গাজায় আগ্রাসনের সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের তথ্য ফাঁস করেছেন তিন ইসরাইলি। তারা প্রত্যেকেই গাজা থেকে ১৮ মাইল দূরে ইসরাইলের নাগেভ মরুভূমির ‘সেড তেইমান ডেজার্ট ক্যাম্পে’ ফিলিস্তিনি বন্দিদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। শুক্রবার সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সিএনএনকে তিন ইসরাইলির একজন বলেছেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি বন্দিদের চোখ বেঁধে রেখে এবং ডায়াপার পরতে বাধ্য করা হয়। তিনি এমন নির্যাতন নিজে চোখে দেখেছেন।
তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের নড়াচড়া করতে দেওয়া হয় না। তাদের সোজা বসিয়ে রাখা হতো। কোনো কথা বলতে দেওয়া হয় না। কথা বললেই কারারক্ষীরা বন্দিদের ‘চুপ কর’ বলে চিৎকার করে ওঠে। যারা এর পরও কথা বলার চেষ্টা করে, তাদের ধরে নিয়ে করা হয় নির্যাতন। এমনকি চোখ বাঁধা অবস্থাতেও বন্দিদের উঁকি দেওয়ার অনুমতি নেই। বন্দিদের পাহারায় নিয়োজিতদের চিৎকার করে নীরবতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া ছিল। এছাড়া যারা নির্দেশ মানছে না তাদের চিহ্নিত করার দায়িত্বও প্রহরীদের দেওয়া হয়েছিল।
তারা ওই বন্দিশালার এমন একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে মাঝে মাঝে অনবরত হাতকড়া থাকার জখম বন্দিদের হাত অনেক সময় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হতো। আর এ কাজটি করত অদক্ষ টেকনিশিয়ানরা।
তিন ইসরাইলি জানিয়েছেন, ‘সেড তেইমান ডেজার্ট ক্যাম্প’ বন্দিশিবিরটি গাজা থেকে ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত। এটি দুই অংশে বিভক্ত। এর একটিতে ৭০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের নড়াচড়ার সুযোগও একেবারে কম। এছাড়া সেখানে একটি ফিল্ড হাসপাতালও রয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ডায়াপার পরিয়ে বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে এবং খাবার দেওয়া হয় পাইপ দিয়ে।
ওই হাসপাতালে কাজ করেছেন এমন একজন বলেছেন, নিজেকে মানুষ বলে দাবি করতে পারেন, এমন সব কিছুই বন্দিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, তথ্য উদ্ধার করতে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় না। বরং ক্ষোভ আর প্রতিশোধের নেশা থেকেই তাদের সঙ্গে এমন করা হয়। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার প্রতিশোধ নিতেই তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়।
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাস যোদ্ধাদের হামলার পর গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গাজায় বন্দি করা ফিলিস্তিনিদের রাখার জন্য তিনটি সামরিক স্থাপনাকে বন্দিশিবিরে পরিণত করা হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদনের এসব অভিযোগ ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) খ্যাত ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে আইডিএফ সিএনএনকে জানিয়েছে, বন্দি থাকা জিম্মিদের সঙ্গে সব সময় উপযুক্ত আচরণ নিশ্চিত করা হয়।
আইডিএফের সেনাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে আরও বলা হয়, বন্দিদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনা করে তাদের হাতকড়া পরানো হয়। ওই বন্দিশালায় অনৈতিকভাবে হাতকড়া পরানোর কোনো তথ্য কর্তৃপক্ষের জানা নেই।
বন্দিদের পরিধেয় কাপড় খুলে ডায়াপার পরিয়ে রাখার অভিযোগ আইডিএফ সরাসরি অস্বীকার করেনি। বরং তারা বলেছে, আইডিএফ যখন বিবেচনা করে কোনো ঝুঁকি নেই, তখন বন্দিদের পরিধেয় কাপড় ফেরত দেওয়া হয়।