ভাইরাল ‘নিখোঁজ’ বিজ্ঞপ্তিগুলো কতটা সত্য, নাকি গুজব

ভাইরাল ‘নিখোঁজ’ বিজ্ঞপ্তিগুলো কতটা সত্য, নাকি গুজব

জাতীয় স্পেশাল

জুলাই ১৪, ২০২৪ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি ইন্টারনেটে বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছে শিশু-কিশোর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সংবাদ। নেটিজেনরা বলছেন, ইদানিং ফেসবুকে আগের চেয়ে অনেক বেশি নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেখছেন তারা। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে লেখালেখিও করেছেন অনেকেই। হারিয়ে যাওয়া এসব শিশুর বেশিরভাগই মাদরাসার শিক্ষার্থী হওয়ায় কেউ কেউ যড়যন্ত্র তত্ত্বের কথাও ভাবছেন।

নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিগুলো ফেসবুকে আলাদাভাবে প্রচারিত হলেও সেই বিচ্ছিন্ন পোস্টগুলোর স্ক্রিনশট একসঙ্গে করে ‘২৪ ঘণ্টায় ১০ শিশু নিখোঁজ’, ‘৪৮ ঘণ্টায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩৫ শিশু নিখোঁজ, ৭২ ঘণ্টায় ঢাকাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ৫০ শিশু নিখোঁজ’ শীর্ষক ক্যাপশনে বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট হওয়ার পরই সাম্প্রতিক নিখোঁজ সংক্রান্ত বিষয়টি অনেক বেশি আলোচনায় আসে এবং বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এই পোস্টগুলো ভাইরাল হওয়ার পর পরই পুলিশ সদর দফতরের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘শিশু নিখোঁজ’-সংক্রান্ত পোস্টগুলো পুলিশের নজরে এসেছে। এ ধরনের পোস্ট নিছক গুজব। এমন গুজবে বিভ্রান্ত বা আতঙ্কিত না হতে সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও শিশু নিখোঁজ এর বিষয়টি গুজব বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

আদতে এসব নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্টগুলো কি পুরোপুরি গুজব? এছাড়া বিষয়টি কতটা ভয়ের? বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে নিখোঁজ ঘটনাগুলোর আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানারের নতুন উদ্যোগ- ‘খোঁজ’
নিখোঁজ মানুষদের খুঁজে পেতে সহযোগিতা করবে এমন একটি ডেডিকেটেড প্লাটফর্ম করার পরিকল্পনা ছিল রিউমর স্ক্যানারের। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৭ জুন অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপ খোলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় রিউমর স্ক্যানারের নতুন উদ্যোগ ‘খোঁজ’র। সম্প্রতি নিখোঁজ বিষয়টি বাংলাদেশে টক অব দ্যা কান্ট্রি হওয়ায় সেই প্লাটফর্মের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার তাগিদ অনুভব হয়। এর ফলে গত ৩ জুলাই থেকে শুরু হয় ‘খোঁজ’র কার্যক্রম।

সম্প্রতি দেখা গেছে, কারো নিখোঁজ পোস্টগুলো যত বেশি শেয়ার হয়, তাকে খুঁজে পাওয়ার পোস্ট তত বেশি প্রচারিত হয় না। যার ফলে খুঁজে পাওয়ার পরও নিখোঁজ পোস্টগুলো কপি-পেস্ট হতে থাকে, যা অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আবার অনেক সময় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিগুলো যাচাই করাও প্রয়োজন হয়। অপরদিকে ডেডিকেটেড কোনো গ্রুপ না থাকায় বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করতে হয় ভুক্তভোগী পরিবারকে, অনেকসময় সেগুলো অনুমোদনও করা হয় না কিংবা অনেক দেরিতে অনুমোদন করা হয়। সবমিলে লস্ট-ফাউন্ড মানুষদের জন্য একটি ডেডিকেটেড প্লাটফর্ম থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে- যেখানে ভেরিফাইড নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হবে, নিখোঁজকে পাওয়া গেলে দ্রুত আপডেট প্রচার করা হবে এবং কাউকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলে গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমে তার পরিবারকে খুঁজে পেতে সহযোগিতা করা হবে।

‘খোঁজ’ হবে এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে কেউ হারিয়ে গেলে যেন সবাই ‘খোঁজ’ গ্রুপে এসে খোঁজ করেন এবং কাউকে কোথাও পাওয়া গেলে সেটাও যেন ‘খোঁজ’-এ জানানো হয়। লস্ট-ফাউন্ড মানুষদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হতে চায় ‘খোঁজ’।

‘খোঁজ’র কার্যক্রম শুরুর পর আমরা দেখতে পাই ‘নিখোঁজ’ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের চোখে ভেসে উঠে তাসলিমা বেগম রেনুর নাম। সেই রেনু বেগম যিনি ২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে খুন হয়েছিলেন। নিখোঁজ এই আতঙ্কের মধ্যে ছেলেধরা ভীতির পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেজন্য- ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকে রিউমর স্ক্যানারের ‘খোঁজ’ টিম নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিগুলো নিয়ে কেস স্টাডি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং কেস স্টাডির মাধ্যমে হারানোর কারণগুলো ধারাবাহিকভাবে রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশের অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপ এবং ‘খোঁজ’র ফেসবুক গ্রুপে প্রচার করে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

কেস স্টাডি প্রচারের মাধ্যমে মূলত রিউমর স্ক্যানারের ‘খোঁজ’ টিম ভীতি দূর করার চেষ্টা করে এবং এসব নিখোঁজ ঘটনার পেছনে ভয়ের কোনো কারণ পাওয়া যায়নি নিশ্চিত করে লোকজনকে আশ্বস্ত করে। রিউমর স্ক্যানারের ‘খোঁজ’ টিম গত দুই সপ্তাহে হারানোর পর ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট হয়েছে এবং পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়া গেছে এমন ৬০টিরও বেশি নিখোঁজের ঘটনার ওপর কেস স্টাডি করেছে এবং নিখোঁজ হওয়ার প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করেছে।

জেনে নিন ৬০টি নিখোঁজের ঘটনার কেস স্টাডি ও তাদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ।

নিখোঁজ কেস স্টাডি- ‘খোঁজ’র প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট 
শিশু-কিশোর নিখোঁজের বিষয়টি ফেসবুকে অনেক বেশি আলোচিত হওয়ার মাধ্যমে একরকম ভীতি সৃষ্টি হওয়ায় এবং যড়যন্ত্র তত্ত্বের বিষয় চলে আসায় ‘খোঁজ’ টিম ‘নিখোঁজ কেস স্টাডি’ প্রকাশ শুরু করে। রিউমর স্ক্যানার-এর অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপ এবং ‘খোঁজ’র ফেসবুক গ্রুপে ধারাবাহিকভাবে কেস স্টাডিগুলো প্রচার করা হয়। এখন পর্যন্ত ২০টির মতো কেস স্টাডি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে আরো কিছু পোস্ট করা হবে।

ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হয়েছে এবং পরে খুঁজে পাওয়া গেছে এমন বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ‘খোঁজ’ টিম। নিখোঁজ দাবির এই শিশু-কিশোররা কীভাবে হারিয়েছিল বা হারানোর কারণগুলো জানার চেষ্টা করেছে। এ প্রক্রিয়ায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দেওয়া মোবাইল নম্বরেই যোগাযোগ করে হারানোর কারণ অনুসন্ধান করেছে ‘খোঁজ’ টিম। কিছু ক্ষেত্রে ফেসবুক পোস্টে কিংবা পোস্টের কমেন্ট বক্সেও হারানোর কারণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, এই রিপোর্টে উল্লেখিত হারানোর কারণসমূহ হারিয়ে যাওয়া শিশু-কিশোরদের পরিবারের বক্তব্যের ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছে।

নিখোঁজের খবর প্রচারের মাধ্যম ফেসবুক
গত জুন মাস থেকে ধীরে ধীরে আলোচিত হয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই ফেসবুকের মাধ্যমে ট্রেন্ডিংয়ে আসে নিখোঁজ ইস্যু। এই সময়ে ফেসবুকে তুলনামূলক বেশি নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রচার হতে দেখা যায়। যা নিয়ে ফেসবুকে অনেক বেশি লেখালেখি হওয়ার ফলে অনেকের মাঝেই ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এর আগে কেউ নিখোঁজ হতো না কিংবা নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে পোস্ট হতো না বিষয়টি ঠিক এমনও নয়। তবে সম্প্রতি নিখোঁজ পোস্ট বেশি দেখার কারণ সম্ভবত বিষয়টির আলোচনায় আসা। আগে বিচ্ছিন্নভাবে নিখোঁজ পোস্টগুলো হওয়ায় তা তেমন আলোচনায় আসেনি। তবে এবার আলাদাভাবে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্টগুলো প্রচার হওয়ার পাশাপাশি ‘২৪ ঘণ্টা’ বা ‘৪৮ ঘণ্টা’ শীর্ষক বাক্যগুলো যুক্ত করে বিভিন্ন নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্টের স্ক্রিনশট একসঙ্গে প্রচার হওয়ায় এবং এগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে। এ ধরনের পোস্ট ভাইরাল হওয়ার ফলে আরো অনেকেই ‘নিখোঁজ’ কিংবা ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ লিখে সার্চ করেছেন, নিখোঁজ সম্পর্কিত পোস্টে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করেছেন, যার ফলে ফেসবুক অ্যালগরিদমও বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের আগ্রহ দেখে এ সম্পর্কিত পোস্ট আরো বেশি পরিমাণে নিউজফিডে দেখিয়ে থাকতে পারে।

আবার বাস্তবেও ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের দিনে কোনো শিশু হারিয়ে গেলে ঐ এলাকা ও তার আশপাশে মাইকিং, পোস্টারিং করা হতো। ফলে অন্য জেলা বা উপজেলার মানুষের ঐ নিখোঁজ সংবাদের বিষয়টি জানার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিগুলো দ্রুত ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ বা পেজে প্রচার হয়ে অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে। আবার এসব পোস্ট মানুষ মানবিক দায়িত্ব থেকে শেয়ার করে থাকে। ফলে আগের মতো এখন আর একটি নিখোঁজ ঘটনা একটি এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

নিখোঁজ কেস স্টাডি নিয়ে কাজ করার সুবাদে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও উপলব্ধি করেছি আমরা। চট্টগ্রামের এক অভিভাবক জানিয়েছেন, তাদের সন্তান এর আগেও একবার হারিয়ে গিয়েছিল। তবে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাকে পাওয়া যায়। তাই এবার হারানোর সঙ্গে সঙ্গেই (ভালোভাবে না খুঁজে) ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। সন্ধায় তার মামা তাকে বাড়ির আশপাশেই খুঁজে পায়। অন্তত দুটি ঘটনায় আমরা এরকম বিষয় দেখেছি যে, দুজন শিশু যথাক্রমে বাসার স্টোর রুম এবং গোয়াল ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ খোঁজাখুজি করে না পাওয়ায় তাদের বিষয়েও ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করা হয়।

সন্তানকে খুঁজে না পাওয়া গেলে বাবা-মায়েরা ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে থাকে। এ সময় মানসিকভাবেও তারা কিছুটা দূর্বল থাকে। তাই অল্প সময় খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়া গেলে খুব দ্রুতই তারা ফেসবুকে পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নেন কিংবা পরিবারের তরুন সদস্যরা ফেসবুকে পোস্ট করে দেন। ফেসবুকে পোস্ট করা যেমন সহজ, এর মাধ্যমে অল্প সময়েই নিজ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অধিকসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। ফলে নিখোঁজ বিজ্ঞাপন প্রচারের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমও হয়ে উঠেছে ফেসবুক।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হারানোর পর খুঁজে পাওয়া গেছে এমন শিশু-কিশোরদের মধ্যে অধিকাংশই হারানোর একইদিন অথবা পরেরদিন খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের অন্যতম একটি সমস্যা হলো অনেক সময় কাউকে খুঁজে পাওয়ার পরও নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্টটি কপি-পেস্ট হয়ে প্রচার হতে থাকে। মূলত পোস্টটি নতুন নতুন মানুষের কাছে যাওয়ায় এবং তারা খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে অবগত না থাকায় এমনটা হচ্ছে। এজন্য নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার পর দ্রুত নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত পোস্ট এডিট করে শুরুতেই খুঁজে পাওয়ার আপডেট যুক্ত করে দেওয়া কিংবা নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্ট ডিলিট করে যেসব প্লাটফর্মে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিটি প্রচারিত হয়েছিল সেসব স্থানে নতুন পোস্টে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি জানানোও জরুরি।

যেভাবে আলোচনায় নিখোঁজ ইস্যু
কোনো একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘নিখোঁজ’ কিংবা ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’ কিওয়ার্ডটি লিখে ফেসবুকে সার্চ করে দেখতে পান ঐদিন অনেকগুলো নিখোঁজের পোস্ট হয়েছে। এরপর তিনি সেসব পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে একসঙ্গে একটি পোস্টে সংযুক্ত করে চারপাশে অনেক বেশি নিখোঁজ হচ্ছে, হঠাৎ এমন বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ তুলে ধরে ফেসবুক পোস্ট করেন। একইভাবে আরো অনেকে ফেসবুকে সার্চ করে স্ক্রিনশট নিয়ে এভাবে পোস্ট করেন, যা পরবর্তীতে কপি-পেস্ট হয়ে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি, পেজ ও গ্রুপে প্রচারের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। বিষয়টির আলোচনায় আসা ভীতি তৈরির পাশাপাশি সম্ভবত এ সময়টায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্টের প্রবণতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রেখেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক সময় একজনকে কয়েক ঘণ্টা পাওয়া যায়নি, সেজন্যও নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট হয়েছে। হারানো শিশুদের মধ্যে অধিকাংশই মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী হওয়ায় অনেকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বও লিখেছে। সর্বোপরি অতি আলোচনায় আসায় বিষয়টি নিয়ে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।

শিশু-কিশোর নিখোঁজের বিষয়টি কি গুজব?
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের বিবৃতিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিশু নিখোঁজের আলোচিত বিষয়টিকে ঢালাওভাবে গুজব হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বিষয়টি এমন নয়। এটি সত্য যে নিখোঁজের এই অতি আলোচনা এবং ফেসবুকে এর পেছনে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খোঁজার বিষয়গুলো অতিরঞ্জিত এবং বিভ্রান্তিকর। কিংবা খুঁজে পাওয়ার পরও অনেক নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি কপি-পেস্ট হয়ে প্রচারিত হওয়ার বিষয়টিও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তবে বিষয়টিকে ঢালাওভাবে গুজব বলা যায় না।

রিউমর স্ক্যানারের ‘খোঁজ’ টিম ৬০টিরও বেশি নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্ট এবং তাদের খুঁজে পাওয়ার আপডেটের পোস্ট দেখেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে তাদের সন্তানের নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য খোঁজ না পাওয়ার বিষয়টি সত্য এবং খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ার ফলেই মূলত তারা ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেছেন।

‘খোঁজ’ টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সম্প্রতি হারানোর পেছনে বড় কারণ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের না বলে মাদরাসা থেকে পালিয়ে লুকিয়ে থাকা কিংবা কোনো আত্মীয়ের বাসায় চলে যাওয়া। অন্যতম আরেকটি কারণ হলো না বলে ঘুরতে যাওয়া কিংবা ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া।

অপরদিকে, শিশু অপহরণ কিংবা শিশু পাচারের ঘটনা কিন্তু সংবাদপত্রে নিয়মিত দেখা যায়। অনুসন্ধানে এরকম দু-তিনটি ঘটনা দেখা গেছে, যেখানে অপহরণ চেষ্টা করা হয়েছিল। তাই ঢালাওভাবে নিখোঁজ ঘটনাগুলোকে গুজব হিসেবে চিহ্নিতের চেয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এসব হারানোর ঘটনার পিছনে যে কারণ সেগুলোতে ভয়ের কিছু নেই বলে প্রচার করে আশ্বস্ত করাই শ্রেয়।

৬০টি নিখোঁজ ঘটনার কেস স্টাডির বিশ্লেষণ- মাদরাসা থেকে পালানোই হারানোর সবচেয়ে বড় কারণ
সম্প্রতি হারানো শিশু-কিশোরদের মধ্যে দেখা গেছে, অধিকাংশই মাদরাসা শিক্ষার্থী, নির্দিষ্ট করে তাদের অধিকাংশই হাফেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ৬০টি নিখোঁজ ঘটনার মধ্যে অন্তত ৪৫টি মাদরাসা সম্পর্কিত। এদের মধ্যে ৩০ জন সেচ্ছায় নিরুদ্দেশ হয়েছে। যাদের পরবর্তীতে এক থেকে পাঁচদিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে। হারানোর দুই দিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। মাদরাসায় পড়াশোনার চাপ, ঠিকমতো পড়াশোনা না করায় শিক্ষকের কড়া শাসন তাদের নিরুদ্দেশ হওয়ার অন্যতম কারণ। এসব বাচ্চার অভিভাবকরা বলছেন, তাদের বাচ্চা অমনোযোগী হওয়ায় শিক্ষকরা শাসন করেন এবং পড়ার চাপ দিলে তারা পালিয়ে যায়।

এসব ঘটনার কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা পালিয়ে কোনো আত্মীয়ের বাসায় যায় কিংবা আশেপাশের কোনো স্টেশন, বাজার কিংবা মসজিদে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। কেউ কেউ ট্রেন বা বাসে করে অন্য কোথাও চলে যায়। এমনকি দুটো ঘটনায় দেখা গেছে দুজন শিক্ষার্থী পালিয়ে যাওয়ার পর দোকানের কাজে যুক্ত হয়েছে। যারা আত্মীয়ের বাসায় যায় কিংবা আশেপাশে লুকায় তাদের হারানোর দিন কিংবা দু-এক দিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়।

এসব শিশু-কিশোরদের হারানোর অন্যতম আরেকটি কারণ পরিবারকে না বলে ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া। অন্তত ১২টি ঘটনায় হারানোর পেছনের কারণ হিসেবে এমনটি জানা গেছে। যেমন- সিয়াম ও রিয়ান নামে দুই সহপাঠী লক্ষ্মীপুর থেকে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে কাউকে কিছু না বলে কক্সবাজারে বেড়াতে যায়। তাদের খুঁজে না পেয়ে পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়ে, ফেসবুকে দেওয়া হয় তাদের নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি। পরবর্তীতে কক্সবাজারে দিগ্বিদিক ঘুরতে থাকা সিয়াম ও রিয়ানকে এক ভদ্রমহিলা তার বাসায় নিয়ে যান, খাওয়ান এবং ওদের থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে বাসায় ফোন করে দেন। এভাবে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়।

অন্তত চারটি ঘটনায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে চলে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা গেছে। চট্টগ্রামের সিয়াম আকন বাবার বকাঝকায় অভিমান করে বাসা থেকে বের হয়ে অপরিচিত জায়গায় চলে যায়। অনেক চেষ্টায় ৬দিন পর সিয়ামকে খুঁজে পায় তার পরিবার।

সিলেটের মাদরাসা শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন মাদরাসা থেকে বাসায় ফেরার পথে অটোরিকশায় ওঠে। এ সময় অটোচালক তাকে কোমল পানীয় খাওয়ালে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এর মধ্যে আফজলকে সিলেট শহরে নিয়ে যায় অটোচালক এবং তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। এরপর তাকে সিলেট শহরের একটি জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এক দোকানে গিয়ে আফজাল তার পরিবারকে কল দেয় এবং ঐদিনই তাকে খুঁজে পায় তার পরিবার। এরকম অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে হারিয়ে গিয়েছে এমন অন্তত ৪টি ঘটনা দেখা গেছে।

চট্রগ্রামের মাদরাসা শিক্ষার্থী মুন্সি জায়েদ আব্দুল্লাহ নিখোঁজ হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে খুঁজে পাওয়ার পর জানা গেছে, মাদরাসায় যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকলে এক সিএনজিচালক তাকে মাদরাসায় নামিয়ে দেবে বলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গাড়িতে তুলে নেয়। এ সময় তাকে ভিন্ন রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে জায়েদ আব্দুল্লাহ জোরে চিৎকার শুরু করেন। ফলে কালো শার্ট পরিহিত সিএনজিচালক তাকে নামিয়ে দিতে বাধ্য হন। এরকম অপহরণ চেষ্টার অন্তত ২টি ঘটনা দেখা গেছে।

এছাড়া আরো ০৯টি হারানোর ঘটনা রয়েছে, যেগুলো ‘অন্যান্য’ তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ৯টি ঘটনার মধ্যে রয়েছে- কল্পনা নামে এক কিশোরী গৃহকর্মীর বাসার কর্তার কাছে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ও বাসার স্টোর রুম, গোয়াল ঘরে ঘুমিয়ে পড়া কিংবা গোসল না করায় মা মারতে পারে সেই ভয়ে শিশুর বাসার পিছনে লুকিয়ে থাকার মতো ঘটনা।

নিখোঁজ কেস স্টাডি যা বলছে
উল্লেখিত ৬০টি নিখোঁজের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ঘটনাই মূলত সেচ্ছায় পলায়নের কিংবা ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বেশি হারালেও তাদের অধিকাংশকেই দ্রুত পাওয়া গেছে। এসব ক্ষেত্রে নিজে থেকে লুকানো, ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া, অভিমান করে চলে যাওয়া ইত্যাদি কারণই উল্লেখযোগ্য। এর পেছনে আদতে কোনো সংঘবদ্ধ চেষ্টা কিংবা ষড়যন্ত্র পাওয়া যায়নি। অজ্ঞান পার্টি, শিশু অপহরণ কিংবা পাচারের ঘটনা যেহেতু পত্রিকার পাতায় নিয়মিত দেখতে পাওয়া যায় তাই এ বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকা উচিত এবং বাচ্চাদেরও সচেতন করা উচিত।

৬০টি নিখোঁজ ঘটনার তালিকা ও বিস্তারিত 
যেহেতু সব মোবাইল নাম্বার নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত পাবলিক পোস্ট থেকে পাওয়া গেছে, তাই বিস্তারিত তালিকায় না মুছেই নাম্বারগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

১. হারানো ব্যক্তির নাম: রিয়াজুল হাসনাত, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: গত ২৯ জুন কাউকে কিছু না বলে কক্সবাজার চলে যায়। তিনদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর চতুর্থদিন নিজে থেকেই বাড়িতে চলে আসে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন রিয়াজুল হাসনাতের বোন, ০১৮২৮৫৯৩৫৮৩)

২. নাম: আল ইয়াশা জেদনী, ফেনী
হারানোর কারণ: হাফিজি মাদরাসায় পড়াশোনা ভালো না লাগায় অন্য এক ছাত্রের সঙ্গে মাদরাসা ছেড়ে চলে যায়। পরে নিখোঁজ ব্যক্তির বাবার ফেসবুক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন আল ইয়াশা জেদনীর পিতা আলী হোসাইন মনির, 01818751275)

৩.  নাম: শাহান মিয়া এবং ফাহিম, হবিগঞ্জ
হারানোর কারণ: ঈদের ছুটি শেষে গত ২৭ জুন মাদরাসায় ফেরার সময় বাস তাদের ভুল জায়গায় নামিয়ে দেয়। তারা সময়মত মাদরাসায় না পৌঁছালে ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করা হয়। পরে তারা নিজেরাই চলে আসে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন তাদের শাহীন নামে এক চাচা, 01714204814)

৪. নাম: মুরাদ এবং সাকিবুল, হরিপুর, ঠাকুরগাঁও
হারানোর কারণ: গত ৬ জুলাই সকাল ৬টার সময় বাড়ির পাশের মাদরাসায থেকে পালিয়ে যায়। ওদের কাছে ৩০০ টাকা ছিল, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়া অবধি তারা দুই বন্ধু ঘোরাঘুরি করে। এরপর এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠে। পরেরদিন সকালে তাদের খুঁজে পায় পরিবার।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মুরাদের বড় ভাই ওয়াহিদুল হাসান ফরহাদ, ০১৭৪৭২৮০৪৬৭)

৫. নাম: আব্দুল্লাহ মাসুদ, ঢাকা
হারানোর কারণ: সে আর পড়ালেখা করতে চায় না, মাদরাসায় যেতে চায় না, তাই গত ৩ জুলাই কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে নানা বাড়ি চলে যায়। যতক্ষণে জানা যায় তার আগেই ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন আব্দুল্লাহ মাসুদের মা আম্বিয়া বেগম, 01595025903)

৬. নাম : মোহাম্মদ বিন ফজলুল হক, রাউজান, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: গত ৩০ জুন বাসা থেকে মাদরাসার উদ্দেশে বের হয়ে মাদরাসা না গিয়ে কাউকে কিছু না বলে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরবর্তীতে কক্সবাজার না গিয়ে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে ফিরে আসে। এর মধ্যে সে ১ তারিখ দিন ও রাত ঐ এলাকার আশপাশেই বিভিন্ন মসজিদ ও দোকানে ঘোরাফেরা করে। ২ জুলাই নিজে থেকেই মাদরাসায় ফিরে আসে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন ফজলুল হক, সম্পর্কে বাবা, 01823843802)

৭. নাম: মো. ইয়াসিন আরাফাত মিনহাজ, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ. বাড়ি থেকে মাদরাসার উদ্দেশে রওনা দেয় কিন্তু মাদরাসায় পড়বে না বলে সেখানে না গিয়ে পরবর্তীতে বাসের টিকিট কেটে চট্টগ্রাম শহরে চলে যায়। সেখানে এক লোক তাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে দেখে পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়। তার নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থানায় জিডি করে রাখায় পুলিশ সরাসরি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন বড় ভাই মো. মিজান উদ্দিন, 01812442246)

৮. নাম: মো. ইফতেখার জিহাদ, নরসিংদী
হারানোর কারণ: মাদরাসার উদ্দেশে বের হয়ে মাদরাসায় না গিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। তাকে খুঁজে না পেয়ে নিখোঁজ বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়। পরেরদিন ফুফুর বাসায় পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন, জিহাদের খালু মিজানুর রহমান, 01818362007)

৯. নাম: সিহাম, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: মাদরাসায় পড়াশোনা করবে না বলে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। তাই পরবর্তীতে ছেলের ইচ্ছে অনুযায়ী সাধারণ বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করা হয়। এরপর স্মার্টফোন কেনা নিয়ে পুনরায় ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরে চলে যায়। পরবর্তীতে সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার বাসায় এলে আমি তাকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন সিহামের খালাতো ভাই মঈন উদ্দিন, 01874871627)

১০. নাম: মোহাম্মদ তাসিন, রাউজান, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ : বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে কাউকে কিছু না বলে কাকির বাসায় চলে যায়। তাকে খুঁজে না পেয়ে নিখোঁজ পোস্ট করা হয়। পরে কাকির বাসায় পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন সাইদুল ইসলাম ফাহিম, বড় ভাই, 01836273834)

১১. নাম: তাহমিদুল ইসলাম, বাগেরহাট
হারানোর কারণ : ঠিকমতো পড়েনি। যার ফলে মাদরাসা শিক্ষক বকে ও শাস্তি দেয়। তাই অভিমান/ রাগে ঢাকা চলে যায়। পরবর্তীতে উপলব্ধি করার পর বাসে করে নিজেই বাসায় ফেরে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন আতাউর রহমান সম্পর্কে বড় ভাই, 01757212836)

১২. নাম: মো. সিয়াম আকন, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: বাবা বকাঝকা করায় সিয়াম বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অপরিচিত জায়গায় চলে গেলে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে, নিখোঁজের ৬ দিন পর চট্টগ্রামের লালদীঘি এলাকায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
(স্টেটমেন্ট প্রদানকারীর নাম মামুন আকন, সিয়ামের পিতা, ০১৯৯১২০৪৮৫৭)

১৩. নাম: ফাহিম, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ
হারানোর কারণ: ফাহিম একজন হাফেজি বিভাগের ছাত্র। পড়ালেখার প্রতি তার অমনোযোগী এবং হাফেজি পড়া তার জন্য একটু কঠিন এবং তার উস্তাদ একটু শাসন করেছিল। এজন্য সে গত ৬ জুলাই সকালে মাদরাসা থেকে পালিয়ে ট্রেনে করে গফরগাঁও থেকে কমলাপুর চলে যায়। পরে সিলেটের ট্রেনে উঠলে এক ভদ্রলোক তাকে ময়মনসিংহের লোকাল ট্রেনে উঠিয়ে দেন। এভাবে তাকে ১ দিন পর পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মা সাবিনা ইয়াসমিন, এবং ফাহিমের দুলাভাই।)

১৪. নাম: মো. রেজওয়ান শরীফ, মাদারীপুর
হারানোর কারণ: দোকানে যাওয়ার কথা বলে মাদরাসা থেকে বের হয়। হাতে টাকা থাকায় ঘুরতে চলে যায়। পরে একদিন পর খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমানে মাদরাসাতেই আছে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন কাওছার আহমেদ, রেজওয়ানের মাদরাসার শিক্ষক, 01718455778)

১৫. নাম: মোছা. জোবাইদা (১১), বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: মাদরাসায় যাওয়ার পথে একা একা অপরিচিত জায়গায় ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যায়। একদিন পরই খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন জোবাইদার চাচা রাজিউল্লাহ, 01858557234)

১৬. নাম: কিবরিয়া ফকির, পিরোজপুর
হারানোর কারণ: মাদরাসা থেকে বের হয়ে পিরোজপুর শহরে নিজে নিজে ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যায়। পরে ৪ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মো. ইব্রাহিম, কিবরিয়ার চাচাতো ভাই, ০১৭৪৯৬৪৮৯০৩)

১৭. নাম: আল আব্দুল মারুফ, চাঁদপুর
হারানোর কারণ: মাদরাসায় হোস্টেল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তার ছোট চাচা তাকে ৩ দিন পর খুঁজে পায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন পিতা গিয়াস উদ্দিন মুন্সি, মোবাইল : 01804429566)

১৮. ফাহিম আহমেদ সিয়াম, সাভার, ঢাকা
হারানোর কারণ: বাসা থেকে মাদরাসায় খাবার নিয়ে যাওয়ার পথে মাদরাসা না গিয়ে হারিয়ে যায়। গত ৩ জুলাই একটি রেস্টুরেন্টে কাজে জয়েন করে। ঐ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে ফাহিমের নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পেয়ে তার বাসায় যোগাযোগ করে। এভাবে ফাহিমকে ৮ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।
(সূত্র: ফাহিমের ভাইয়ের স্টেটমেন্ট এবং খুঁজে পাওয়ার আপডেট ফেসবুক পোস্ট)

১৯. নাম: মো: আলভি
হারানোর কারণ: বাসার বিল্ডিংয়ের স্টোর রুমে একা ঘুমিয়ে পড়েছিল। কাউকে না বলে ওখানে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ায় এবং অনেকক্ষণ খুঁজে না পাওয়ায় দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে তাকে পাওয়া যায়।
(সূত্র: আলভির পিতাকে ট্যাগ করে দেওয়া ফেসবুক পোস্ট)

২০. নাম: ফাহিম শাহরিয়ার সাদিক, সিরাজগঞ্জ
হারানোর কারণ: অভিমান করে বাসা থেকে চলে যায়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। (সূত্র: ওসি সিরাজগঞ্জের ফেসবুক পোস্ট)

২১. মো. তাওহীদ, কোনাবাড়ী, গাজীপুর
হারানোর কারণ: মাদ্রসা থেকে পালিয়ে নিজে নিজে লুকায় থাকে।
(সূত্র: তাওহীদের পিতার ফেসবুক কমেন্ট)

২২. নাম: মুন্সি জায়েদ আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: বাসা থেকে কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে মাদরাসা। সকালে একবার মাদরাসায় দিয়ে আসলে সে বাসায় চলে আসে,  ওর আম্মু বকা দেয়। পরবর্তীতে আবার ওর আব্বু দিয়ে আসতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে হতে ও রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। রাস্তায় একটি সিএনজি আসে এবং এক কালো শার্ট পরিহিত ব্যক্তি মাদরাসার সামনে নামিয়ে দিবে বলে জোর করে তুলে নিয়ে ভিন্ন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যায়। এটা দেখে জোরে কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে পথে নামিয়ে রেখে চলে যায়।
(সূত্র: জায়েদ আব্দুল্লাহর ভিডিও স্টেটমেন্ট, প্রতিবেশী রবি, সেনবাগের স্টেটমেন্ট ও ফেসবুক পোস্ট)

২৩. জুনায়েদ, শাহাজামাল, কেরাণীগঞ্জ
হারানোর কারণ: দুইজনই একসঙ্গে মাদরাসায় পড়াশোনা করে। মাদরাসা ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যায় গত ৩০ জুন। পরবর্তীতে ভয়ে আর মাদরাসায় ফেরেননি। তবে একইদিনে সন্ধার পর খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন, চাচা মোহাম্মদ শাহ আলম, 01884587257)

২৪. নাম: আব্দুল্লাহ রাহীম, ফেনী
হারাণোর কারণ: পড়ালেখা ভালো লাগে না। তাই মাদরাসা থেকে গত ৩০ জুন পালিয়ে গিয়ে তেজগাঁওয়ের কোথাও লুকিয়ে ছিলো। দুইদিন পর সে নিজেই ফিরে আসে।
(সূত্র:  আব্দুল্লাহ রায়হান, আব্দুল্লাহ রাহীমের বড় ভাই, 01316-842223)

২৫. নাম: মো. সায়েম, বরিশাল
হারানোর কারণ: মাদরাসার পড়াশোনায় মন বসেনি। দুষ্টুমি করে মাদরাসা থেকে পালিয়েছিল। পরবর্তীতে স্বেচ্ছায় আবার ফেরত আসছে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন সায়েমের বাবা, লোকমান সরদার, 01922137455)

২৬. নাম: আরাফাত মীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কয়দিন পর পাওয়া যায়: ২ দিন
হারানোর কারণ: ঈদের ছুটির পর বহুদিন মাদরাসায় যায়নি আরাফাত। গত ৭ জুলাই ভোরে তাকে মাদরাসায় পাঠানোর জন্য ঘুম থেকে তুললে একটু পর রুমে গিয়ে তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরে ঐদিন বিকেলে এক ব্যক্তি আরাফাতকে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখতে পেয়ে ছবি তোলেন। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় ৯ জুলাই আরাফাতকে খুঁজে পায় তার পরিবার।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন সাইফুল আলম রিফাত, আপন ভাই, 01764867436)

২৭. নাম: মোহাম্মদ নাহিদুর রহমান, সুনামগঞ্জ
হারানোর কারণ: সন্ধ্যার পর নাহিদ বাড়ির পাশে গোয়াল ঘরে যায় এবং ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পরিবারের সবাই তাকে খুঁজে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করে, ফেসবুকে পোস্টও হয়। এর কিছু সময় পর নাহিদ বাসায় আসে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন পিতা মো. সাহিরুল ইসলাম , 01781762411)

২৮. নাম: মো: অলি উল্লাহ, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: গত ৩০ জুন মাদরাসা থেকে সকাল বেলা বাড়িতে নাস্তা করতে আসার পর মাদরাসায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়। কিন্তু পরিবার জানতে পারে সে মাদরাসায় যায়নি। থানায় জিডি ও অনেক খোঁজার পর গত ৯ জুলাই এক ভদ্রলোকের মাধ্যমে জানতে পারে শহরের (নতুন ব্রিজের আশপাশে) এক নতুন কুলিং কর্নারে জব করে। খবর পেয়ে ছেলের বড় ভাই সেখান থেকে ছেলেটিকে নিয়ে আসে। বন্ধুদের প্ররোচনায় সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কুলিং কর্নারে জব করে বলে তার ভাই জানায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন বড় ভাই ওসমান গনি, ০১৮৭৩১৬৫২৮০)

২৯. নাম: তামজিদ হাসান ফাহিম, লক্ষ্মীপুর
হারানোর কারণ: ফোনে মা বকাঝকা করায় ৩০ জুন মাদরাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে ৬ জুলাই তাকে সদরঘাট থেকে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মামাতো ভাই তাসকিন আহম্মেদ জুয়েল, ০১৬৪৩২৫৮০১৩)

৩০. নাম: তাহিরা সালসাবিল মুন্তাহা, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: মুন্তাহার বাবা-মা হজে যাওয়ায় তাকে এবং তাদের বাসার কাজের মেয়ে শারমিনকে চাচার বাসায় (চকবাজার, চট্টগ্রাম) রেখে যাওয়া হয়। গত ৩ জুলাই বিকেলে কাজের মেয়ে শারমিন মুন্তাহাকে তার চাচার বাসা থেকে (চকবাজার, চট্রগ্রাম) থেকে কাউকে কিছু না বলে নিজের বাড়ি বাঁশখালীতে নিয়ে যায়। ঐদিন মুন্তাহাকে খুঁজে না পাওয়ায় চকবাজার থানায় জিডি করে তার পরিবার। পরেরদিন সকালে শারমিনের পরিবার থেকে ফোন আসলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মুন্তাহার বাবা এবং চাচা, 01711117786)

৩১. নাম: সাইদ ইসলাম, রাজশাহী
হারানোর কারণ: সাধারণত বন্ধুদের সঙ্গে মেশে না কিন্তু সেদিন কাউকে না বলে স্কুলে যাওয়ার পর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তারই এক বন্ধুর বাসায় বন্ধুর সঙ্গে চলে যায়। পরবর্তীতে সন্ধ্যার পর পর নিজেই বাড়িতে ফিরে আসে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন সাঈদের চাচা, 01321064469)

৩২. নাম: মো. সিয়াম, বেনাপোল
হারানোর কারণ: হেফজ মাদরাসার চাপের কারণে সেখান থেকে পালিয়ে ঢাকা চলে যায়। করোনার পূর্বে বাবার কর্মস্থল ঢাকা হওয়ায় সেদিকটা তার চেনা ছিল, তাই বেনাপোল থেকে পালিয়ে সরাসরি ঢাকা চলে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেদিন রাতেই বরিশাল নানাবাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে তাকে পরে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন, দূর সম্পর্কের চাচা, 01719919782)

৩৩. নাম: কল্পনা আক্তার
হারানোর কারণ: কল্পনা মিরপুরের একটি বাসায় কাজ করতো। বাসার কর্তা কল্পনার চুল কেটে দেয়। পরে গত ২১ জুন সে ঐ বাসা থেকে পালিয়ে যায়। পরে আরেক মহিলা তাকে রাস্তায় পেয়ে তার বাসায় নিয়ে যায় এবং কাজ করতে বলে। কিন্তু সে কাজ করবে না বললে ৯ দিন আটকে রাখা হয়। এরপর ঐ বাসা থেকে পালিয়ে আসে। রাস্তায় আরেক মহিলা তাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? বিস্তারিত বলার পর তাকে তার নানাবাড়ি নেত্রকোণার গাড়িতে তুলে দেয়। ১১ দিন পর গত ২ জুলাই তাকে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন কল্পনার চাচা মো. সাদ্দাম, 01321383818)

৩৪. নাম: আফজাল হোসেন, সিলেট
হারানোর কারণ: আফজাল মাদরাসা থেকে আসার পথে অটোরিকশায় ওঠে। অটো চালক তাকে কোমল পানীয় খাওয়ায় এবং সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এর মধ্যে আফজলকে সিলেট শহরে নিয়ে যায় অটোচালক এবং তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা নিয়ে নেয়। এরপর তাকে সিলেট শহরের একটি জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এক দোকানে আফজাল গিয়ে পরিবারকে কল দেয় এবং ঐদিনই তাকে খুঁজে পায় তার পরিবার।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন আফজলের বাবা মুহা. মোতালিব হোসেন, 01719984372)

৩৫. নাম: নাবিল ইসলাম ফয়সাল, বরিশাল
হারানোর কারণ: মায়ের সঙ্গে রাগ করে কাউকে কিছু না বলে বন্ধুর বাসায় চলে যায়। পরে রাতে নিজেই বাসায় ফেরে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন নাবিলের মামা মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, 01724055588)

৩৬. নাম: আব্দুল্লাহ রাহীম, তেজগাঁও
হারানোর কারণ: ৫৪ ঘণ্টা পর খুঁজে পাওয়া গেছে। নিজে পালিয়ে যায়। জিনের সমস্যা আছে বলে পরিবার থেকে জানানো হয়েছে। নিজে থেকে আগেও একবার হারিয়ে গিয়েছিল।
(সূত্র: আব্দুল্লাহ রাহীমের বোনের ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্টস)

৩৭. নাম: সিয়াম ও রিয়ান, লক্ষ্মীপুর
হারানোর কারণ: কাউকে কিছু না বলে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে দুই বন্ধু মিলে কক্সবাজার বেড়াতে যায়।
(সূত্র: সিয়ামের বড় ভাইয়ের ফেসবুক পোস্ট)

৩৮. নাম: রবিউল ইসলাম রাফি, ভৈরব
হারানোর কারণ: উত্তরায় নিজ মাদরাসা থেকে বিমানবন্দর এলাকার খালার বাসায় যায়। খালার বাসা থেকে আর মাদরাসায় ফেরেনি। বুধবার থেকে তার আর কোনো খোঁজ না পাওয়ার পর শুক্রবার বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় মাদরাসার ছাত্ররাই খুঁজে পায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন রাফির খালাতো ভাই আসিফ ইকবাল প্রিন্স, 01640828775)

৩৯. নাম: মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম (সাবালক)
হারানোর কারণ: চট্টগ্রাম চকবাজারে ছিনতাইকারীরা হাতে পরে। ছিনতাইকারীরা তুলে নিয়ে গিয়ে মোবাইল, টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে সদরঘাটে নামিয়ে দেয়।
(সূত্র: মুজিবুর রহমানের ভাই আসিফুর রহমানের ফেসবুক পোস্ট, 01818112965)

৪০. নাম: মো. তামিম
হারানোর কারণ: মাদরাসার শিক্ষক মারার কারণে সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে না গিয়ে ওর মামা বাড়ি চলে আসে। সকালবেলা মাদরাসা থেকে বের হয়ে এখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না তাই আমরা তার সন্ধানে খোঁজাখুঁজি চালাই এবং ফেসবুকেও পোস্ট করি।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন তামিমের মামা ইমরান, 01648825113)

৪১. নাম: মো. বক্কর, বগুড়া
হারানোর কারণ: তার মা জানান, বাড়ি থেকে একা একা মাদরাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল মাঝপথে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে নিজেই বাড়িতে ফিরে আসে। অপরদিকে তাকে নিয়ে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, মাদরাসা থেকে পালিয়ে নিজ ইচ্ছায় আত্মগোপনে ছিল।

৪২. নাম: মনির হোসেন (সাবালক)
হারানোর কারণ: পেশায় চক্ষু চিকিৎসক মনির হোসেন তার এক রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করতে যান। সেখানে তার জুসে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে মোবাইল, টাকা, কার্ড ইত্যাদি নিয়ে তাকে একটি হোটেলে রেখে চলে যাওয়া হয়। পরে জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেই বাসায় ফেরেন।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মনির হোসেনের জেঠাতো ভাই রাকিব হাসান 01888042540)

৪৩. নাম: শাওন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
হারানোর কারণ: গত ৩০ জুন বাড়ি থেকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়। জানাজানি হলে পরেরদিন বিকেলে বাড়ি থেকে হাফ কিলোমিটার দূরেই পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন ছেলের ছোট চাচা, 01405025358)

৪৪. নাম: মো. সাখাওয়াত, সাতকানিয়া
হারানোর কারণ: মাদরাসায় পড়াশোনার চাপে বেরিয়ে গিয়েছিল। সকালে গেলেও সন্ধ্যায় নিজে থেকেই চলে আসে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি পোস্টকারী প্রতিবেশী বড় ভাই মো. আরিফ, 01872021752)

৪৫. নাম: ফাহিম আহমদ, সিলেট
হারানোর কারণ: হাফিজি ও আলিয়া দুটোতেই পড়াশোনায় থাকায় পড়াশোনার চাপ বেশি। তাই, চলে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পুলিশের সাহায্যে খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন বড় ভাই জামিল আহমদ, 01787871982)

৪৬. নাম: মু. বিল্লাল হোসেন আকাশ, কুমিল্লা
কারণ: নিজে নিজে চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিল। সেখানে একজন তাকে দেখে তার নিজের কাছে রাখেন। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ফিরে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন তার বোন, 01869976005)

৪৭. নাম: মোহাম্মদ রিয়াজ, টেকনাফ
হারানোর কারণ: মাদরাসার পড়ার চাপে নিজে নিজেই লুকিয়েছিল। পরবর্তীতে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন বড় ভাই রাশেদুল ইসলাম, 01637033872)

৪৮. নাম: সামিয়া
হারানোর কারণ: গোসল করতে না যাওয়ায় মা মারতে পারে ভেবে ভয়ে পাশের বাড়ির বেড়ার চিপায় লুকিয়ে থাকে। রাতের দিকে সবাই মিলে তাকে খোঁজাখুঁজি করার সময় সেখানে লাইট পড়লে তাকে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকেই বিষয়টিকে ভুত এবং জ্বীনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছে। তারা বলছেন হয়তো জ্বীনে ধরেছে তাই ওখানে গিয়ে ছিল।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন চাচাতো ভাই সুজন,  01623481196)

৪৯. নাম: মারুফ
হারানোর কারণ : হেফজ মাদরাসার প্রেসারের কারণে সেখান থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসে। বিষয়টি আমরা না জানার কারণে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন বড় ভাই আরমান, 01814941628)

৫০. নাম: মো: হারুন অর রশিদ (বয়স্ক)
হারানোর কারণ: চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। প্রথম ঢাকায় আসা এবং ঠিকানা ভুলে যাওয়ার স্বভাবের কারণে বিকেলে মসজিদের নামাজ পড়তে গিয়ে বাসা চিনে আর ফিরে আসতে পারেননি। এজন্য রাতে এলাকারই একটি মসজিদে ঘুমিয়েছিলেন। পরদিন সকালে তাকে খুঁজতে বের হয়ে মসজিদের বাইরে তাকে দেখতে পায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন ভাতিজা ফাইয়াজ খালিদ সোহান, নাম্বার: 01736786689)

৫১. নাম: সায়াদ, মোয়াজ, উত্তরা, ঢাকা
হারানোর কারণ: সোমবার বিকেল ৫:৩০ এর দিকে মাদরাসার দিকে যাওয়ার সময় পথে চার-পাঁচজন লোকের সঙ্গে কথা হয়। এক পর্যায়ে তাদের আর কিছুই মনে থাকেনি। পরেরদিন রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফেরে। রাস্তার পাশে নিজেদের দেখতে পান অচেতন অবস্থায়। পরবর্তীতে নিজেরা বাসায় ফিরে আসেন। অনেকটা মাতালের মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল. সারাদিন টানা ঘুমিয়ে, বিশ্রাম নিয়ে এখন অবস্থা ভালো। অজ্ঞান/অচেতন হওয়ার পর তাদের টাকা চুরি হয়েছে। একজনের বয়স ১৭, আরেকজনের ২১।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন তাদের বাবা শফিউল্লাহ, 01716600781)

৫২. নাম: তাওহীদ আহমদ
হারানোর কারণ: মাদরাসার পড়ার চাপের সঙ্গে তাল মেলাতে সমস্যা হয়। বড় ভাইয়ের মতে, জিন-ভূতে ধরছিল এবং হারিয়ে যায়। পরে আত্মীয়ের বাসায় পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন বড় ভাই কাওছার আহমদ, 01993-243200)

৫৩. নাম: মোছা. সাদিয়া, যশোর
হারানোর কারণ: সাদিয়ার বাসার পাশে সামিয়া নামে এক তরুণী ভারত থেকে তার মামার বাসায় বেড়াতে আসে। সামিয়া ও সাদিয়ার মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। সামিয়া পাশের গ্রামের তার খালার বাড়িতে যাচ্ছেন বলে জানিয়ে সাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যান।

এদিকে সন্ধা হলেও তারা না ফেরায় এবং সামিয়ার খালার বাসায় কল করেও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে সাদিয়ার পরিবার। তাকে খোঁজাখুজি শুরু হয়, ফেসবুকে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ঐ তরুণী যেহেতু ভারতের এবং বর্ডার এলাকা কাছে হওয়ায় তাকে ভারতে পাচার করা হতে পারে এমন দুশ্চিন্তাও তৈরি হয়।

সাদিয়ার ফুফু তেমন শঙ্কার কথাই জানান। তিনি জানান, দালালরা হয়তো তার মাধ্যমে শিশু পাচারের কাজ করিয়ে নিতে পারে অর্থের বিনিময়ে। এমন সন্দেহ তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। যেটা ফেসবুক পোস্টেও দেখা যায়।

পরে রাত ১২টার দিকে পুলিশের সহযোগিতায় সাদিয়াকে পাওয়া যায়। সামিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার খালার বাসায় পাঠানো হয়। সামিয়া এখন তার খালার বাসাতে আছে।

পুলিশের একজন এএসআই জানান, এখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ইন্ডিয়া থেকে আসা মেয়েটি মামার বাসায় বেড়াতে আসে। সে পাশেই একটি বাজার ঘুরতে যায় শিশুটিকে নিয়ে। ফিরতে একটু দেরি হওয়ায় (সম্ভবত রাত ৯টা) এমন ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। কিডন্যাপ বা পাচার সংক্রান্ত কিছু নেই এখানে।

অর্থাৎ, ঘটনাটি পাচার সংক্রান্ত কিছু নয়। ফিরতে দেরি করায় নানান দুশ্চিন্তা করা হয় এবং পাচার ভাবনা সেরকমই একটি দুশ্চিন্তা। ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধান করে এটি স্রেফ ভুল বোঝাবুঝির জন্য সৃষ্টি হয়েছে বলেই মনে হয় এবং পুলিশের বক্তব্যে তা আরো নিশ্চিত হওয়া যায়।

৫৪. মো. মাসুম বিল্লাহ, মাদারীপুর
হারানোর কারণ: ঈদুল আজহায় বাড়িতে যাওয়ার পর আর মাদরাসায় ফিরতে চাচ্ছিল না। পরিবার থেকে জোর করে মাদরাসায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে গত ৮ জুলাই আরেক সহপাঠীকে নিয়ে মাদারীপুরের শিবচর থেকে বাসে উঠে গুলিস্তান নামে। এরপর সদরঘাট থেকে লঞ্চে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ চলে যায়। এরই মধ্যে হাতে থাকা টাকা শেষ হয়ে যায়। ফোন দেয় নানাকে। পরবর্তীতে মা এবং নানা গিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থেকে ৯ তারিখ নিয়ে আসেন।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মামা ইব্রাহীম খলিল, 01792522925)

৫৫.  নাম: মুহাম্মদ ইসমাইল
হারানোর কারণ মাদরাসার প্রেসার এবং দুষ্টু ছেলেদের অত্যাচারের কারণে ক্লাস চলাকালীন সে এবং তার এক বন্ধু ক্লাস থেকে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে একই এলাকায় তাদের হাঁটাহাঁটি করতে দেখতে পেয়ে একজন ফোন করে জানান। সেখান থেকেই তাদের উদ্ধার করা হয়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন চাচাতো ভাই মো. ইসমাইল, 01744960355)

৫৬. নাম: পাখি আক্তার, নবাবগঞ্জ
হারানোর কারণ: সহজ সরল, সাধাসিধা, একটু মানসিক সমস্যাও আছে। ডাক্তারের কাছে হাসপাতালে গিয়েছিল। ডাক্তার অপেক্ষা করতে বললেও তিনি উঠে চলে যান এবং ফলশ্রুতিতে হারিয়ে যান। পরে উনার ভাগিনা খুঁজে পান।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন দেবর রাভিদ মোল্লা, 01932280954)

৫৭. নাম: মোহাম্মদ ফারুখ, চট্টগ্রাম
হারানোর কারণ: মাদরাসার পড়ার চাপে পালিয়ে যায়। এর আগেও পালিয়েছিল। গত ৯ জুলাই মাদরাসা থেকে তাকে নিয়ে তার মা বের হন এবং কিছু খাবার কিনে দিতে চান। খাবার কিনে মা টাকা দিতে থাকলে ফারুক পেছন থেকে পালিয়ে যায়। পালিয়ে নানার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। একইদিন সন্ধ্যায় তার মামা তাকে খুঁজে পায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন চাচাতো ভাই আবদুল হালিম, 01602836419)

৫৮. নাম: মরিয়ম, রাজবাড়ী
হারানোর কারণ: পড়াশোনা থেকে বাঁচতে নিজের বাড়ি ছেড়ে মামার বাড়ি এসেছিল। তখন হারানো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আসার পথে একজন ব্যক্তি মরিয়মকে উনার সঙ্গে নিয়ে যান। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তি তাকে ফেরত দেন। গতকাল সন্ধ্যায় হারানোর পর আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাওয়া গিয়েছে।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মামা টুটুল, 01782935615)

৫৯. নাম: আব্দুল্লাহ মাহমুদ
হারানোর কারণ: মাদরাসা থেকে কোচিং করার জন্য গেলে হঠাৎ ও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ফিরে আসেনি। উনাদের ধারণা, জিন ধরেছিল। পরবর্তীতে ও মাজারের কাছে এক জায়গায় স্বাভাবিক হওয়ার পর কান্নাকাটি করলে একজন ব্যক্তি তার কাছ থেকে তার বাড়ির নাম্বার নিয়ে কল করে যোগাযোগ করেন। এভাবেই খুঁজে পাওয়া যায়। ১০ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে হারিয়ে যাওয়ার পর ১১ জুলাই দুপুর ৩:৩০ এর দিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন মামাতো ভাই কবির, 01866568882)

৬০. নাম: সাইমন ইসলাম
হারানোর কারণ: স্বেচ্ছায় মাদরাসা থেকে চলে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পল্লীবিদ্যুতের দুঃসম্পর্কের এক বোনের মাধ্যমে ফেরত পাওয়া গেছে। উনার কাছে কেউ একজন ছবি নিয়ে গিয়েছিল। কেন গিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। সে বিশ্রাম নিচ্ছে। কাল হারানোর পর আজ পাওয়া যায়।
(হারানোর কারণ জানিয়েছেন বাবা আজহারুল ইসলাম, 01731807848)

উপরে বর্নিত ঘটনাগুলোর বাইরে আরো অন্তত ১৫টি হারানোর ঘটনায় সঠিক কারণ না জানা কিংবা কল রিসিভ না করাসহ বিভিন্ন কারণে সেগুলো এই কেস স্টাডিতে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া সিলেটের একটি ঘটনা, যেখানে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর অপহরণকারী গ্রেফতার হয়েছেন। তবে অপহরণকারী সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারায় এবং ওপেন সোর্সের একাধিক মন্তব্যে বিষয়টিকে প্রেমঘটিত ঘটনা বলে দাবি করার ফলে প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *