ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ ৭:২০ অপরাহ্ণ
বিশ্বের এক চল্লিশতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রধান ভিত্তিই হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। এই চেতনাতেই ভর করে ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন এবং আদর্শও অসাম্প্রদায়িক চেতনাতেই সমৃদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই সাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি আস্থা রেখেই বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের শিখরে নিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। দেশের অর্জিত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আজ গোটা দুনিয়ার কাছেই বিস্ময়। আর এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্নকে আগলে ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনার অদম্য প্রচেষ্টায়।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অসাস্প্রদায়িক বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তাই তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশেরও ভিত্তি সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা। প্রধানমন্ত্রী বহুবার বলেছেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও তার এই বক্তব্যকেই সমর্থন জুগিয়ে চলেছেন। তবে ষরযন্ত্রকারীরা এখনও সক্রিয়। তারা চাইছে ধর্মের নামে বাঙালি জাতিকে দুর্বল করতে। সেই ষরযন্ত্রকে মোকাবেলা করেই অবশ্য এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
জনগণ ফের শেখ হাসিনার ওপরই তাদের আস্থা রেখেছেন। ফের পাঁচ বছরের জন্য গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা লাভের পর প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমাদের সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছি।’ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতি আজ সর্বত্র প্রশংসিত। তার যোগ্য নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় হলেই জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানদন্ড অনুযায়ী কোনও দেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার। মানবসম্প সূচক ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের সূচক ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচক ৩২ ভাগের কম হতে হয়। কিন্তু আমাদের ভঙ্গুরতার সূচক ২৪ দশমিক ৮। অর্থাত সমস্ত বিভাগেই সাফল্য অর্জনের পরই বাংলাদেশ উন্নয়শীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশু মৃত্যু হার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতেও সক্ষম হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে সরকার। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর হার ছিল ৬১ শতাংশ। এখন ৯৭ শতাংশ শিশুই বিদ্যালয়ে যায়। সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠনকে শিক্ষাকে সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য কাঠামোরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্ভব হয়েছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমানো। শিশু জন্মের হারও কমেছে। ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যুর হার ১৪৯ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি মেডিকেল কলেজ। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেও বেশি জনশক্তি।
নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১। নারী শিক্ষার প্রসারে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। নারীর ক্ষমতায়ণ শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের বিষয়। বাংলাদেশের নারীরা আজ সবক্ষেত্রেই পুরুষদের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি নারী। সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের উতসাহিত করছে। নারীদের পু্ষ্টির বিষয়টিও মাথায় রেখেছে সরকার। তাই গর্ভাবস্থায় মৃত্যুর হারও অনেক কমেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব। গোটা দেশই আজ ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করতে পারছে। দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজারা। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। মিটেছে বিদ্যুতের সমস্যাও।
কৃষিতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টির কারণে প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে ধান উতপাদন। বহুমুখী চাষের মাধ্যমে কৃষিজীবীরা আজ উপকৃত। বাংলাদেশের মানুষ আজ আর ভাতের অভাবে মরেন না। দারিদ্রতার হারও অনেক কমছে। হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা-সহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোটা দেশের ২৪ শতাংশেরও বেশি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সুবিধা পাচ্ছেন। সকল শ্রেণীর মানুষের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখারও সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। আলোচনার মাধ্যমেই ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ আজ ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ সঠিক পথেই সোনার বাংলা হয়ে উঠতে চলেছে।বিশ্বের