সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ
রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যোগ হচ্ছে ফ্রান্সের তৈরি নতুন ১০ এয়ারবাস। বাংলাদেশে সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপস্থিতিতে আজ এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা। ফ্রান্সের উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাসের সঙ্গে বিমানের এই এমওইউ হবে। বিমান এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে নতুন ১২টি উড়োজাহাজ ক্রয় করেছিল। বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, আস্তে আস্তে তারা এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী বহর তৈরি করতে চাচ্ছে।
বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে একটি এমওইউ সই হবে। এরপর কীভাবে বিমানগুলো কেনা হবে, সে বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য দুদেশের সঙ্গে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরই চুক্তি হবে।
জানা যায়, যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া বেশ আগেই শুরু করেছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এতদিন এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ফ্রান্সের এই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এ৩৫০ মডেলের উড়োজাহাজ জি-টু-জি পদ্ধতিতে কেনা হবে। এ লক্ষ্যে বিমান কার্যালয় বলাকায় গত মাসের শুরুতে বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এয়ারবাসের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
বিমান সূত্র জানায়, এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৩ মে অনুমোদন পেয়েছে। এরপর ৬ মে লন্ডনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ সংক্রান্ত যৌথ ঘোষণা সই হয়। পরে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এয়ারবাস থেকে আটটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কিনবে বিমান। পরবর্তী সময়ে আলোচনা সাপেক্ষে আরও দুটি মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ কেনা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০২৬ সালে দুটি এয়ারবাস বহরে যুক্ত হবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে। এখন ক্রয় পদ্ধতি, দাম, অর্থের উৎসসহ নানা কারিগরি বিষয় যুক্ত করে একটি প্রোফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বহর পরিকল্পনা এবং কারিগরি ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে।’ বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সম্প্রতি বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুটি এয়ারবাস আনা হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে ১০টি উড়োজাহাজ চেয়েছি। কারিগরি কমিটি এখন মূল্যায়ন করছে। এসব উড়োজাহাজ নতুন ও পুরোনো রুটে ব্যবহার করা হবে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি দেশের বিমানবহরে এয়ারবাস ও বোয়িং আছে। তবে আমাদের শুধু বোয়িং রয়েছে, একটিও এয়ারবাস নেই। এয়ারবাসের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী তারা এভিয়েশন খাতের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণেও সহায়তা দেবে।’
বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম আরও বলেন, ‘এয়ারবাসের সঙ্গে আমাদের ইতোমধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। উড়োজাহাজ ক্রয়ের বিষয়ে আমাদের কয়েকটি কমিটি আছে। এয়ারবাস যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার ওপর আমরা আলোচনা করেছি। কমিটিগুলোর রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের যেসব চাহিদা আছে, তাদের জানিয়েছি। আমরা কীভাবে এগোব, আর্থিকভাবে বিমান কীভাবে লাভবান হবে-এ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
শফিউল আজিম বলেন, ‘নতুন উড়োজাহাজ সরবরাহে কমপক্ষে দুই বছর লেগে যায়। উড়োজাহাজ এলে আমরা বিমানের নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করব। জাপানে চালু হয়েছে। কানাডায় আরও ফ্লাইট বাড়ানোসহ গুয়াংজু, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি নতুন রুট চালুর সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনা আমাদের পরিকল্পনারই অংশ।’ আগামী মাসের মধ্যে গুয়াংজু ফ্লাইট চালু হওয়ারও কথা রয়েছে বলে তিনি জানান। এমডি বলেন, বিমানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট চালু করতে কোনো বাধা নেই। সিভিল এভিয়েশনের গ্রিন সিগন্যাল পেলে বিমান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট চালু করতে পারবে।
এয়ারবাস পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী সংস্থা, যারা বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের নকশা, নির্মাণ ও বিপণন করে। ইউরোপভিত্তিক এবং ফ্রান্স, ব্রিটেন ও স্পেনে তাদের বড় অফিস ও সংযোজন কারখানা রয়েছে।
বর্তমানে বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে বোয়িংয়ের ১৬টি এবং পাঁচটি ড্যাশ-৮। ১০টি নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হলে সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১টি। বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশের সঙ্গে বিমানের আকাশসেবার চুক্তি থাকলেও মাত্র ১৬টি দেশে এখন কার্যক্রম বিদ্যমান। বিমানবহরে নতুন এয়ারক্রাফটগুলো যুক্ত হলে বন্ধ রুটসহ নতুন নতুন রুট চালু হবে।