অক্টোবর ২১, ২০২৪ ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশে চরম দারিদ্রসীমায় বাস করছেন ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর। সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ‘বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪: সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র্য’ শিরোনামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনএনডিপি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বুঝতে বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা করা হয়েছে। তাতে ২০২২–২৩ বছর পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে মানুষের পর্যাপ্ত আবাসন, পয়োনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কেমন ঘাটতি রয়েছে, তা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। শিশুরা কী হারে স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে, তা-ও এখানে বিবেচনায় এসেছে।
সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকই সংঘাতকবলিত দেশের বাসিন্দা। চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর ৮৩ শতাংশের বেশি বসবাস করেন আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ এমন পরিবারে আছেন, যে পরিবারের অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন।
বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক-২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মানুষের জীবনযাত্রার মান (৪৫ দশমিক ১ শতাংশ)। এরপর রয়েছে শিক্ষা (৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ) ও স্বাস্থ্য (১৭ দশমিক ৩ শতাংশ)।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের সবশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। সবশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা আছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার। সে হিসাবে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ বলেন, ইউএনডিপির এই সমীক্ষায় যেভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বিবিএস বা অন্যান্য সংস্থার সমীক্ষার তুলনা করা ঠিক হবে না। এই সমীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বৈশ্বিক তুলনায় কী অবস্থায় আছে, তার একটি চিত্র পাওয়া গেল। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ডলার সংকট এবং নানা ধরনের আর্থিক সমস্যার কারণে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তা নানা সূচকের মাধ্যমে এই সমীক্ষায় বোঝা গেছে। এখান থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ইউএনডিপির সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আছেন। এরপরই রয়েছে পাকিস্তান (৯ কোটি ৩০ লাখ), ইথিওপিয়া (৮ কোটি ৬০ লাখ), নাইজেরিয়া (৭ কোটি ৪০ লাখ) ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (৬ কোটি ৬০ লাখ)। বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই এই পাঁচ দেশের বাসিন্দা।
ইউএনডিপি প্রকাশিত সূচকে দেখা গেছে, দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের মধ্যে প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখের বয়স ১৮ বছরের কম। এই সংখ্যাটা বিশ্বের মোট শিশুর ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এর তুলনায় চরম দারিদ্র্যে রয়েছে বিশ্বের মোট প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইউএনডিপির সূচক অনুযায়ী, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৪৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে বসবাস করছেন। সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় শিশুমৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোয় এই হার মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। যুদ্ধ চলা দেশগুলোর মানুষ পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।