সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ
সরকার পতনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকেই মনোযোগ বিএনপির। এখন অন্য কোনো ভাবনা নয়। দাবি আদায়ের পর নির্বাচন নিয়ে ভাবতে চায় দলটি। তাই প্রথম ধাপের চলমান রোডমার্চ ও সমাবেশের টানা কর্মসূচি সফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা। ৫ অক্টোবর টানা কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর ‘অলআউট’ মাঠে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ভিসানীতি কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে হরতাল ও অবরোধের মতো ভিন্ন নামে কর্মসূচির প্রস্তাব রয়েছে।
এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ও গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ নিয়ে সোমবার রাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই আন্দোলন আটকানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলন আরও তীব্র করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব। জনগণ জেগে উঠেছে। তারা দাবি আদায় করতেই রাজপথে নেমেছে। এবার জনগণের বিজয় হবেই।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য হরতাল-অবরোধসহ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় সব ধরনের কর্মসূচি হবে। এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, দেশের মানুষের মালিকানা ফেরত দেব।’
সূত্রমতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ পর্যন্ত কর্মসূচির মূল্যায়ন করা হয়। এতে নেতাদের পর্যবেক্ষণ, ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে টানা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় ছয়টি সমাবেশ হয়েছে। রোডমার্চ হয়েছে দুটি (সোমবার পর্যন্ত)। এসব কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরও শক্তভাবে মাঠে নামবেন। যা হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও বড় কথা হলো ম্যাডাম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি। খালেদা জিয়া হচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড রকমের আবেগের জায়গা। এখানে কারও ভিন্নমত নেই। নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ মাঠে নামছেন, আমাদের আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। শিগগিরই এ আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাবে।’ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘একদফার আন্দোলনের ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে কোনো বিভেদ বা কোনো রকমের গ্রুপিং নেই। যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তাদের হটানোর বিষয়ে সবাই একমত। এ পর্যন্ত প্রতিটি কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। তারা মনে করেন বর্তমান সরকারকে কেউ চায় না। এ অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়েই তারা বলতে চান, সরকার যত তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করবে, ততই জনগণের জন্য মঙ্গল। এজন্যই মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে।’
সূত্রমতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরা হয়। তার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আরও কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে ভিসানীতি নিয়েও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই যাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করছে তাদের মধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে তাদের ওপর এই নীতি বিশেষভাবে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কারা বাধা তা দেশি-বিদেশি সবারই জানা। বিএনপি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো সহিংস আন্দোলনে যায়নি। বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির ওপর সহিংসতা হয়েছে। ভিসানীতিতে বিরোধী দল বলতে বিএনপিকে বোঝায় না বলে নেতাদের আলোচনায় উঠে আসে। তারা আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধা হিসাবে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিএনপি যে অভিযোগ করে আসছিল তা সত্য বলে মানছে যুক্তরাষ্ট্র। ভিসানীতির প্রয়োগ এমনটাই বলছে।
গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক : চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে মতামত নিতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৃথকভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ (নূর), এনডিএমর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। আজ অন্য সমমনাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যকরে সরকারের মনোভাব নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপে বিরোধী দল সুবিধা করতে পারলেও সরকার পতনে রাজপথেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। এতে আন্দোলনের ধরন, রূপরেখায় ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন কর্মসূচির পক্ষেই সবাই মতো দেন। এর মধ্যে সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের পর ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি, এমনকি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষেও মতো দেন তারা। গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বৈঠকে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে আগামীতে সরকার কী করতে পারে, কী হবে, আমরা কী করতে পারব, কিভাবে পারব-তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে।
গঠন হচ্ছে ‘যুব ঐক্যজোট’ : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বিরোধী ১৫ ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ নামে নতুন জোট ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। সূত্র মতে, এ জোটের উদ্যোগে রাজধানীতে একটি ‘ছাত্র কনভেনশন’ কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠন নিয়ে ‘যুব ঐক্যজোট’ গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। এছাড়া আইনজীবীসহ আরও বেশ কিছু পেশাজীবী সংগঠন নিয়ে ‘পেশাজীবী কনভেনশন’ করারও বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন নেতারা। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সরকার পতনের একদফা দাবিতে পৃথকভাবে যুব, ছাত্র ও পেশাজীবীদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে চাইছে বিএনপি হাইকমান্ড। এতে সরকার পতন আন্দোলন সফল করতে সহজ হবে বলে নেতারা মত দিয়েছেন।