বাংলাদেশের ক্রিকেট: ওপেনিং সমস্যার সমাধান কী?

বাংলাদেশের ক্রিকেট: ওপেনিং সমস্যার সমাধান কী?

খেলা স্পেশাল

অক্টোবর ১৪, ২০২৩ ১২:১২ অপরাহ্ণ

ওপেনিংটা বরাবরই বাংলাদেশ দলের জন্য এক দুশ্চিন্তার নাম। ম্যাচের অগ্রভাগে ভালো একটা শুরু এনে দেওয়া কখনোই টাইগাররা নিয়মিত পায়নি। দীর্ঘ সময় ধরে এ নিয়ে বহু বিচার বিশ্লেষণ হলেও এখনো মেলেনি সমাধান। যে চিত্র বিশ্বকাপেও দেখা যাচ্ছে। ম্যাচের পর ম্যাচ খারাপ করে যাচ্ছেন ওপেনাররা। অথচ আর দশটি দল এই ওপেনিংয়ে ভালো করার কারনেই প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে।

গত চার বছরের পরিসংখ্যান দেখলে এ ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার হবে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে শুরুর ১০ ওভারে বাংলাদেশি ওপেনারদের গড় ২৭.০২। টেস্ট খেলুড়ে ৯টি দেশ তো বটেই, বরং বিশ্বকাপ খেলতে আসা সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসের ওপেনারদের গড়ও এ সময়ে ঢের ভালো। আর ভারতের ওপেনাররা তো শুরুর ১০ ওভারে রান তুলেছেন ৫০.১৭ গড়ে। বাংলাদেশের এখানটায় আর পরিবর্তন হয়নি। যে কারণে বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই ভুগতে হচ্ছে তাদের।

আবার রোটেশন পলিসির সমস্যাও রয়েছে ওপেনারদের ক্ষেত্রে। এই পজিশনে আমরা গত চার বছরে খেলিয়েছি সাতজন ব্যাটারকে। এই সাতজন ব্যাটারের মধ্যে চারজন আবার ম্যাচ খেলেছেন পাঁচটিরও কম; একজন খেলেছেন কাঁটায় কাঁটায় পাঁচটি ম্যাচ। বাকি সব ম্যাচই ওপেন করতে নেমেছেন লিটন ও তামিম।

এ সময়ে বাংলাদেশ ভারত, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলেছে; কিন্তু অধিনকাংশ দলের সঙ্গেই ওপেনিংয়ে ব্যর্থ হয়েছে টাইগার ব্যাটাররা। অথচ ২০১৯ বিশ্বকাপের পর টেস্টখেলুড়ে ১২টির মধ্যে ৮টি দেশই আমাদের চেয়ে বেশি ওপেনার খেলিয়েছে; দুটি দেশ (আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ড) খেলিয়েছে আমাদের সমান সংখ্যক ওপেনার। শুধু পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ড আমাদের চেয়ে কম ওপেনারকে ট্রাই করিয়েছে।

কিন্তু এখানেও খানিকটা শুভংকরের ফাঁকি রয়ে গেছে। যেমন ধরুন, নিউজিল্যান্ডের সাতজন ওপেনারের মধ্যে চারজনই খেলেছেন দুই অঙ্কের ম্যাচ সংখ্যা। আবার ইংল্যান্ড যে মাত্র পাঁচজন ওপেনার খেলিয়েছে সেখানে চারজনই সাতের অধিক ম্যাচ খেলেছেন; তিনজন খেলেছেন বারোর অধিক ম্যাচ। তার মানে কাগজে-কলমে আমরা সাতজন ওপেনারকে ট্রাই করালেও আদতে আমাদের ওপেনার দু’জনই। তারা হলেন- লিটন ও তামিম। সে তালিকায় টেনেটুনে বিজয়কে ইনক্লুড করলে সেটা তিন হতে পারে। এর বেশি আর ধরা যায় না।

কিন্তু যে দু’জনকে অটো চয়েস মডেলে রাখা হয় বছরের পর বছর। তাদের একজন তো কাটাই পড়ে। বাকি থাকেন লিটন। যে কিনা আবার ফর্মে নেই। এর মধ্যে নতুন তামিমকে দলভুক্ত। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে তার মতো তরুণ ওপেনার যে আলো ছড়াতে পারবে না সেটা একপ্রকার অনুমেয় ছিল। শেষ পর্যন্ত বাস্তবে তেমনটা ঘটছে। কোনো ম্যাচেই এখন পর্যন্ত দারুণ কিছু করতে পারছেন না জুনিয়র তামিম। কিন্তু এর সমাধান কী?

বাংলাদেশ তো বিশ্বকাপের জন্য পরীক্ষিত কাউকে রাখতে পারতো। যে কিনা ওপেনিংয়ে নেমে অন্তত ভালো একটা সূচনা এনে দিতে পারে। লিটন খারাপ করলেও তার ওপর একটা আস্থা রাখা যেতো। যদি সেটা কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫০ না ৬০ হয়, তবুও মন্দ হতো না।

অথচ এখনকার মানুষ এই ১১ জনকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলবে, একদিন বিশ্বকাপ জিতবে…! তাদের স্বপ্ন প্রতিবারই ভেঙে চুরমার হচ্ছে। ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়া আর বাইরের মহাদেশগুলোর মধ্যে বিস্তর ফারাক। ক্রিকেটটা সেখানকার দর্শকের সাময়িক বিনোদনের খোরাক হতে পারে; কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দর্শকের কাছে ক্রিকেটকে এত হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

দক্ষিণ এশিয়ার পরিমণ্ডলটা ছোট করে এনে যদি ‘বাংলাদেশ’-এ এসে দাঁড়াই, তাহলেও কিন্তু এ কথার এতটুকু পরিবর্তন হবে না। ক্রিকেটকে এখানে শুধু ভালোবাসা হয় না, ক্রিকেটটা এখানে রীতিমতো লালন করা হয়। ক্রিকেটই এখানে মানুষকে হাসায়, ক্রিকেটই এখানে মানুষকে দিয়ে যায় বিষম যন্ত্রণার বোধ। ঢাকার দুর্বিষহ ট্রাফিক জ্যামের ক্লান্তি শেষে অফিস ফেরত কর্তা সারাদিনের সবটুকু দুঃখ ভুলে যান টিভির সামনে বসে মুশফিকুর রহিমের ছক্কাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *