টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নিন্মাঞ্চল। একারণেই এখন নৌকা বিক্রির হাটগুলো ক্রেতা বিক্রেতা সমাগমে জমজমাট হয়ে উঠেছে। বর্ষা শুরু হওয়ায় পানি বৃদ্ধি ও কৃষি মৌসুমে নৌকার কদর বেড়েছে।
ধান কাটা-সরবরাহ, বাগান থেকে পেয়ারা ও বিভিন্ন ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করার কাজে নৌকার বিকল্প নেই। আর তাই দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম নৌকারহাট আটঘরসহ আশপাশের বিভিন্ন নৌকা বিক্রির হাটগুলো এখন ক্রেতা বিক্রেতা সমাগমে জমজমাট হয়ে উঠেছে।
খাল-বিল, নদী-নালা বেষ্টিত বিশেষ করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় বাহন নৌকা। আর এ নৌকার চাহিদার মেটাতে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।
বর্ষা মৌসুম এলেই ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদী-নালা খালবিল বেষ্টিত এলাকায় নৌকার কদর বেড়ে যায়। এতে নৌকা নির্ভর এলাকাগুলোতে নৌকার চাহিদাও বাড়ে। কৃষি কাজসহ যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনে এখনও নৌকার কদর গ্রামীণ জনপদে। আর এ বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে নৌকা তৈরির কারিগররা দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
কারিগর আলতাফ মিয়া, সোহরাব ও ইউসুফ আলী জানান, কাঠ-লোহাসহ নৌকা তৈরির উপকরণের দাম বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি নৌকার দাম। তাছাড়া নিজস্ব পুঁজি না থাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে উপকরণ কিনতে হয়। যে কারণে তারা তেমন দাম পাচ্ছেন না। তবুও তারা প্রতি হাটে তৈরি করা নৌকা নিয়ে হজির হয়।
দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম আটঘরের নৌকারহাট ক্রেতা বিক্রেতা সমাগমে জমে উঠেছে। দুই শতাধিক বছরের পুরানো ঝালকাঠির সীমান্তবর্তী নৌকা কেনা বেচার এ হাটে বিক্রির জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে কারিগর এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে আসেন। এখান থেকে এসব নৌকা যাচ্ছে বৃহত্তর বরিশাল এবং ফরিদপুরের প্রত্যন্ত এলাকায়।
প্রতি মৌসুমে এ হাটে এক থেকে দেড় কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। নৌকায় মূলত পেয়ারা, কচু, চিচিঙ্গা, লেবু, ঝিঙা, আমড়া, কলাসহ নানা কৃষিপণ্য বহন করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা নৌকা থেকেই সেগুলো কিনে নিচ্ছেন।
স্থানীয় নৌকার কারিগররা জানান, কোষা মূলত নৌকার ক্ষুদ্র সংস্করণ। অন্যান্য নৌকার মতো এর গলুইয়ের কাঠ বড় থাকে না। অঞ্চল বিশেষে এর আকারে কম-বেশি দেখা যায়। এর আদর্শ দৈর্ঘ্য ৯ মিটার। কখনো কখনো ৬ মিটার দৈর্ঘ্যের কোষাও দেখা যায়। বিক্রির জন্য শুক্রবারের হাটে ৪৮টি নৌকা এনেছিলেন নৌকা ব্যবসায়ী আল আমিন।
তিনি জানান, ৪০টিই বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি নৌকাগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে। এই হাটে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা দামের নৌকা পাওয়া যায়। কাঠের মান, আকার অনুযায়ী দাম। নৌকার খোলে পণ্য পরিবহনের জন্য দুটি বাক্স আকারের আলাদা ডেক রয়েছে। মাঝখানটায় পানি জমার জন্য ফাঁকা। পানি সেচের সুবিধার্থে নৌকাগুলোর এমন ডিজাইন করা হয়েছে।
নৌকার হাটের ইজারাদার আবদুর রহিম জানান, প্রতি বছর নৌকার বিক্রির মৌসুমে প্রতি হাটে হাজার-বারো শ’ নৌকা বিক্রি হতো। এখন কিছু কম বিক্রি হচ্ছে। আগের তুলনায় নৌকার দামও বেশি।
ঝালকাঠি বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক এইচএম ফাইজুর রহমান জানান, নৌকা তৈরির কারিগরদের পুঁজি সঙ্কট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে তাদেরকে বিসিক থেকে স্বল্প সুদে মৌসুমী ঋণ দেওয়ার একটি প্রকল্প রয়েছে। তারা ঋণের জন্য এলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।