বাংলাদেশে সংঘাত-প্রাণহানি নিয়ে কী বলছে বিশ্ব গণমাধ্যম

বাংলাদেশে সংঘাত-প্রাণহানি নিয়ে কী বলছে বিশ্ব গণমাধ্যম

জাতীয় স্লাইড

আগস্ট ৫, ২০২৪ ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে চলাকালে বহু প্রাণহানির খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, এনডিটিভিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নজিরবিহীন সহিংসতার কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে রোববার (৪ আগস্ট) অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জের একটি থানায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যার কথাও উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমন করতে সারা দেশে আবারও কারফিউ কার্যকর করেছে। গত মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হলেও এখন তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘পুরো রাজধানী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী একটি হাসপাতালের বাইরে গাড়ি ও মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শিরোনাম ছিল, ‘বিক্ষোভে কয়েক ডজন মৃত্যুর পর বাংলাদেশে আবার কারফিউ জারি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন মারা গেছে। আবার কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইন্টারনেটে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নতুন করে সহিংসতায় ১৩ জন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৯১ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং স্টান গ্রেনেড ছুড়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করেছে। বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার রাজধানী ঢাকা এবং উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও রংপুরের পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগুরা, পূর্বের কুমিল্লা এবং দক্ষিণের বরিশাল ও ফেনীতে মৃত্যুর খবর দিয়েছেন পুলিশ ও চিকিৎসকরা। এর আগে জুলাই মাসে বিক্ষোভে অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় সংবাদধ্যমটি।

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক বিজয় বসাক জানিয়েছেন, সিরাজগঞ্জের উত্তর-পশ্চিম শহরের এনায়েতপুর থানায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের পরিচয় জানা যায়নি।

ভারতের এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৯১ জন নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার বাংলাদেশে নতুন করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে প্রায় ১০০ জন নিহত ও কয়েকশ’ লোক আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে রোববার সংঘর্ষে ১৩ পুলিশসহ অন্তত ৯১ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ইতিহাসে একদিনে সবেচেয়ে বেশি প্রাণহানি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে চলমান আন্দোলন দমনে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ এনেছেন তার সমালোচনাকারী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে এ অভিযোগ শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা অস্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *