সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ
‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পের গতি নেই। প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ।
তবে আর্থিক অগ্রগতি আরও কম। এখন পর্যন্ত ২০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ৫২ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ অবস্থায় পরামর্শকসহ ২৫ খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। এ ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সোমবার অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল ব্যয় ছিল ৩৪৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। পরবর্তী সময় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ৩৮৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা করা হয়।
এরপর আবার প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৪৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৪৩৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে অনুমোদনের সময় মেয়াদ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ এর জমিতে হাইটেক শিল্প গড়ে তোলার জন্য সহায়ক প্রাথমিক অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং গ্যাস সংযোগ ইত্যাদি অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। যাতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শনিবার বলেন, বিষয়টি এখনো আমি জানি না। এটা সেক্টর পর্যায়ে আছে। পিইসি সভায় অবশ্যই এসব আলোচনায় উঠবে। যাতে কোনো প্রকল্পই প্রয়োজনের বাইরে অহেতুক ব্যয় বৃদ্ধি না হয়। হাইটেক পার্কে সরেজমিন দেখতে চাই-কিভাবে কাজ চলছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশোধনের কিছু বাস্তব কারণও থাকে।
সবদিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়-২৫ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো-কর্মকর্তাদের বেতন, কর্মচারীদের বেতন, সম্মানি ভাতা, আপ্যায়ন, আউটসোর্সিং হায়ারিং চার্জ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শ্রমিক মজুরি, প্রচার ও বিজ্ঞাপন, অফিস ভাড়া এবং গাড়ির জ্বালানি।
এছাড়া স্টেশনারি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (ড্রইং, ডিজাইন ও মনিটরিং), কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জামাদি মেরামত, যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ, ১০তলা বিশিষ্ট ডরমেটরি ভবন নির্মাণ এবং ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনসহ ফার্নিচার। ভূমি উন্নয়ন, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যাট, স্মৃতিসৌধ বা ম্যুরাল নির্মাণ, প্রি-স্টেজ গার্ডার ব্রিজ, অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ওয়াকওয়ে এবং ইউটিলিটি ডাস্ট পরিষ্কার।
ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া আরও কয়েকটি খাত হলো বৈদ্যুতিক স্থাপনা বা ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ওয়ার্কস, ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি এবং প্রাইস কন্টিজেন্সি খাত। এসব খাতে বাড়বে ৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এদিকে ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা ১৫ খাত হলো-সেমিনার, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, ডাক খরচ, বই-ফরম-ব্রশিউর, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফল এবং প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাসফর।
এছাড়া বাউন্ডারি ওয়াল ও রেললাইনের পাশে প্রটেকশন ওয়াল, সাবস্টেশন ভবন, লেক উন্নয়ন, সিকিউরিটি পোস্ট নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণ, স্যানিটেশন বা পানি সরবরাহ অবকাঠামো তৈরি, জিপ-মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ক্রয়। এসব খাতে ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় কমবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সোমবার অনুষ্ঠেয় পিইসি সভায় যেসব বিষয় প্রশ্ন তোলা হবে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-পরামর্শক খাতের খরচ। এ খাতে মূল প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা। এখন নতুন করে ৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯ কোটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া স্মৃতিসৌধ বা ম্যুরাল খাতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা জানতে চাইবে পিইসি। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরিতে ১১ কোটি ২১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। ভূমি উন্নয়ন খাতের কাজ শতভাগ শেষ হলেও এ খাতে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান এবং হাইটেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের বিবেচনায় কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করতে হচ্ছে। অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সংশোধিত বিওকিউ এবং নতুন রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলন করার কিছু খাতের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ না থাকায় প্রকল্পের আবশ্যকীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা যাচ্ছিল না। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত দুটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ৪ কোটি টাকা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।
সংযোগ দেওয়ার এক বছরের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ডিপিপিতে আগে এ খাতে কোনো বরাদ্দ ছিল না। তাই নতুন করে ব্যয় যোগ হচ্ছে।