সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ ১২:০৩ অপরাহ্ণ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আজ রোববার দুদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। ভারতে জি-২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে আসছেন তিনি। আজ সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন। ম্যাক্রোঁর আগমন উপলক্ষ্যে শেখ হাসিনা তার দিল্লি সফর কিছুটা সংক্ষিপ্ত করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে ঢাকা এখন প্রস্তুত। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। ম্যাক্রোঁর সফরকালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এবং ১০টি এয়ারবাস কেনাসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষর শেষে একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই সফরের আয়োজন কিছুটা তড়িঘড়ি করে করা হয়েছে। ফলে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং এয়ারবাস ক্রয় চুক্তি চূড়ান্ত করার কাজ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য আগে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। তবে ওই চুক্তি আর বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে মুদ্রার বিনিময় অনেক কঠিন। সরকার তাই স্যাটেলাইট চুক্তিটি ফ্রান্সের সঙ্গে করার সিদ্ধান্ত নেয়। অপরদিকে অনেকটা দ্রুতগতিতে এয়ারবাস ক্রয়ের সিদ্ধান্তে উপনীত হয় বাংলাদেশ।
সোমবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তারপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। দুই নেতা চুক্তি অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে সোমবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে থাকবেন দেশটির ইউরোপ এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন কলোনা। সফর শেষে বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
ফ্রান্সের সহায়তায় এবার যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে তার নাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২। এটি একটি ‘আর্থ অবজারভেটরি’ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে পৃথিবী তথা বাংলাদেশের স্থলভাগ ও জলভাগ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা হচ্ছে। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে তিনি আসতে পারেননি। এখন ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগে আসছেন।’
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরকালে বড় কোনো চুক্তি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ফ্রান্সের সহায়তার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।’ তিনি বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আর কিছুই বলেননি।
বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, প্রাথমিকভাবে একটি এমওইউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) সই হবে। এরপর কীভাবে বিমানগুলো কেনা হবে, সে বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য দুদেশের সঙ্গে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরই চুক্তি হবে।
জানা যায়, যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি এ৩৫০ মডেলের উড়োজাহাজ জি-টু-জি পদ্ধতিতে কেনা হবে। এ লক্ষ্যে বিমান কার্যালয় বলাকায় গত মাসের শুরুতে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এয়ারবাসের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
বিমান সূত্র জানায়, এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৩ মে অনুমোদন পেয়েছে। এরপর ৬ মে লন্ডনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ সংক্রান্ত যৌথ ঘোষণা সই হয়। পরে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এয়ারবাস থেকে আটটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কিনবে বিমান। পরবর্তী সময়ে আলোচনা সাপেক্ষে আরও দুটি মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ কেনা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০২৬ সালে দুটি এয়ারবাস বহরে যুক্ত হবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে। এখন ক্রয় পদ্ধতি, দাম, অর্থের উৎসসহ নানা কারিগরি বিষয় যুক্ত করে একটি প্রোফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে। বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সম্প্রতি বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুটি এয়ারবাস আনা হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে ১০টি উড়োজাহাজ চেয়েছি। কারিগরি কমিটি এখন মূল্যায়ন করছে। এসব উড়োজাহাজ নতুন ও পুরোনো রুটে ব্যবহার করা হবে।’
এদিকে কিছু কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। প্যারিসভিত্তিক প্লানেট রিফিউজিস নামের একটি সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের উচিত বাংলাদেশে সুশীল সমাজের ওপর যে নিবর্তন চলছে তা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানানো।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান ড. শাহজাহান মাহমুদ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ হলো একটি আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইট। এর মাধ্যমে পৃথিবীটা দেখা যাবে। ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি পৃথিবীর ছবি তুলে বাংলাদেশে পাঠাবে। বাংলাদেশে কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে করণীয় অনেক কিছু জানা যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হওয়ায় আমাদের সমুদ্র অঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমুদ্র অঞ্চলে নজরদারি বাড়ানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কেউ অনধিকার প্রবেশ কিংবা কোনো অপতৎপরতা চালাচ্ছে কি না সেটাও এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জানা যাবে।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে এর পার্থক্য কী জানতে চাইলে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ টেলিভিশন স্টেশনের জন্য কাজে লাগছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর মাধ্যমে আর্থ অবজারভেশন করা যাবে। এর জন্য দুটি রাডার স্থাপন করা হবে। এ রাডারের মাধ্যমে ছবি পৃথিবীতে আসবে, যা বাংলাদেশের কাজে লাগবে।’
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে দুই দেশের সরকার আন্তরিকভাবে আশা করছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন।
বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূউপরিস্থ যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১৯ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসাবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ। ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।