন প্রবাসীরা। তবে নতুন ভোটার হওয়া প্রবাসীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। কারণ ১৪ সেপ্টেম্বরের পর থেকে যারা দেশে বা বিদেশে নিবন্ধন করেছেন তারা জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন কিন্তু ভোট দিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী প্রবাসীদের ভোটার হতে হলে দেশে এসে নির্দিষ্ট নির্বাচন অফিসে গিয়ে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রও বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এসব মিশনে এ কার্যক্রম শুরু হলে প্রবাসে বসেই জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা পাবেন। তবে তাদের স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এ দেশে যাচাই-বাছাই করা হয়। তারা আরও জানান, বিগত কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ, সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিসহ বিভিন্ন কারণে তা খুব একটা এগোয়নি। বর্তমান কমিশন আসার পর কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পাঠিয়ে সরাসরি নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন, ইতালিতে ৫৫ হাজার ৫২০ জন ও যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ১০৭ জন প্রবাসী রয়েছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভোটার নিবন্ধন অবস্থা : জানা গেছে, বর্তমান কমিশন ৩১ মে থেকে আবুধাবি দূতাবাসে ও ১২ জুন দুবাই কনস্যুলেটে পরীক্ষামূলকভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। ওই কার্যক্রম শুরুর আগে ইসির দুটি টিম সেখানে গিয়েছিল। নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু থেকে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ৬ হাজার ৭১৫ জন ভোটার হওয়ার জন্য আবুধাবি ও দুবাই থেকে আবেদন করেছেন। সব প্রক্রিয়া শেষে তাদের মধ্যে এক হাজার ৭৩ জনকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিন হাজার ৬৬০ জনের আবেদনের ঠিকানা যাচাই-বাছাই চলছে। সূত্র আরও জানায়, যাচাই-বাছাইয়ের পর ৭১৬ জনের আবেদন বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যাচাইয়ে তাদের বেশির ভাগেরই স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা এসব ব্যক্তির বড় অংশ রোহিঙ্গা। এছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিকও এ দেশে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। ৩৯ জন আগে ভোটার হওয়ার পরও নতুন করে আবেদন করেছেন। সম্প্রতি এক বৈঠকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করতে ৩৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।