ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪ ৯:১০ পূর্বাহ্ণ
আমদানি খাতে নেওয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এ খাতে ঘাটতি হয়েছে ৫৩৯ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে কোনো ঘাটতি ছিল না।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে আমদানি খাতে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধের চাপ এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ। এছাড়া সেবা ও অন্যান্য খাতের দায়দেনা পরিশোধের চাপও বেড়েছে।
গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ চেয়ে নেওয়া হয়েছিল বেশি। ফলে এ খাতে উদ্বৃত্ত ছিল ২২ কোটি ডলার, যা বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করেছে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে নতুন নেওয়া ঋণের চেয়ে পরিশোধ করা হয়েছে বেশি। ফলে এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩২ কোটি ডলার।
ট্রেড ক্রেডিট বা বাণিজ্যিক ঋণ খাতে গত অর্থবছরের একই সময়ে নতুন নেওয়া ঋণের চেয়ে পরিশোধ করা হয়েছিল বেশি। ফলে ওই সময়ে এ খাতে ডলারের প্রবাহ নেতিবাচক ছিল ২০৫ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেশি পরিশোধ করায় এতে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪৪ কোটি ডলার। মূলত বৈদেশিক নতুন ঋণ বাবদ ডলারের প্রবাহ কমার কারণেই বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সংকট চলছে।
এছাড়া সেবা ও অন্যান্য দায়দেনা খাতেও আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বেড়েছে। এ কারণে আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি বেড়ে রেকর্ড পরিমাণে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এ খাতে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫ কোটি ডলার। কারণ, ডলারের প্রবল সংকটের মধ্যেও ঋণের প্রবাহ বেশি ছিল।
কিন্তু এখন ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। বৈদেশিক ঋণের সুদহার বাড়ায় উদ্যোক্তারা একদিকে ঋণ নিচ্ছেন কম, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির আওতায় ঋণপ্রবাহ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর বাইরে বিদেশি সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের অনুকূলে ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে নতুন ঋণের প্রবাহ কমেছে। তবে বেড়েছে আগের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ। এতে ডলার বাজারে সংকট রয়েই গেছে। ফলে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩৯ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ৬৬৯ কোটি ডলার। ওই উদ্বৃত্ত কমে গিয়ে গত অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছে ২০৮ কোটি ডলার।
এ হিসাবে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই), শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ, বৈদেশিক ঋণ ও অন্যান্য দায়দেনার হিসাব এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ ৯০ কোটি ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ডলারে। শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতা আড়াই কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
আর্থিক হিসাবে ঘাটতির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে না। এ হিসাবে ঘাটতি বাড়তে থাকলে রিজার্ভও কমে যাবে। বর্তমানে রিজার্ভ কমে ১ হাজার ৯৯৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে দুই বছর ধরে চলমান ডলার সংকটের কারণে চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি মোকাবিলা করে উদ্বৃত্ত হয়েছে। অর্থাৎ আমদানি কমায় রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কিছুটা বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার আয় দিয়ে ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এতে চলতি হিসাবে ঘাটতি মোকাবিলা করে তা উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে বৈদেশিক ঋণসহ অন্যান্য দায় পরিশোধের চাপ বাড়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার অন্য হিসাবগুলোয় এখনো ঘাটতি রয়েছে।
মুদ্রার চলতি হিসাবে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ঘাটতি ছিল ৪৯২ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি কমে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৯৩ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এতে রেকর্ড ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬৭ কোটি ডলারে।
রপ্তানি, রেমিট্যান্স, সেবা খাতে আয় ও অন্যান্য আয় এবং আমদানি ব্যয়, সেবা খাতের ব্যয় ও অন্যান্য ব্যয় চলতি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত। এগুলোয় আয়ের চেয়ে ব্যয় কমেছে। যে কারণে উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতির কারণে এ খাতের উদ্বৃত্তের সুফল মিলছে না ডলারের বাজারে।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সার্বিক হিসাবেও ঘাটতি রয়েছে। মোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের হিসাব এতে প্রতিফলিত হয়। আমদানি ব্যাপকভাবে কমানোর পরও সব মিলে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে এ খাতে ঘাটতি হচ্ছে।
গত অর্থবছরের জুলাই ডিসেম্বরে এতে ঘাটতি ছিল ৬৪৫ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬৭ কোটি ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬৬৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৮২২ কোটি ডলার। এ খাতে ঘাটতি না কমলে ডলারের সংকট কাটবে না।